Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Govt

Safety West Bengal: কলকাতার নিরাপদ-মুকুট কি পাবে গোটা রাজ্যই

তৃণমূল সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। কী কী নতুন পদক্ষেপ করা হচ্ছে? রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী উন্নতি হল?

শপথ গ্রহণের পরেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে রাজনৈতিক রং না দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর নির্দেশ দেন। সক্রিয় হয় পুলিশ।

শপথ গ্রহণের পরেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে রাজনৈতিক রং না দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর নির্দেশ দেন। সক্রিয় হয় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

ছবিটা কিছু ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক। তবে কিছু ক্ষেত্রে আশার আলো এখনও তেমন ভাবে চোখে পড়েনি।

তৃতীয় দফায় তৃণমূল সরকারের পঞ্চম মাস পেরোতে চলল। রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির কি উন্নতি হল? শাসক দলের দাবি, হ্যাঁ। বিরোধীদের দাবি, না।

ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা দেখতে এ রাজ্যের বাসিন্দারা অভ্যস্ত। সেই ধারা বজায় রেখে এ বারেও ভোটের পরে কয়েক জন বিরোধী কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। অনেকে ঘরছাড়াও ছিলেন। সেই সময় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠেছিল। শপথ গ্রহণের পরেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে রাজনৈতিক রং না দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর নির্দেশ দেন। সক্রিয় হয় পুলিশ। আগের ঘটনাগুলি নিয়ে তৃণমূলের দাবি ছিল, সরকার গঠনের আগে পুলিশ-প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ছিল। তাই কিছু করার ছিল না। এর মধ্যেই অবশ্য আসরে নেমে পড়ে সিবিআই।

ভোটের ঠিক পরেই কলকাতার নারকেলডাঙা থানা এলাকায় এক বিজেপি কর্মী খুন হন। আদালত সক্রিয় হতেই কঠোর অবস্থান নেয় লালবাজার। ওসিদের কঠোর হতে নির্দেশ জারি করা হয়। কোথাও কোন বিরোধী রাজনৈতিক দলের মিছিল বা সমাবেশ থাকলে পুলিশ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুরু করে।

পুলিশি সক্রিয়তায় মোটের উপর জেলাগুলিতে রাজনৈতিক হানাহানি কমলেও ব্যতিক্রমও আছে। ফল বেরনোর পর থেকে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমানে রাজনৈতিক খুন হয়েছে ১০টি। এর মধ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুনের অভিযোগও আছে। পাঁচটি ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। পুজোর আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক অশান্তি চলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের নানা এলাকায়। ফল প্রকাশের বেশ কিছু দিন পরে খেজুরির মালদা গ্রামে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে মুখে বিষ ঢেলে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুধু বিজেপির তরফেই কোচবিহারে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে এক হাজারের বেশি মামলা রুজু করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে, এক সময়ে যে মুর্শিদাবাদ রাজনৈতিক সংঘর্ষ, খুন-জখমে উত্তপ্ত থাকত, এখন সেখানে অনেকটাই শান্তি ফিরেছে। যেটুকু গন্ডগোল, তা শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জের বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। রাজ্যের আরও কিছু জায়গাতেও রাজনৈতিক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে অশান্তির আঁচ পড়ছে।

ও দিকে, আলাদা রাজ্যের দাবিতে কেএলও প্রধান জীবন সিংহের একের পর এক ভিডিয়ো বার্তা সামনে এসেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মদত দিয়ে উত্তরবঙ্গে অশান্তি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। বিজেপি আবার এই দাবির পেছনে উত্তরবঙ্গের মানুষের কোর্টে বল ঠেলছে। এই আবহে জীবন সিংহ ফের নিজেকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে না তো? ভাবাচ্ছে পুলিশকে। আলিপুরদুয়ার জেলার বেশ কিছু এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। উত্তর দিনাজপুরে উঠে এসেছে আর এক জঙ্গি সংগঠনের নাম।

রাজনীতি সরিয়ে রাখলে অন্যান্য ক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলার ছবিটা কেমন?

কলকাতায় প্ৰতি রাতে পুলিশকর্মীরা ঠিক ভাবে ‘ডিউটি’ করছেন কি না, তা দেখার জন্য উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তারা নৈশ সফরে বের হচ্ছেন। বেপরোয়া মোটরবাইক রুখতে অভিযুক্তের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ট্র্যাফিক গার্ডকে। নীল এবং লালবাতির অপব্যবহারের ক্ষেত্রে গত কয়েক মাসে কঠোর অবস্থান নিয়েছে লালবাজার। ওই বাতি ব্যবহার করলেই হয় গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হচ্ছে অথবা বাতি খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে। ডানকুনিতে সম্প্রতি বাস থেকে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করেছে এসটিএফ।

পাহাড়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লেও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা এখনও নেই। ঝাড়গ্রামে পুলিশ-প্রশাসন এখন অনেকটাই বেশি তৎপর। মারপিট, ডাকাতি, চুরির ঘটনায় দ্রুত ধরা পড়ছে অপরাধীরা। নয়াগ্রামে ব্যাঙ্ক লুটের ছক ভেস্তে দিয়ে পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। উত্তর ২৪ পরগনায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সন্তুষ্ট মানুষ। চুরি-ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা অনেকাংশেই কমেছে। তবে, কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে মেদিনীপুরে। খুন, গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছে। গ্রামীণ হাওড়ায় ছিনতাই এবং লুটতরাজ বেড়েছে। বিশেষ করে বাগনান, রাজাপুর, উলুবেড়িয়া এবং পাঁচলায় মুম্বই রোড মোটরবাইক আরোহীদের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। গত অগস্টে আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের এক বিজেপি নেতার অসুস্থ স্ত্রী গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। মূল অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতা এখনও অধরা।

তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় দফায় মহিলাদের জন্য নিরাপদতম মেট্রো শহর হিসেবে কলকাতার মুকুটে নব্য-পালক গুঁজে দিয়েছিল ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)। যে রিপোর্ট এ বছর সামনে এসেছে। রাজ্যবাসী চান, এ বার শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যই নিরাপদ হোক। সকলের ক্ষেত্রে। (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE