Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Yaas

কটাল আসছে, বহু বাঁধ সারাই শুরুই হয়নি

হিঙ্গলগঞ্জের বেতনী নদীর বাঁধ ভেঙে যোগেশগঞ্জ এবং গৌড়েশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় মামুদপুর।

জমা জলে বাড়ছে দূষণ। বুধবার গোসাবার দুলকি গ্রামে।

জমা জলে বাড়ছে দূষণ। বুধবার গোসাবার দুলকি গ্রামে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৫:১৫
Share: Save:

সপ্তাহ পেরোল। ইয়াস এবং জলোচ্ছ্বাসের জেরে সুন্দরবন-সহ দুই ২৪ পরগনার ভেঙে যাওয়া বহু নদীবাঁধ মেরামতির কাজ এখনও শুরু হল না। যে সব জায়গায় কাজ চলছে, সেখানে কতদিনে তা শেষ হবে সেই প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই ওই কাজ কতটা মজবুত, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে ঘরহারাদের। কারণ, সামনেই অমাবস্যার কটাল।

রায়মঙ্গলের বাঁধ ভেঙে ভেসেছিল সন্দেশখালির মণিপুর পঞ্চায়েতের আতাপুর গ্রাম। প্রায় ৫০০ মিটার ভাঙা নদীবাঁধ এখনও সম্পূর্ণ মেরামত হয়নি। বুধবারেও জোয়ারের সময় এলাকায় জল ঢোকে স্থানীয়দের দাবি। তালতলার বাসিন্দা মহাদেব পাত্র বলেন, “রাস্তায় উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে আছি। বাঁধে কাজ হচ্ছে। কিন্তু কটালের আগে কাজ শেষ না হলে রক্ষে নেই।”

হিঙ্গলগঞ্জের বেতনী নদীর বাঁধ ভেঙে যোগেশগঞ্জ এবং গৌড়েশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় মামুদপুর। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কেবলমাত্র বাঁশ দিয়ে বাঁধ বাঁধা হচ্ছে। তা ছাড়া, ইয়াসের আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাটি দেওয়া হয়েছিল বহু ভাঙা বাঁধে। কাঁচা মাটি পড়ায় অনেক বাঁধই জলের ধাক্কা সামলাতে পারেনি। এ বারও শেষ মুহূর্তে মাটি পড়লে কটালে একই পরিণতির আশঙ্কা রয়েছে।

গোসাবা ব্লকের দুলকি, সোনাগাঁ, পাখিরালয়, রাঙাবেলিয়া, কচুখালি, কুমিরমারি-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় এখনও জল ঢুকছে। বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও দুর্গতদের চিন্তা বাড়ছে। সাগর, পাথরপ্রতিমার অনেক জায়গাতেই ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ এখনও শুরুই হয়নি বলে অভিযোগ।

সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, “গোটা সুন্দরবন এলাকায় প্রায় ১৭০টি জায়গায় নদীবাঁধে ছোটবড় ভাঙন হয়েছে। আপাতত অস্থায়ী ভাবে বাঁধ মেরামত করে কটালের জল আটকানোর পরিকল্পনা হয়েছে। সেইমতো কাজ হচ্ছে। যেখানে এখনও কাজ শুরু হয়নি, সেখানেও শীঘ্রই শুরু হবে। পরে কিছু বাঁধ পাকাপাকি ভাবে তৈরি করা হবে।”

সন্দেশখালির ডাঁসা, বিদ্যাধরী এবং রায়মঙ্গল নদীর সঙ্গমে ১৬টি জায়গায় ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় হাটগাছি, বয়ারমারি, বামুনিয়া পঞ্চায়েতের বহু গ্রাম। রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আতাপুর, মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাঁধের যা অবস্থা, তাতে কটালের আগে ভাঙা অংশ জোড়া দেওয়া কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

ন্যাজাট-১ পঞ্চায়েতের বাউনিয়া এলাকায় ভাঙা অংশ দিয়ে বিদ্যাধরী নদীর জল এখনও গ্রামে ঢুকছে। মিনাখাঁয় বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও এখনও জল ঢোকা আটকানো যায়নি। মালঞ্চ বাজার, জয়গ্রাম, চৈতল, চাঁপালির বিস্তীর্ণ এলাকাতেও বাঁধ মেরামত সম্পূর্ণ হয়নি।

সাগরের ধসপাড়া সুমতিনগর-২ পঞ্চায়েতে বঙ্কিমনগর গ্রামের কাছে প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। সেই বাঁধ এখনও মেরামত হয়নি। কচুবেড়িয়া ঘাটের কাছেও মুড়িগঙ্গার ভাঙা বাঁধ দিয়ে এখনও জল ঢুকছে। নামখানার মৌসুনি পঞ্চায়েতে প্রায় ১২ কিলোমিটার নদীবাঁধ ও সমুদ্রবাঁধ একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছে। পাথরপ্রতিমার জি-প্লট পঞ্চায়েতের সত্যদাসপুর এবং গোবর্ধনপুর গ্রামে, গোপালনগর পঞ্চায়েতের টুকরো গোপালনগরে, হেড়ম্বগোপালপুর পঞ্চায়েতের কুয়েমুড়িতে এবং কাকদ্বীপের মুড়িগঙ্গা ও কালনাগিনী নদীবাঁধ মেরামতের কাজ এখনও শুরু হয়নি বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dams Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE