Advertisement
০২ মে ২০২৪
Omicron

Omicron in West Bengal: বর্ষশেষের বিধিভঙ্গে ওমিক্রনের আশঙ্কা

বড়দিনে লাগামছাড়া ভিড় সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চে

বড়দিনে লাগামছাড়া ভিড় সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চে ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩২
Share: Save:

দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত অতিমারি বিধির তোয়াক্কা করেনি আমজনতার বড় একটি অংশ। গণ-আচরণের সেই ছিদ্রপথে করোনা ফের দাপট দেখানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসক ও অতিমারি বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ। আবার সম্প্রতি কলকাতার পুরভোট থেকে বড়দিনেও তুঙ্গে উঠেছিল জন-মাতন। কোভিড বিধি উপেক্ষা করে বর্ষশেষের মহানগর কি খাল কেটে ওমিক্রন-কুমিরকে ডেকে আনতে চাইছে?

ডেল্টা ভেরিয়েন্টের থেকেও পাঁচ গুণ বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা ধরে করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন। বার বার এটা জানানো সত্ত্বেও বড়দিনে এবং রবি-সোমবারের শহরে মাস্ক খুলে ভিড়ে গা ভাসানো জনতার উচ্ছ্বাস দেখে এই প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকেরা। অতিমারির দু’টি পর্বের ভয়াবহতা এক শ্রেণির মানুষের স্মৃতি থেকে লোপ পেয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিস্মিত চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘মানুষের স্মৃতি যে এত দুর্বল, সেটা জানা ছিল না!’’

ওমিক্রনে আক্রান্ত সন্দেহে যাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চাইছেন। ওই ধরনের রোগীদের নিভৃতবাস ও চিকিৎসার পরিকাঠামো কতটা তৈরি আছে, সেই বিষয়ে এ দিন শহরের আটটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য দফতরের সচিব সঞ্জয় বনশল ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। বৈঠকে জানানো হয়েছে, ওমিক্রন সন্দেহভাজন এবং ওমিক্রন পজ়িটিভদের চিকিৎসার নোডাল কেন্দ্র করা হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে। এর পাশাপাশি শহরের কিছু বেসরকারি হাসপাতালে নিভৃতবাস ও চিকিৎসার সুযোগ মিলবে। জিনোম সিকোয়েন্সের রিপোর্ট নেগেটিভ এলে বিচ্ছিন্নবাস থেকে মুক্তি মিলবে। ওমিক্রন পজ়িটিভদের ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর দু’বার পরীক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই ছাড়া হবে।

স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, বৈঠকে স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, ওমিক্রন সংক্রমণ নিশ্চিত হলে সেই রোগীদের অন্যান্য করোনা রোগীর থেকে আলাদা রাখতে হবে। সেই জন্য হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে সাধারণ কোভিড-আক্রান্ত, ওমিক্রন সন্দেহভাজন, ওমিক্রনে আক্রান্ত— এই তিন ভাগে বিভক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওমিক্রন সন্দেহে যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হবেন, তাঁদের লালারসের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এসটিএম)-এ পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকেই।

এ দিন শহরের বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিকেও জানানো হয়েছে, সেখানে আটিপিসিআর পরীক্ষায় পজ়িটিভ রিপোর্টে সিটি ভ্যালু-৩০ নীচে থাকলে তা এসটিএমে পাঠাতে হবে। যিনি পরীক্ষা করাতে এসেছেন, তাঁর প্রতিষেধকের ডোজ়, শেষ ১৪ দিনের মধ্যে বিদেশ-যোগ রয়েছে কি না এবং কেন পরীক্ষা করাচ্ছেন, তা জেনে নিতে হবে বিস্তারিত ভাবে।

বছর শেষে শহরের রাস্তায় মানুষের ঢল ওমিক্রনকে বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘সর্দি-কাশি বা অল্প জ্বর হলে সেটিকে মানুষ সাধারণ বলেই ধরে নিচ্ছেন। করোনা পরীক্ষা করাতে রাজি হচ্ছেন না। মনে রাখতে হবে, মৃদু উপসর্গই দেখা যাচ্ছে ওমিক্রনে। তাই বেশ কয়েক মাস আগে যাঁরা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন, তাঁদেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখন পড়তির দিকে। শীতের মরসুমে বয়স্ক বা শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হলে তা ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’

ওমিক্রন গোপনে প্রভাব বিস্তার করছে কি না, তা জানতে কয়েক দিন আগেই স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ দিয়েছিল, কলকাতা পুর এলাকায় যাঁদের করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসবে, সেই সব রোগীর সিটি ভ্যালু (সংক্রমণের হার) ৩০-র নীচে থাকলেই লালারসের নমুনা জিনোমের জন্য পাঠাতে হবে। এ দিন স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, শুধু কলকাতা নয়, সল্টলেক, রাজারহাট-নিউ টাউনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হবে।

এই মহূর্তে রাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত পাঁচ। শহরের চারটি বেসরকারি হাসপাতালে চার জন ভর্তি। কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া-চিকিৎসক রয়েছেন আইডি-তে। প্রত্যেকেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। ঢাকুরিয়া আমরিতে ভর্তি ১৯ বছরের ওমিক্রন আক্রান্তের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ২৬ ডিসেম্বর। এ দিন সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে জানান ওই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টা পরে আবার ওই তরুণের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হবে। তাতেও রিপোর্ট নেগেটিভ এলে ছুটি পাবেন তিনি। কিন্তু নিয়ম মেনে ছুটির দিন থেকে এক সপ্তাহ বাড়িতে কড়া বিচ্ছিন্নবাসে থাকতে হবে তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE