Advertisement
১২ নভেম্বর ২০২৪
Reclaim the Night

‘রাত দখল’ থেকে ‘রাতের মিটিং’! মেয়েদের ভয়হীন দিনের জন্য শহর ছাড়িয়ে এ বার গ্রামের দিকেও পা

শুরু হয়েছে কলকাতায়। তবে প্রত্যন্ত গ্রামেও ‘রাতের মিটিং’-এর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অ্যাকাডেমির সামনে এবং শ্যামবাজারে মেয়েদের ‘মিটিং’ হয়েছে। সংগঠকদের দাবি, সাড়া মিলছে ভাল।

শ্যামবাজার মোড়ের কাছে ‘রাতের মিটিং’। ৩ অক্টোবর।

শ্যামবাজার মোড়ের কাছে ‘রাতের মিটিং’। ৩ অক্টোবর। ছবি: সংগঠকদের সৌজন্যে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৫৭
Share: Save:

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে গত ১৪ অগস্ট ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভূতপূর্ব ছবি তৈরি করেছিল বাংলায়। কলকাতা তো বটেই, জেলায় জেলায় সেই কর্মসূচি অচেনা অদেখা এক ঢেউ তুলে দিয়েছিল। আরজি কর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলন এখনও চলছে, জুনিয়র ডাক্তরেরা ‘আমরণ অনশন’ চালাচ্ছেন কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে। এর মধ্যেই রাত দখলের সংগঠকেরা নতুন এক কর্মকাণ্ড শুরু করে দিলেন। নাম ‘রাতের মিটিং’।

কেন ‘রাতের মিটিং’? নতুন নামে একটি ভিন্ন কর্মসূচির কথা কেন ভাবছেন ‘রাত দখল, অধিকার দখল’ মঞ্চের সংগঠকেরা? উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রিয়স্মিতা (পদবি ব্যবহার করেন না) জানাচ্ছেন, রাত দখলের কর্মসূচি মূলত প্রতিবাদের কর্মসূচি, ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানানোর কর্মসূচি, ক্ষোভপ্রকাশের কর্মসূচি ছিল। সেটা ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সমস্যার আরও গভীরে যেতে হলে এক তরফা বক্তৃতা বা স্লোগানের বাইরে নিবিড় আলাপ-আলোচনা, পারস্পরিক আদানপ্রদান জরুরি। প্রিয়স্মিতার কথায়, ‘‘আমরা একটা মন্থন চাইছি। মেয়েরা মেয়েদের কথা খুলে বলবেন। নানা মেয়ের নানা সমস্যার কথায় আমরা পরস্পরকে আরও ভাল ভাবে বুঝতে পারব। এর মধ্যে দিয়ে নতুন দাবিও উঠে আসতে পারে। এই কাজটা বড় আকারের জমায়েতে বা সমাবেশে নয়, ছোট আকারের সভায় বা মিটিংয়েই সম্ভব। এই ভাবনা থেকেই আমাদের রাতের মিটিং।’’

ছবি: সংগঠকদের সৌজন্যে।

কর্মসূচি আপাতত কলকাতায় শুরু হলেও, জেলায়, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে সংগঠকদের। ইতিমধ্যে অ্যাকাডেমির সামনে এবং শ্যামবাজার চত্বরে মেয়েদের নিয়ে ‘রাতের মিটিং’ করেছেন তাঁরা। দু’জায়গাতেই ভাল সাড়া পেয়েছেন বলেও দাবি তাঁদের। শ্যামবাজারে মিটিং হয়েছিল গত ৩ অক্টোবর। রাত ৯টা থেকে ১২টা। অ্যাকাডেমির সামনে মিটিং হয় ১ অক্টোবর রাত ২টো থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত।

টালা পোস্ট অফিসের কাছে থাকেন চৈতালি বণিক। সম্প্রতি রাতের মিটিং নিয়ে প্রচারের সময়ই তাঁর পরিচয় হয় সংগঠকদের সঙ্গে। কয়েক দিনের মধ্যে নিজে হয়ে উঠেছেন সংগঠকদেরই এক জন। শ্যামবাজারের মিটিংয়ে ছিলেন। চৈতালির বক্তব্য, ‘‘রাতের মিটিংয়ে মেয়েরা তাঁদের নিজেদের কথা উজাড় করে বলেছেন। তবে আরও ছোট ছোট এলাকায় এই ধরনের মিটিং করতে পারলে মহিলাদের সাহস বাড়বে। কারণ রাত যতটা পুরুষের ততটাই মেয়েদের।’’

‘রাতের মিটিং’-এর উদ্দেশ্য কী? প্রিয়স্মিতার কথা, “ভারতে ধর্ষণের পরিসংখ্যান দেখলে এটা স্পষ্ট যে শুধু রাতেই অপরাধ হয় না। কিন্তু তা-ও রাতে একটা ভয় কাজ করে। এটা খানিকটা নিজেদের চাপিয়ে দেওয়া। মেয়েরা যাতে ভয়হীন রাত পেতে পারে, সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি।” কী কী পরিকল্পনা তাঁদের? সংগঠকদের বক্তব্য, প্রতিটি এলাকায় ক্লাব রয়েছে। অধিকাংশ ক্লাবে শাসকদলের আধিপত্য রয়েছে। মেয়েরা পাল্টা কোনও ক্লাব তৈরি করতে পারেন কি না অথবা ছেলেদের পাল্টা মেয়েদের কোনও চায়ের দোকান তৈরি করা যায় কি না, সে সব ভাবনা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছেন তাঁরা। সংগঠকেরা চাইছেন, প্রান্তিক লিঙ্গ বা যৌনতার মানুষেরাও এই ধরনের মিটিং-এ আসুন, নিজেদের নিপীড়নের অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলাখুলি বলুন।

এলাকায় এলাকায় ‘রাতের মিটিং’ করার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি থেকে স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্র ধরেও তাঁরা অগ্রসর হতে চাইছেন। প্রিয়স্মিতা বললেন, “থ্রেট কালচারের সঙ্গে রেপ কালচার সম্পর্কযুক্ত। তাই দুটোর বিরুদ্ধেই লড়াই জারি রাখতে হবে।” উদ্দেশ্য একটাই, মহিলাদের পাল্টা ক্ষমতার পরিসর তৈরি করা।

যেখানে যেখানে রাত দখল হয়েছিল, সেই সব এলাকার সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৃত্ত বড় করতে চাইছেন প্রিয়স্মিতারা। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরুও হয়েছে। কথাপ্রসঙ্গে প্রিয়স্মিতা জানান, সুন্দরবনের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা মানেই রাত। সেই বাস্তবতা মেনে নিয়েই তাঁরা সেখানে ‘রাতের মিটিং’ করার পরিকল্পনা করছেন। সূর্য ডোবার পরে হবে সেই কর্মসূচি। অর্থাৎ, যেখানে যখন ‘রাত’ নামবে, সেখানে তখন হবে ‘রাতের মিটিং’। ঝাড়গ্রামের মতো জায়গাতেও ‘রাতের মিটিং’ করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই যেখানে যেখানে ‘রাতের মিটিং’ হয়েছে, তাতে যোগ দিতে আসা মহিলাদের দেওয়া হয়েছে ২৫ দফা প্রশ্ন সম্বলিত ফর্ম। তাতে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। কোন এলাকায় রাতে হাঁটতে ভয় হয়, কেন সেই ভয়, সে সব কারণ জানাচ্ছেন মহিলারা। সংগঠকদের তরফে বলা হয়েছে, শ্যামবাজারের ‘রাতের মিটিং’-এ যে মহিলারা লাগোয়া এলাকার বস্তি থেকে এসেছিলেন তাঁরা জানিয়েছেন, যেখানে যেখানে জুয়া-সাট্টার ঠেক চলে, সেখান দিয়ে রাতে চলাফেরা করতে তাঁদের আতঙ্ক হয়।

সংগঠকদের ভাষ্যে কোথাও মহিলাদের সুরক্ষার কথা নেই। রয়েছে মর্যাদা আর অধিকারের কথা। কারণ তাঁদের মতে, সুরক্ষা বললেই তাঁদের মনে হচ্ছে কেউ কাউকে দিচ্ছে। আপাতত তাঁরা ছিনিয়ে আনার লড়াই জারি রাখতে চান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE