Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

রেশন-দুর্নীতিতে পাল্টা, মমতার মুখে ‘ব্যক্তিগত বিষয়’

মমতার অভিযোগ, ‘‘৩৪ বছর ধরে যারা মানুষকে চাল দেয়নি, তারাই আজ পুলিশের মুখে আটা ছুড়ছে!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এক পয়সাও নিইনি। তবু আমরা চোর!’’ মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা কটাক্ষ করেছে সিপিএমও।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২০
Share: Save:

রাজ্যে ক্ষমতায় এসে রেশন ব্যবস্থা ‘পরিষ্কার’ করেছেন বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই সাম্প্রতিক রেশন দুর্নীতির অভিযোগকে ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ (ইন্ডিভিজুয়াল প্রবলেম) বলেও চিহ্নিত করেছেন তিনি। মমতার অভিযোগ, ‘‘৩৪ বছর ধরে যারা মানুষকে চাল দেয়নি, তারাই আজ পুলিশের মুখে আটা ছুড়ছে!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এক পয়সাও নিইনি। তবু আমরা চোর!’’ মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা কটাক্ষ করেছে সিপিএমও।

প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই রেশন-দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুরে সোমবার ‘বিজয়া সম্মিলনী’ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পুরনো অবস্থানই ফের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘জীবনে কারও পয়সায় এক কাপ চা খাইনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেড় লক্ষ টাকা বেতন পাই, এক পয়সাও নিইনি। প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে পেনশন পেতে পারি। এক পয়সাও নিইনি। তবু আমরা চোর!’’ সেই সূত্রে তিনি বলেন, ‘‘সে সব নিলেও (বেতন, পেনশন) তো ৪০- ৫০ কোটি টাকা হয়ে যেত!’’

সরাসরি রেশন ব্যবস্থার প্রসঙ্গে ফের বামেদেরই আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটা ইন্ডিভিজুয়াল প্রবলেম নিয়ে..। সব থেকে বড় চোর যারা, তারা মুখে গোবর লেপে বসে আছে! চাষিদের থেকে ৩৪ বছরে চাল কেনা হত না। এক কোটি কার্ডে চাল তোলা হতো। সেগুলি বাদ দিতে আমাদের ৭-৮ বছর লেগে গিয়েছে। ওই কার্ডে ভোট দেওয়া হত।’’ রেশন ব্যবস্থা ঘিরে যে অভিযোগ উঠেছে, তার দায় নিয়ে দুই দলীয় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, কিছু ঘটে থাকলে তার দায়িত্ব দল বা সরকারের নয়, ‘ব্যক্তিগত’। সেই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যকেও ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করা হচ্ছে।

দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে মমতা আরও বলেন, ‘‘কোন লোকটা চাল পায় না, বলুন তো।’’ করোনার সময়ে রাজ্য সরকারের খাদ্য সরবরাহের কথা উল্লেখ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলে আমরা চাল দিচ্ছি। সিঙ্গুরের আন্দোলন তো কবে শেষ হয়ে গিয়েছে তবু আমরা চাল দিচ্ছি।’’

মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের জবাবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী পাল্টা বলেছেন, ‘‘এত দিন তো হল। সিপিএমের এক জন চোর মন্ত্রী বা নেতার নাম বলুন না। নিজে আগে বলেছিলেন, মদন চোর? টুম্পাই (প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু) চোর? কুণাল চোর? মুকুল চোর? সবাই জেলে গিয়েছিলেন! এখনও ‘আমরা চোর’ বলে একই ভাবে তালিকা দিচ্ছেন!’’ মুখ্যমন্ত্রীর ‘পয়সা নিই না’ দাবি প্রসঙ্গে সুজনের মন্তব্য, ‘‘উনি কারও কাছ থেকে টাকা নেবেন কেন? টাকা তো দিয়ে যায়! ওঁর এক আঁচড়ে ১০ লক্ষ। এক ছবিতে এক কোটি ৮৬ লক্ষ ওঠে। সারদা হোক বা অন্য, যারা লুটেরা বাহিনী, তারা টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কয়লা, বালি, পাথর, গরু পাচার সবেতেই আপনার (মুখ্যমন্ত্রী) বাহিনী যুক্ত। তার ৭৫ ভাগ এসে যায়। টাকা নেওয়ার আর দরকার পড়বে কেন!’’ জ্যোতিপ্রিয়কে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর দাবিতে এ দিনই সন্ধ্যায় হাবড়ার নগরউখরা মোড় থেকে অশোকনগরের শেরপুর মোড় পর্যন্ত মিছিল করেছে সিপিএম। নগরউখরা মোড় ও শেরপুরে দু’টি সভাও হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সুজনেরা।

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকেই ফের নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ডেবরায় দলের বিজয়া সম্মিলনীর সভায় তাঁর দাবি, ‘‘সব চেয়ে বড় চোর পিসিমণি। শিক্ষা জেলে গিয়েছে, খাদ্য সবে গেল। এ বার স্বাস্থ্য যাবে। শঙ্খ নিয়ে মা-বোনেরা অপেক্ষা করছেন। স্বাস্থ্য যে দিন জেলে যাবে, সে দিন অকাল দীপাবলি হবে!’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘গরু পাচারের টাকা এখনও ভাইপোর কাছে যাচ্ছে। গরুগুলোকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে ঝাড়গ্রাম থেকে কোলাঘাট, উলুবেড়িয়া হয়ে নদী পথে ভাইপোর নির্বাচনী কেন্দ্র দক্ষিণ-চব্বিশ পরগনা হয়ে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে।’’

বিজেপি-সহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ফের লড়াইয়ের ডাক দিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মমতা আবার এ দিন বলেছেন, ‘‘যা-ই আসুক, আপনারা সঙ্গে আছেন তো? আমাকে যারা আজ গাল দিচ্ছে, মারা গেলে তারাই আগে আসবে মালা দিতে! কাউকে ঢুকতে দেবেন না! জীবনে কারও দয়া চাই না!’’ একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনায় রাজ্যের প্রাপ্য নিয়ে এ দিনও কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর নাম না করে তাঁর খোঁচা, ‘‘আমার নামে স্টেডিয়ামও চাই না, রেলও চাই না। মা-মাটি-মানুষের নামে প্রকল্প করিনি। অনেকে বলেছিলেন, কিন্তু আমার মা-বাবার নামেও কিছু করিনি।’’

পাশাপাশি, এ দিন বিজেপির পাঁচ সাংসদের সম্পত্তির বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি করেছে তৃণমূল। দলের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও পার্থ ভৌমিকের দাবি, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই ইডি, সিবিআই তদন্ত চলছে। বিজেপির কারও অভিযোগের তদন্ত হয় না। যার জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘মন্ত্রী জেলে, সম্পত্তি নিয়ে কথা হচ্ছে। সেই এফআইআর’টা তো সৌমিত্র খাঁ, শিশির অধিকারী কিংবা হেমন্ত বিশ্বশর্মা করেননি। সেটা করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। তার ভিত্তিতে ইডি তদন্ত করছে। আর ওঁরা যাঁদের কথা বলছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সম্পত্তির হিসেব তো আয়কর দফতরে রয়েছে। তবে শুধু গৃহ-শিক্ষকতা করে কী ভাবে তিন কোটি টাকার সম্পত্তি করা যায়, সেই উত্তর আগে তৃণমূল দিক!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE