Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দুর্যোগে ভাঙল মাটির বাড়ি, স্কুলের পাঁচিল

ঝড়-বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হল পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু এলাকায়। কিছু মাটির বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

জল বেড়েছে ঘাটালের শিলাবতীতে। —নিজস্ব চিত্র।

জল বেড়েছে ঘাটালের শিলাবতীতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও চন্দ্রকোনা রোড শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০১:০৩
Share: Save:

ঝড়-বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হল পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু এলাকায়। কিছু মাটির বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন মনে করছে, নতুন করে ভারী বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা কম। দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক সত্যব্রত হালদার বলেন, “ঝড়-বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে উদ্বেগের কিছু নেই। পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। ব্লক থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট এলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করা হবে।”

মূলত, গড়বেতা ১ এবং শালবনিতেই কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শালবনির সাতপাটি হাইস্কুলের সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিড-ডে মিলের রান্নাঘর। সীমানা প্রাচীর লাগোয়া কিছু গাছ ভেঙে পড়াতেই এই বিপত্তি। গড়বেতা- ১ এর কাষ্ঠগেড়্যার এক স্কুলের হস্টেলের সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙে গিয়েছে। রবিবার দফায় দফায় পশ্চিম মেদিনীপুর বৃষ্টি হয়। বিকেলের পর ঝড়ও হয়। ঝড়ের প্রভাব অবশ্য জেলার সর্বত্র পড়েনি। তবে যে সব এলাকায় পড়েছে, তারমধ্যে ওই দুই এলাকা রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়ায় বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটিও পড়ে গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, গড়বেতা-১ এ প্রায় ৯০টি মাটির বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। শালবনিতে প্রায় ৬০টি মাটির বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গড়বেতা-১ এর বিডিও বিমলকুমার শর্মা বলেন, “দুর্যোগে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতকে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, “ঝড়- বৃষ্টিতে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর বন্যাপ্রবণ জেলা বলেই পরিচিত। অবশ্য এখনও পর্যন্ত বন্যার কোনও ইঙ্গিত নেই। নদীগুলোয় জলস্তর বিপদসীমার অনেক নীচে রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জেলার সামান্য কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়েছে বলেই জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। সোমবার অবশ্য এই পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে যে সব ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যেমন, মেদিনীপুর সদর, কেশপুর, গড়বেতা-১, ২, ৩, দাসপুর-১, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-২, সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর-১, ২, দাঁতন-১, ডেবরা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর-২ প্রভৃতি ব্লককে ইতিমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখতে বলা হয়েছে। ২০১৩ সালের দুর্যোগে এই সব ব্লকের সবমিলিয়ে ৩২৩টি গ্রাম কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন প্রায় ৮৭ হাজার মানুষ। সবমিলিয়ে ১৫টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছিল। এ বার অবশ্য এমন পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছে প্রশাসন। কারণ, টানা ভারী বৃষ্টি হয়নি। সাধারণত, টানা ভারী বৃষ্টি এবং জলাধার থেকে প্রচুর পরিমাণ জল ছাড়ার ফলেই এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গত দু’দিনের মাঝারি বৃষ্টিতে যে কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল, এ দিন থেকে সেই সব এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করেছে বলেই প্রশাসন জানিয়েছে। শালবনি ব্লকের মধ্যে মূলত বিষ্ণুপুর, শালবনি এবং সাতপাটিতেই ঝড়ের প্রভাব পড়ে। ক্ষতক্ষতির পরিমাণ জানতে এ দিন গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীরা এলাকা পরিদর্শন করেন।

অন্য দিকে, ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে চন্দ্রকোনা রোডে। রবিবার সন্ধ্যায় মিনিট পনেরোর ঝড়ে চন্দ্রকোনা রোডের শতাধিক বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও নাজেহাল হন সাধারণ মানুষ। চন্দ্রকোনা রোডের বিডিও সুশোভন মণ্ডল বলেন, “আমরা পঞ্চায়েতগুলিকে বিস্তারিত তথ্য দিতে বলেছি। চন্দ্রকোনা রোড শহরেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। তবে কাজ চলছে।” একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে গোয়ালতোড়ের কিছু এলাকাতেও। গোয়ালতোড়ের বিডিও লোকনাথ সরকার বলেন, “ঝড়ে ব্লকের বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের ত্রিপল ও চাল দেওয়া হচ্ছে।”

টানা বৃষ্টির জেরে ফুলে ফেঁপে উঠেছে শিলাবতী, কংসাবতী নদী। চন্দ্রকোনার মনসাতলা চাতালের কাছে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ে রবিবার রাতে। ঘাটালের মহকুমাশাসক রাজনবীর সিংহ কপুর বলেন, “একাধিক জলাধার থেকে জল ছাড়ার খবর এসেছে। তবে এখনও নদীর জল উপচে কোনও এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Paschim Medinipur Rain storm Chandrakona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE