Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ুর মর্জি বুঝতে আঞ্চলিক গবেষণা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলছেন, ‘‘শুধু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাতেও ধারাবাহিক উত্থান নজরে আসছে।’’

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:২৩
Share: Save:

রাজস্থানের মরু এলাকায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। আবার বর্ষার নির্ঘণ্টে বদল আসছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। ভারতের মতো বিশাল দেশে অঞ্চল-ভেদে প্রকৃতির এই তুঘলকিপনার খেই পাওয়া যাবে কী ভাবে?

এই প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে জলবায়ু বদলের গবেষণা। জলবায়ু বদল নিয়ে আলোচনা চলছে বিশ্ব জুড়ে। কিন্তু ভারতে তার ছবিটা ঠিক কেমন, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পরিবেশবিদ ও আবহবিজ্ঞানীদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, রাজস্থানের মরু এলাকার জলবায়ু এক রকম, আবার গাঙ্গেয় বঙ্গের জলবায়ুর ধরন অন্য। ফলে এ দেশে জলবায়ুতে বদল ঘটলে তাতে আঞ্চলিক তারতম্য থাকবেই। তাই সামগ্রিক পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চল-ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। আজ, শুক্রবার বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। তার প্রাক্কালে অনেক আবহবিজ্ঞানীরই অভিমত, এ দেশে জলবায়ু বদলের হালহকিকত বুঝতে গেলে গোটা দেশের পাশাপাশি ছোট ছোট এলাকা ধরে সমীক্ষা চালানো দরকার। কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকও এটা মানছে। তাদের সচিব মাধবন রাজীবন জানান, আঞ্চলিক জলবায়ু সমীক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে।

আঞ্চলিক ক্ষেত্রে যে বদল আসছে, কেন্দ্রীয় মৌসম বিভাগের নানা তথ্যে তার ইঙ্গিত রয়েছে। এক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, কয়েক বছর ধরে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে বাড়তি বর্ষণ এবং গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার নির্ঘণ্ট বদলের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, শীতের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকছে না। উত্তর ও পূর্ব ভারতে গ্রীষ্মের দাপট বাড়ছে। এ বছরেও স্বাভাবিকের থেকে বেশি গরমের আশঙ্কা আছে বলে জানাচ্ছে মৌসম ভবন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলছেন, ‘‘শুধু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাতেও ধারাবাহিক উত্থান নজরে আসছে।’’

পরিবেশবিদদের একাংশের মতে, আঞ্চলিক স্তরে সমীক্ষা না-চালালে জলবায়ু বদলের বিপদ ঠেকানোর ঠিকঠাক রাস্তাটাও বার করা যাবে না। কারণ, সুন্দরবনে জলবায়ু বদলের বিপদ ঠেকাতে যে-ধরনের পদক্ষেপ জরুরি, পুরুলিয়ার ক্ষেত্রে কাজ হবে না। জলবায়ু বদলের ফলে বাংলা যে-ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাজস্থান বা গুজরাতে ক্ষতির ধরনটা হবে তার থেকে আলাদা। তাই সামগ্রিক জলবায়ু বদলের ছবি ধরার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্তরে বদলটাও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, ‘‘বিশেষ করে কৃষি অর্থনীতি আবহাওয়ার উপরে নির্ভরশীল। তাই আঞ্চলিক স্তরে জলবায়ু বদল নিয়ে নিবিড় গবেষণা প্রয়োজন।’’

ফারাক কোথায়

আবহাওয়া


কোনও জায়গার দৈনিক বা মাসিক বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর চাপ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা,

দৃশ্যমানতার ধরনকেই বলা হয় আবহাওয়া। তার দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।

জলবায়ু

কোনও জায়গার অন্তত তিন দশকের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলা হয়।

এটা দীর্ঘ সময়ের গড় বলেই তার দ্রুত বদল দেখা যায় না।

সম্প্রতি দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে পরিবেশ ও আবহবিজ্ঞানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রেও নিবিড় ভাবে জলবায়ু বদলের গবেষণার দাবি উঠেছে। তবে বিরুদ্ধ স্বরের অভাব নেই। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সুবীর সরকার এই ধরনের সমীক্ষার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, ‘‘আঞ্চলিক স্তর বা আরও ছোট এলাকার উপরে সমীক্ষা করলে তো ভালই। কিন্তু এ দেশে ছোট ছোট এলাকার দীর্ঘদিনের আবহাওয়ার তথ্য আছে কি? তা না-থাকলে জলবায়ুর বদল ধরা পড়বে কী ভাবে?’’ মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের একাংশও এই যুক্তি মেনে নিচ্ছেন। এ দেশে সর্বত্র যে এখনও আবহাওয়া কেন্দ্রই তৈরি করা যায়নি, তার উল্লেখ করে মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানী বলেন, ‘‘আবহাওয়ার তথ্যে ঘাটতি থাকলে জলবায়ু গবেষণায় সত্যিই খুব সমস্যা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

weather news আবহাওয়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE