নিম্নচাপ অক্ষরেখায় রক্ষা নেই, দোসর আবার ঘূর্ণাবর্ত। এই জোড়া ফলায় ভাদ্রের গোড়াতেই উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বন্যার আশঙ্কা করছে আলিপুর হাওয়া অফিস। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং ও মালদহে সতর্কতা জারি হয়েছে। হাওয়া অফিসের আশঙ্কা, ওই চার জেলাতেই বিভিন্ন নদীর জলস্তর বাড়তে পারে। তাদের ব্যাখ্যা, সোমবারের পর নেপাল, ভুটান, সিকিম এবং উত্তর বিহারে বৃষ্টি বাড়বে। সেই জলই নেমে আসবে উত্তরবঙ্গের ওই সব জেলাতে।
হাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, নিম্নচাপ অক্ষরেখার জন্য এমনিতেই মৌসুমি অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গে এবং উত্তরবঙ্গে সক্রিয়। তার সঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত যুক্ত হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গ এবং লাগোয়া রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে জল ঢুকছে। হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুল চন্দ্র দেবনাথ শনিবার বলেন, “ঘূর্ণাবর্তটি ক্রমশ উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর বিহারের দিকে সরে যাবে। তার ফলে ভুটান, নেপাল, সিকিম ও উত্তর বিহারে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। সেই জলই ঢুকে পড়বে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।” ইতিমধ্যেই রাজ্যের রায়ডাক, সঙ্কোশ ও তোর্সা নদীতে হলুদ বিপদসঙ্কেত জারি করা হয়েছে বলে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার জানান।
তবে সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ঘূর্ণাবর্তটি উত্তর দিকে সরে গেলে সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কমতে পারে বলে মনে করছে হাওয়া অফিস। বৃষ্টি কমবে মধ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ডেও। গত ক’দিনের প্রবল বৃষ্টিতে অবশ্য ইতিমধ্যেই বিহার ও ঝাড়খণ্ডের জল নেমে এসেছে দক্ষিণবঙ্গে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবার পাঞ্চেত থেকে ৪০ হাজার কিউসেক ও মাইথন থেকে ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। শনিবার পাঞ্চেত থেকে ফের ৩৫ এবং মাইথন থেকে ১৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সেচকর্তারা জানান, মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে দুর্গাপুর ব্যারেজে ৭৩ হাজার কিউসেক জল ঢুকেছে। কিন্তু বিপদসীমার উপরে ওঠেনি। তাই দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত জল ছাড়তে হয়নি। এক সেচকর্তা বলেন, দামোদরের জলস্তর বাড়লেও কোনও এলাকা প্লাবিত হয়নি।
যদিও দক্ষিণবঙ্গে গত তিন দিন ভারী বর্ষণ হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রের খবর, কোথাও কোথাও ২৫ থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল সবথেকে বেশি। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৮৮ মিলিমিটার।
অন্য দিকে গত ক’দিনে উত্তরবঙ্গে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরদুয়ারে। যার পরিমাণ ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার। পাশাপাশি জলপাইগুড়িতে ২০০ মিলিমিটার ও দার্জিলিংয়ে ১৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। লাগোয়া ভুটানেও অতিবৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে সঙ্কোশ, তোর্সা ও রায়ডাক নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লক।
তবে সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত রাজ্যের কোথাও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে প্রাকৃতিক কারণে যদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় তার মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত সেচ দফতর। অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে তৈরি ছোটো ছোটো দল ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলে গিয়েছে। জলাধারগুলিতেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। ডিভিসি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জল ছাড়লেই পশ্চিমবঙ্গের সেচ দফতরকে তা জানাতে বলা হয়েছে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy