Advertisement
E-Paper

‘অত্যন্ত লোভী রত্নাদি’, মুখ খুলেই বিস্ফোরক বৈশাখী

লম্বা হয়েই চলেছে বিতর্ক। শোভনের সঙ্গে ঠিক কী সম্পর্ক বৈশাখীর? শোভন-রত্নার মধ্যে অশান্তির কারণ কি তিনিই? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বৈশাখীর কারণেই রেগে গিয়েছেন বরাবরের প্রিয় কাননের উপরে? গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে হাওয়ায়।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ১৮:০১
শোভন-রত্নার মধ্যে অশান্তির জন্য তিনি দায়ী নন, দায়ী রত্নার লোভ। বলছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

শোভন-রত্নার মধ্যে অশান্তির জন্য তিনি দায়ী নন, দায়ী রত্নার লোভ। বলছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

মুখ খুলেই বিস্ফোরক বৈশাখী। মেয়র-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন মেয়র ঘনিষ্ঠ কলেজ শিক্ষিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘অশান্তির কারণ আমি নই। কারণটা রত্নাদি’র অপরিসীম টাকার লোভ।’’ বললেন বৈশাখী। আর শোভন-বৈশাখী সমীকরণ নিয়ে যে গুঞ্জন? সে প্রসঙ্গে কী বলবেন? বৈশাখীর মন্তব্য, ‘‘ওটা আমাদের সমাজের অপ্রাপ্তমনস্কতার প্রতিফলন। পুরুষ আর নারীর সম্পর্ককে অন্য কোনও চোখে দেখতেই শেখেনি এই সমাজ।’’

লম্বা হয়েই চলেছে বিতর্ক। শোভনের সঙ্গে ঠিক কী সম্পর্ক বৈশাখীর? শোভন-রত্নার মধ্যে অশান্তির কারণ কি তিনিই? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বৈশাখীর কারণেই রেগে গিয়েছেন বরাবরের প্রিয় কাননের উপরে? গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে হাওয়ায়। মুখ খুললেন বৈশাখী নিজেই। বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন শোভনের স্ত্রী রত্নার বিরুদ্ধে।

শুধু রাজনীতির আঙিনায় নয়, বাঙালির ঘরে ঘরে সম্প্রতি রগরগে চর্চা শোভন-রত্না-বৈশাখী সমীকরণ নিয়ে। ফি সন্ধেয় নিয়ম করে বাঙালির ড্রয়িং রুম গমগম করে যে সব মেগা সিরিয়ালের দাপটে, গত কয়েক দিনে তারা খানিক মিইয়ে। কী বললেন রত্না? শোভনই বা কী ‘সাফাই’ দিলেন? দিনভর অজস্র চোখ টেলিভিশন চ্যানেলের দিকে।

মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় মোটের উপরে চুপচাপই ছিলেন। শোভন-রত্নার পথে হেঁটে বুধবার তিনিও মুখ খুললেন মিডিয়ায়। বললেন, ‘‘রত্না চট্টোপাধ্যায়ের কোনও প্রাসঙ্গিকতাই নেই আমার জীবনে।’’

শোভন বলেছেন, ‘‘বৈশাখী বিপদের বন্ধু।’’ রত্না বলেছেন, ‘‘বৈশাখীর নামটাও শুনতে চাই না।’’ আপনি অপ্রাসঙ্গিক বললেই কি সব কথা থেমে যাবে? কলেজ শিক্ষিকার জবাব, ‘‘কে কী বলল, তা নিয়ে খুব একটা ভাবছি না। রত্না চট্টোপাধ্যায়কে আমি শুধু শোভনদা’র স্ত্রী হিসেবেই চিনি। যত দিন শোভনদা তাঁকে স্ত্রীয়ের মর্যাদা দিয়েছেন, তত দিন রত্না চট্টোপাধ্যায় আমার জীবনে প্রাসঙ্গিক ছিলেন। এখন শোভনদা তাঁকে স্ত্রী মনে করছেন না। সুতরাং রত্না আমার কেউ নন।’’

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কলকাতার মেয়র এবং তাঁর স্ত্রীয়ের মধ্যে অশান্তির কারণ মোটেই তিনি নন। বললেন, ‘‘আমার তো একটা ছোট্ট সন্তান রয়েছে। তার নামে শপথ করে বলছি, এক মুহূর্তের জন্যও চাইনি, আমার জন্য শোভনদা আর রত্নাদির মধ্যে অশান্তি হোক।’’ তা হলে অশান্তির কারণ কী? ‘রত্নার লোভ’, বললেন বৈশাখী। ‘‘গত বছর পুজোর সময় বিষয়টা সামনে আসে। শোভনদা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কিছু প্রতারণার হদিশ পান। খুব ভেঙে পড়েছিলেন। কান্নাকাটি করছিলেন তিনি আমার কাছে এসে। বার বার বলছিলেন, আমার পরিবারের লোকজন আমাকে এ ভাবে ঠকাবে, আমি ভাবতে পারছি না।’’ বললেন বৈশাখী। সেই থেকেই স্ত্রীয়ের সঙ্গে মেয়রের দূরত্ব বেড়েছে বলে জানালেন তিনি।

আরও পড়ুন: বৈশাখী না থাকলে অস্তিত্ব বিলুপ্ত হত: মেয়র

কী ধরনের প্রতারণার শিকার হলেন শোভন? জানেন কিছু? বৈশাখী বললেন, ‘‘আমি সবটাই জানি। কিন্তু আমি ততটাই বলব, যতটা শোভনদার ডিভোর্স পিটিশনে লেখা রয়েছে। কারণ বিষয়টা বিচারাধীন।’’

বেশ সেটুকুই জেনে নেওয়া যাক। ‘‘লাস্ট ফর মানি। রত্না চট্টোপাধ্যায়ের টাকার লোভ অপরিসীম। শোভন চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন রাজনীতি করছেন, সুনামের সঙ্গে করছেন। সে সবের আড়ালে রত্না চট্টোপাধ্যায় এমন কিছু কাজ দিনের পর দিন করে গিয়েছেন, যা সাংঘাতিক। যদি সে সব কখনও আলোয় আসে, তা হলে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি শেষ হয়ে যাবে। এগুলো জানার পরে আর মেনে নিতে পারেননি শোভনদা।’’ বললেন বৈশাখী।

শোভনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে, জানালেন বৈশাখী। ছবি: সংগৃহীত।

বছরের পর বছর রত্না অনৈতিক কাজ করলেন, শোভন কিছুই জানতে পারলেন না? আচমকা গত বছর জানলেন? ‘‘এই প্রশ্নটা আমিও তুলেছিলাম।’’ বললেন বৈশাখী। ‘‘আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, একই বাড়িতে থেকে, একসঙ্গে ঘর করে তাঁর স্ত্রী এত অনৈতিক কাজ করেই গেলেন, আর তিনি কিছুই জানতেন না। আমার সঙ্গে শোভনদার এ নিয়ে প্রবল বাগ-বিতণ্ডা হয়েছে, খুব অশান্তি হয়েছে। কিন্তু পরে আমি বুঝেছি, সত্যিই উনি জানতেন না।’’

কী করে বুঝলেন, উনি কিছুই জানতেন না? ‘‘শোভনদার ঘনিষ্ঠ যাঁরা, সব সময় সঙ্গে থাকেন যাঁরা, যেমন ধরুন ওঁর ড্রাইভার, তাঁদের থেকেও জেনেছি, স্ত্রী এবং পরিজনরা কী ভাবে দিনের পর দিন ঠকিয়েছেন শোভনদাকে।’’

সম্প্রতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা জেড প্লাস থেকে জেড ক্যাটিগরিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরে তার পরে গুঞ্জন উঠেছিল, শোভনকে আর একেবারেই পছন্দ করছেন না দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভনকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলেও শোনা যাচ্ছিল। শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে গুঞ্জনই নাকি দলনেত্রীর বিরক্তির অন্যতম কারণ। এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল।

আরও পড়ুন: বৈশাখীর ‘পুনর্বাসন’ চান মেয়র

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সে প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা বলেন শোভনদা। ফোন নাম্বারটাও ‘মা’ বলে সেভ করা। জীবনের প্রতি মাঝেমধ্যে বিরূপ হয়ে যেতেন, অসুস্থ হয়ে পড়তেন, চিকিৎসা করাতে চাইতেন না। তখন আমরা ‘মা’-এর কথা মনে করাতাম। বলতাম— এত ভালবাসেন উনি কাননকে। কাননের কিছু হলে উনি সে ধাক্কা সহ্য করতে পারবেন তো? এই কথা শুনে চিকিৎসায় রাজি হয়ে যেতেন।’’ বৈশাখীর প্রশ্ন, ‘‘কেউ এটা ভাবতে পারেন কী ভাবে যে, আমার জন্য শোভনদা’র সঙ্গে তাঁর মায়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে?’’

কিন্তু আপনার সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে তো বিস্তর তোলপাড়। গোটা রাজ্যেই তো এখন চর্চার বিষয় এই ‘সম্পর্ক’। ‘‘আমি তো সম্পর্কের কথা অস্বীকার করিনি।’’ বললেন বৈশাখী। ‘‘কিন্তু সম্পর্কটা কী রকম, সেটা তো বুঝতে হবে। শোভনদার সঙ্গে আমার অত্যন্ত ভাল বন্ধুত্ব রয়েছে। শোভনদা আমার অত্যন্ত কাছের জন। সেই সম্পর্ক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু সেই সম্পর্ক এই কারণে নয় যে আমি মেয়ে আর শোভনদা ছেলে। শোভন না হয়ে উনি শোভনা হলেও এই সম্পর্কই আমাদের থাকত, মেয়র না হয়ে উনি সাধারণ নাগরিক হলেও এই সম্পর্কই আমাদের থাকত।’’ ব্যাখ্যা শিক্ষিকার।

কিন্তু জলঘোলা তো কম হল না। শোভন-রত্না বিবাদ প্রকাশ্যে এসে পড়ল, ডিভোর্সের মামলা হল, থানা-পুলিশ হল, প্রকাশে স্বামী-স্ত্রী মুখ খুললেন পরস্পরের বিরুদ্ধে, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল, শোভনবাবুর নিরাপত্তা কমে গেল, শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উপরে বিরক্ত, পরে মিটমাট হয়েছে বলে জানা গেল— রাজ্য জুড়ে এই বিপুল তোলপাড়কে তো অস্বীকার করা যায় না।

বৈশাখীর সাবলীল জবাব, ‘‘এই গোটা পর্বটা আমার কাছে একটা অপ্রাপ্তমনস্ক সমাজের প্রতিফলন। সম্পর্ক কত রকমের হয়, তার কত রকম রং হয়, নির্যাস হয়— আমাদের সমাজ সেটা এখনও ঠিক মতো বোঝে না।’’

পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবন কি কোনও ভাবে প্রভাবিত হল এই বিস্তর বিতর্কে? ‘‘একেবারেই না।’’ বললেন বৈশাখী। ‘‘আমার পরিবার যথেষ্ট আলোকপ্রাপ্ত। আমার পরিবারের প্রত্যেক সদস্য জানেন, আমি কেমন। তাঁরা সবাই আমাকে চেনেন। তাই পরিবারে কোনও সমস্যা নেই।’’

Sovan Chatterjee Ratna Chatterjee Baishakhi Banerjee Mayor Of Kolkata শোভন চট্টোপাধ্যায় রত্না চট্টোপাধ্যায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy