Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জমি ফেরতের দাবি উঠল রঘুনাথপুরেও

বর্ধমানের ‘মিষ্টি বাংলা হাব’-এর পরে এ বার জমি ফেরতের দাবি উঠল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে। রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনকে মঙ্গলবার দেওয়া স্মারকলিপিতে এলাকার জমিদাতাদের ‘কৃষি কমিটি’ জানিয়েছে, রঘুনাথপুরের নতুনডি অঞ্চলে শিল্পতালুক গড়া হবে শুনে জমি দেওয়া হয়েছিল। বছর নয়েক পেরোলেও সেখানে কারখানা না হওয়ায় জমি ফেরত নিয়ে চাষাবাদ করতে চান জমিদাতারা।

এই জমিই দেওয়া হয়েছে জয় বালাজি গোষ্ঠীকে।—নিজস্ব চিত্র

এই জমিই দেওয়া হয়েছে জয় বালাজি গোষ্ঠীকে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:২২
Share: Save:

বর্ধমানের ‘মিষ্টি বাংলা হাব’-এর পরে এ বার জমি ফেরতের দাবি উঠল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে।

রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনকে মঙ্গলবার দেওয়া স্মারকলিপিতে এলাকার জমিদাতাদের ‘কৃষি কমিটি’ জানিয়েছে, রঘুনাথপুরের নতুনডি অঞ্চলে শিল্পতালুক গড়া হবে শুনে জমি দেওয়া হয়েছিল। বছর নয়েক পেরোলেও সেখানে কারখানা না হওয়ায় জমি ফেরত নিয়ে চাষাবাদ করতে চান জমিদাতারা। সিঙ্গুরের জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতেই তাদের এই দাবি বলেও জানিয়েছে কমিটি। স্মারকলিপি দেওয়ার আগে এ দিন মিছিল করেন কমিটির সদস্যেরা। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জমি ফেরতের দাবির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

বাম আমলে (২০০৭-২০১১) রঘুনাথপুর ১ ব্লকের দুরমুট মৌজায় শিল্পতালুকের জন্য ১,৮৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য। সেখানে সুসংহত ইস্পাত, সিমেন্ট ও ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট’ তৈরির জন্য প্রায় ১,২০০ একর জমি পায় জয় বালাজি গোষ্ঠী। কারখানা গড়ার জন্য ১০০ একর করে জমি পায় রিলায়েন্স সিমেন্ট ও ইমামি সিমেন্ট। এর মধ্যে ইমামি প্রকল্প বাতিল করে জমি ফেরত দিয়েছে। রিলায়েন্স সিমেন্টের লিয়াজোঁ অফিসার উজ্জ্বল গুরু বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরে নিয়মিত কাজ চলছে। প্রকল্পও হবে।’’

জয় বালাজির তরফে দাবি করা হয়েছে, পাঁচিল দেওয়া ও জমির উন্নতির জন্য বিভিন্ন খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে তাদের। কিন্তু পরে ইস্পাতের বাজারে মন্দার জেরে প্রকল্পের কাজ স্থগিত হয়ে যায়। তা ছাড়া, দুর্নীতির অভিযোগে ইস্পাত প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত কয়লা ব্লক বাতিল হয়ে যাওয়ায় কয়লার জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে আরও সমস্যা বাড়ে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, শুধু এই শিল্পতালুকই নয়, রঘুনাথপুরের আরও দু’টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জন্য ১,৫২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল বাম আমলে। সেখানে জমি নিয়েও প্রকল্প গড়েনি শ্যাম স্টিল এবং আধুনিক গোষ্ঠী। পরে তারা জমি
ফেরত দিয়েছে সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই এলাকায় শিল্প না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটু একটু করে ক্ষোভ বাড়ছে। রাজনৈতিক রং নির্বিশেষে তা সামনেও আসছে। কমিটির সম্পাদক বাণেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের সময়েই রঘুনাথপুরে যাবতীয় জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল। সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ পদ্ধতি যদি অবৈধ হয়, তা হলে এখানেও অবৈধ ভাবেই জমি নেওয়া হয়েছিল।’’ কমিটির সদস্যদের দাবি, ‘‘এখানে শিল্প হয়নি। কাজও জোটেনি। তাই ওই জমিতে আমরা চাষ করতে চাই।’’

তবে সিঙ্গুরের সঙ্গে রঘুনাথপুরের জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা মূলগত তফাত আছে বলে মনে করাচ্ছেন প্রশাসনের এক কর্তা। জানাচ্ছেন, রঘুনাথপুরে জমি অধিগ্রহণের সময়ে মূলত জমির দাম বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। সিঙ্গুরের মতো ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতা ছিলেন না। কৃষি কমিটি অবশ্য বলছে, অনেকেই জমি দিতে নারাজ ছিলেন। ‘জোর খাটিয়ে’ জমি নেওয়া হয়েছিল বলেই এখন ফেরত দেওয়ার দাবি উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raghunathpur land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE