শীতের ছুটিতে নিজেদের গাড়িতে সপরিবার পুরী যাচ্ছিলেন হাওড়ার শিবপুরের একটি পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু, ঘুরতে যাওয়ার সেই আনন্দ মুহূর্তে পরিণত হল বিষাদে। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ খড়্গপুরগামী রাস্তায় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া বাজারের কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পরিবারের কর্তা সোমনাথ দলুইয়ের (৫০)। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমনাথই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন স্ত্রী, কন্যা ও বাড়ির পোষ্য কুকুরটি। তাঁরা কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছেন।
দুর্ঘটনার পরে গাড়ির কাচ ভেঙে পুলিশ ও স্থানীয়েরা সবাইকে বার করার পরেই গাড়িটিতে আগুন ধরে যায় ও সেটি দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। আহতদের এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, গাড়ি চালাতে চালাতে সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সোমনাথ। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাতুলিয়া বাজারের কাছে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রচণ্ড গতিতে পথ বিভাজিকায় ধাক্কা মারে। তার পরে একাধিক বার রাস্তায় পাক খায়। বিকট শব্দ হলেও শীতের রাতে এলাকায় তেমন লোকজন না থাকায় দ্রুত আহতদের উদ্ধার করা যায়নি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে একে একে উদ্ধার করা হয় সোমনাথ, তাঁর স্ত্রী শ্রুতি দলুই, কন্যা অনন্যা ও তাঁদের পোষ্যটিকে। সকলকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার পরেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে গাড়িটি। ফলে, বেশ কিছু সময়ের জন্য কলকাতাগামী ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। দ্রুত পাঁশকুড়া দমকল কেন্দ্রে খবর দেওয়া হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আহত তিন জনকে নিয়ে আসা হলে সোমনাথকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর বুকে ও মাথায় গভীর চোট ছিল বলে জানা গিয়েছে। সোমনাথের স্ত্রী শ্রুতির দু’পা ভেঙে গিয়েছে। শরীরের একাধিক জায়গাতেও চোট রয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁদের একমাত্র মেয়ে অনন্যাও। শ্রুতি ও অনন্যাকে রেফার করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। তাঁদের পোষ্যটি অবশ্য সুস্থ রয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার মিতুন দে বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, গাড়ির চালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।’’ সোমনাথের ভগিনীপতি হিমাদ্রী পোড়েল বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে উনি গাড়ি চালান। কী ভাবে গাড়ি চালাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন, বুঝতে পারছি না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)