Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নতুন পিস্তল স্ত্রীকেই রাখতে দিয়েছিল রামুয়া

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে খুন হয় রামুয়া। যদিও রামুয়ার ছেলে সমীর ও তার ছোটবেলার বন্ধু শ্যামসুন্দর রাওয়ের মধ্যে খুনের পরিকল্পনা চলছিল তারও সপ্তাহ দুই আগে থেকে।

স্ত্রী কাজলকে নতুন পিস্তল ও প্যাকেট ভর্তি গুলি রাখতে দিয়েছিল রামুয়া। —ফাইল চিত্র।

স্ত্রী কাজলকে নতুন পিস্তল ও প্যাকেট ভর্তি গুলি রাখতে দিয়েছিল রামুয়া। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৭
Share: Save:

খুন হওয়ার দু’দিন আগে নতুন পিস্তল ও প্যাকেট ভর্তি গুলি কিনে এনে স্ত্রী কাজলকে রাখতে দিয়েছিল রামুয়া। আর এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছিল কাজল ও ছেলে সমীর। খুনের জন্য তারা তড়িঘড়ি ডেকে নিয়েছিল ভিন্‌ রাজ্যের তিন যুবককে। সোমবার ঘটনার পুনর্নির্মাণের পরে ধৃতদের আর এক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে খুন হয় রামুয়া। যদিও রামুয়ার ছেলে সমীর ও তার ছোটবেলার বন্ধু শ্যামসুন্দর রাওয়ের মধ্যে খুনের পরিকল্পনা চলছিল তারও সপ্তাহ দুই আগে থেকে। শ্যামের কথা মতো তৈরি ছিল বিশাল মেনন ও প্রশান্ত সিংহ। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছিল, কী অস্ত্র দিয়ে খুন করা হবে তা নিয়ে। জেরায় বিশালরা পুলিশকে জানিয়েছে, শেষমেশ রাঁচির এক দুষ্কৃতীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার জন্য। সেটি হাতে পাওয়ার কথা ছিল ১৫ জানুয়ারি। তার আগে, ১১ জানুয়ারি রামুয়া নিজেই ৭.৬২ পিস্তলটি বাড়িতে এনে রাখতে দেয় স্ত্রী কাজলকে।

কাজল পুলিশকে জানিয়েছে, ১১ তারিখ সন্ধ্যায় আচমকাই কিছু ক্ষণের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় রামুয়া। ফিরে এসে সে স্ত্রীর হাতে গজে মোড়া একটি পুঁটুলি তুলে দেয়। কাজল দেখে, তাতে রয়েছে পিস্তল ও গুলি। সে ওই পিস্তল ও গুলি নিজের হাতব্যাগে ভরে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখে। জেরায় কাজল ও সমীর পুলিশকে আরও জানিয়েছে, পিস্তল হাতে আসতেই তারা আর সময় নষ্ট করতে চায়নি। সমীর ফোন করে শ্যামকে বলে, ‘অস্ত্রের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। আর অপেক্ষা করতে হবে না। কলকাতায় চলে এস’। কিন্তু, অগ্রিম না পেয়ে আসতে রাজি হয়নি বিশালরা।

সেই ব্যবস্থা করতে ১২ জানুয়ারি দুপুরে হাওড়া গিয়ে কাজলের প্রেমিক কার্তিক যাদবের সঙ্গে দেখা করে সমীর। অগ্রিম বাবদ এক লক্ষ টাকার ব্যবস্থা হয়েছে খবর পাওয়ার পরেই ১৩ জানুয়ারি টাটানগর থেকে চলে আসে বিশাল ও প্রশান্ত। তারা হাওড়ায় টাকা পেয়ে শ্যামকে ডেকে নেয়। রাতের বিমানে বিশাখাপত্তনম থেকে কলকাতা পৌঁছয় বিবিএ পড়ুয়া ওই যুবকও।

পুলিশ সূত্রের খবর, রামুয়া জেলে থাকার সময়ে দু’বার সোদপুরের অমরাবতীতে সমীরের কাছে এসেছিল শ্যাম। ফলে সে রাস্তাঘাট চিনলেও বিশাল কিছুই চিনত না। তবে কলকাতায় বান্ধবীর বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে সব রাস্তাঘাট ও পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল প্রশান্ত। তাই বিশালকে সঙ্গে নিয়ে সে এসেছিল হাওড়ায়। সেখান থেকে অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করে যায় কলকাতা বিমানবন্দরে। শ্যাম সেখানে নামার পরে ফের আর একটি ক্যাব ভাড়া করে দিয়েছিল প্রশান্ত। সেটি ধরেই সোদপুরে এসেছিল শ্যাম ও বিশাল। তখন বান্ধবীর বাড়িতে চলে গিয়েছিল প্রশান্ত। খুনের পরে বিশালরা আর একটি অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করে হাওড়া পালিয়েছিল। সেখান থেকে সে ও শ্যাম টাটানগরে চলে যায়। খুনের পরের দিন, ১৪ জানুয়ারি সকালে দুর্গাপুর ফিরে যায় বি টেক পড়ুয়া প্রশান্ত।

পুলিশ জেনেছে, শ্যাম, বিশাল ও প্রশান্ত তিন জনই টাটানগরের বাসিন্দা। শ্যাম ছোটবেলায় বিশাখাপত্তনমে বোর্ডিং স্কুলে চলে যায়। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় সমীরের। দু’জনে হস্টেলে এক ঘরে থাকত। প্রশান্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য থাকত দুর্গাপুরে। বিশাল টাটানগরের একটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে। কিছু দিনের মধ্যেই তার নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Ramua
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE