Advertisement
০২ মে ২০২৪
madrasah

Madrasah: মাদ্রাসায় পাশ ১০০%, সেরা মালদহের সাদিয়া

এ দিন মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হল। মাধ্যমিকের মতো এই পরীক্ষাতেও পাশের হার একশো শতাংশ।

কৃতী: সহপাঠীদের সঙ্গে সাদিয়া সিদ্দিকা (মাঝখানে)। শুক্রবার মালদহের সুজাপুর নয়মৌজা সুবহানিয়া হাই মাদ্রাসায়। ছবি: স্বরূপ সাহা

কৃতী: সহপাঠীদের সঙ্গে সাদিয়া সিদ্দিকা (মাঝখানে)। শুক্রবার মালদহের সুজাপুর নয়মৌজা সুবহানিয়া হাই মাদ্রাসায়। ছবি: স্বরূপ সাহা

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ০৭:২৮
Share: Save:

সকলে বলছেন, একেবারে ‘বাপ কা বেটি’।

একত্রিশ বছর আগে মহম্মদ রুহুল ইসলাম মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় নবম হয়েছিলেন। এ বারে সেই বোর্ডের একই পরীক্ষায় সব থেকে বেশি নম্বর পেল তাঁর মেয়ে সাদিয়া সিদ্দিকা। ৮০০-এর মধ্যে ৭৯৭। সেই একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মালদহের সুজাপুর নয়মৌজা সুবহানিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সে। অন্য সময়ে বিরাট কোহালি থেকে ছোটা ভীম নিয়ে মজে থাকা কিশোরী মেয়েটি, খুনসুটি করে তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ভাইয়ের সঙ্গে। কিন্তু পড়ার সময়ে তার মতো মনোযোগী খুব কমই আছে, বলছেন তারই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাই বরাবরই ভাল ফল করেছে সাদিয়া।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আদিল হোসেন বলেন, ‘‘সাদিয়া বরাবরই ক্লাসে প্রথম হত। আমার বিশ্বাস, পরীক্ষা হলে রাজ্যের মেধা তালিকায় এমনই জায়গায় সাদিয়া থাকত।’’ বাবা সুজাপুরের বালুপুর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অভাব অনটনে তিনি স্নাতক হওয়ার পরে পড়াশোনা ছেড়ে কাজের খোঁজে নেমেছিলেন। এত দিন বাবার কাছেই সব বিষয় পড়ত সাদিয়া, গৃহশিক্ষক ছিলেন শুধু ইংরেজিতে। মাদ্রাসার সামনে বিরাট চত্বরে দাঁড়িয়ে এ দিন বাবার মুখে হাসি ধরে না। সমানে ফোন আসছে মোবাইলে। তার মধ্যেই এক ফাঁকে জানিয়ে গেলেন, মেয়ে যত দূর পড়তে চায়, তিনি পড়াবেন।

মেয়ে কী হতে চায়? সাদিয়া বলে, সে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হতে চায়। আর হ্যাঁ, সাদিয়া মনে করে, ছাত্রীর পরিচয় সে নিজে, ধর্ম দিয়ে তার কোনও পরিচয় হয় না।

এ দিন মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হল। মাধ্যমিকের মতো এই পরীক্ষাতেও পাশের হার একশো শতাংশ। শুক্রবার একই সঙ্গে এই বছরের আলিম এবং ফাজিলেরও ফল প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘এ বার কোনও মেধা তালিকা প্রকাশ হয়নি।’’

করোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদও হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষা বাতিল করে। এ দিন পর্ষদ সভাপতি জানান, হাই মাদ্রাসায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫৬৫০৭। পাশ করেছে সবাই। আলিমে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১২১৮৬। সবাই পাশ করেছে। ফাজিলে পরীক্ষার্থী ছিল ৫৫৭৪। সেখানেও পাশের হার একশো শতাংশ। তিনটি মিলিয়ে মেয়ে পরীক্ষার্থী ৪৯৪৯৪ জন। আবু তাহের বলেন, ‘‘সরকারের কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে নানা প্রকল্প মেয়েদের মাদ্রাসায় পড়তে উৎসাহিত করেছে।’’

এ বারের হাই মাদ্রাসায় অমুসলিম পরীক্ষার্থী ছিল ৩২১৫। প্রতি বছরই এই সংখ্যাটা বাড়ছে। প্রতীচী ইন্ডিয়া ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘মাদ্রাসায় অমুসলিম পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজ্যের একটি মৌলিক বিশেষত্ব। পিছিয়ে পড়া এলাকার বহু ছেলেমেয়ে মাদ্রাসার উপর নির্ভরশীল।’’ সাবিরের মতে, মাদ্রাসায় কিন্তু আর পাঁচটা স্কুলের মতোই পড়াশোনা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Examination madrasah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE