Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ক্ষতিপূরণ ও চাকরির আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর

কেন মরতে হল, প্রশ্ন পরিবারের

বুধবার রাতেই রাজস্থান থেকে খুনের খবর এসে পৌঁছয় কালিয়াচকের এই প্রত্যন্ত গ্রামে। বৃহস্পতিবার দিনভর চ্যানেলে চ্যানেলে দেখতে হয়েছে সেই খুনের ভয়াবহ ‘লাইভ’ দৃশ্য। যতবার দেখেছেন, শিউরে উঠেছেন গুলবাহার বিবি। সঙ্গে তিন মেয়ে জোসনারা বিবি, রেজিনা বিবি এবং হাবিবা খাতুনও।

কফিনবন্দি: আফরাজুলের দেহ পৌঁছল গ্রামে। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

কফিনবন্দি: আফরাজুলের দেহ পৌঁছল গ্রামে। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

জয়ন্ত সেন
সৈয়দপুর (মালদহ) শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

বুধবার রাতেই রাজস্থান থেকে খুনের খবর এসে পৌঁছয় কালিয়াচকের এই প্রত্যন্ত গ্রামে। বৃহস্পতিবার দিনভর চ্যানেলে চ্যানেলে দেখতে হয়েছে সেই খুনের ভয়াবহ ‘লাইভ’ দৃশ্য। যতবার দেখেছেন, শিউরে উঠেছেন গুলবাহার বিবি। সঙ্গে তিন মেয়ে জোসনারা বিবি, রেজিনা বিবি এবং হাবিবা খাতুনও। তার পরেও প্রতীক্ষা ছিল, কখন সৈয়দপুরে এসে পৌঁছবে আফরাজুল খানের দেহ। শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ কফিন পৌঁছলে তার উপর পড়ে মূর্ছা গেলেন গুলবাহার। জোরে কেঁদে উঠলেন মেয়েরা।

কান্নার শব্দ, হাহাকার ছড়িয়ে গেল গোটা গ্রামে। জলের ছিটেতে মূর্ছা ভাঙে গুলবাহারের। তিনি আর তাঁর মেয়েরা বলে উঠলেন, ‘‘দোষীর যেন ফাঁসি হয়। আর কিছু আমরা চাই না।’’

সৈয়দপুর এখনও বুঝতে পারছে না, কেন এ ভাবে মরতে হল আফরাজুলকে। এ দিন কফিন নিয়ে রাজস্থান থেকে ফেরেন আফরাজুলের ভাই রুম খান। তিনি এ দিনও বলেন, ‘‘লাভ জেহাদের কোনও ঘটনা ঘটেনি। চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে দাদাকে।’’ তিনি জানান, ভিন রাজ্য বলে একসঙ্গেই থাকতেন গ্রামের বাসিন্দারা। রুমের কথায়, ‘‘ওখানে আমি আর দাদা তো থাকতামই, আমাদের সঙ্গে থাকত দুই ভাগ্নে জাহাঙ্গির খান ও জসিম খান। থাকত দাদার মেজ মেয়ে রেজিনার বর কাজিরানু হোসেনও। দাদা অন্য কোথাও বিয়ে করলে বা কারও সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হলে আমরা ঠিকই জানতে পারতাম।’’

গুলবাহার তখন বারবার বলছেন, ‘‘কেন ওকে এ ভাবে মারল! কী হবে এখন আমাদের!’’ ঠিক একই কথা তিনি কয়েক ঘণ্টা আগে টেলিফোনে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ দিন সৈয়দপুরে এসেছিলেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ। সেই সময়ে কৌশিকের ফোনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় গুলবাহারের। প্রায় পাঁচ মিনিট।

মুখ্যমন্ত্রীকেও গুলবাহার বলেন, ‘‘ওঁকে যারা এ ভাবে মারল, তারা যেন কঠোর শাস্তি পায়।’’ তার পরেই কেঁদে ফেলেন তিনি। বলতে থাকেন, ‘‘ও ছিল একমাত্র রোজগেরে। এখন আমাদের চলবে কী করে!’’ পরে গুলবাহার জানান, মুখ্যমন্ত্রী সব শুনে তাঁদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এক মেয়ের চাকরি, তাঁর বিধবাভাতা-সহ একাধিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও পাবেন গুলবাহার। জেলাশাসক জানান, ওঁদের ছোট মেয়েটি নবম শ্রেণিতে পড়ে। তার লেখাপড়ার বিষয়টি দেখা হবে। গুলবাহার বিবি অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থাও করে দেবে সরকার। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এক লক্ষ টাকার একটি চেক গুলবাহারের হাতে তুলে দেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

দিনভরই আফরাজুলের বাড়িতে ভিড়। গ্রামের মানুষ তো বটেই, এসেছেন রাজনীতির একাধিক ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে কংগ্রেসের বিধায়ক ইশা সাহেব বলেন, ‘‘আমি রাজস্থানের রাজসমুন্দ জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দোষীর যেন উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়, সেটা নিশ্চিত করতে বলেছি।’’

রাতে রাজস্থান পুলিশ ও জেলা পুলিশের ঘেরাটোপে মৃতদেহ নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি ঢুকতেই আফরাজুলের বাড়িতে ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। বাতাসে পাক খাচ্ছে কান্নার সুর। তার সঙ্গে মাঝে মাঝে মিশে যাচ্ছে গুলবাহারদের বাড়ি থেকে ছিটকে আসা বুকফাটা হাহাকার।

দেহ করব দিতে আরও ঘণ্টাখানেক লেগে যায়। অনুজ্জ্বল আলোয় সৈয়দপুর তখন শোকস্তব্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE