Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তারের নাছোড় টুইটে রেলরাস্তার স্বাস্থ্য সারাই

গোয়ালাগেড়িয়া গ্রাম থেকে রাধামোহনপুর স্টেশনের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। প্রতিদিন সেই স্টেশন দিয়ে আড়াই-তিন হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

সরকারি কাজে বারো নয়, বছর হয় আঠারো মাসে। এটা জানা থাকায় হাল ছাড়েননি তিনি। টানা দু’বছর সমানে টুইট করে গিয়েছেন রেল মন্ত্রকের টুইটার অ্যাকাউন্টে। অবশেষে তাঁর অধ্যবসায়ের জয় হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেবরার গোয়ালাগেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সরকারি আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সুমিত সুরের লাগাতার টুইটের ধাক্কায় এক যুগ ধরে ভাঙাচোরা পড়ে থাকা রাস্তা সারাতে শুরু করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। ফোন করে সেই খবর তাঁরা জানিয়েও দিয়েছেন ডাক্তারবাবুকে।

গোয়ালাগেড়িয়া গ্রাম থেকে রাধামোহনপুর স্টেশনের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। প্রতিদিন সেই স্টেশন দিয়ে আড়াই-তিন হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। অথচ প্রায় এক যুগ ধরে স্টেশন সংলগ্ন সেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার অবস্থা ছিল শোচনীয়। খানাখন্দে ভরা, নরকসদৃশ সেই রাস্তায় দুর্ঘটনা লেগেই ছিল। কিন্তু স্টেশন যাওয়ার রাস্তা ওই একটাই। তাই প্রতিদিন ঠোক্কর খেতে খেতে সেই রাস্তা পেরিয়েই ট্রেন ধরে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ায় বেসরকারি আয়ুর্বেদিক কলেজে যাতায়াত করে পড়াশোনা চালিয়েছেন সুমিত। তার পরে চাকরি পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেন্ট্রাল আয়ুর্বেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট’-এ। সময় গড়িয়েছে, সেই রাস্তা পাল্টায়নি, কমেনি মানুষের দুর্ভোগও।

সিনিয়ার রিসার্চ ফেলো সুমিতবাবু জানান, ২০১৭ সালের অক্টোবরে তাঁর চোখের সামনে ওই এবড়োখেবড়ো রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হন এক মহিলা আর তাঁর ছোট্ট মেয়ে। সে-দিনেই প্রথম রেলের টুইটার অ্যাকাউন্টে অভিযোগ করেন তিনি। সেই শুরু। তাঁর কথায়, ‘‘রেলের জন অভিযোগ পোর্টাল ও রেল মন্ত্রকের টুইটারে অভিযোগ জানাই। ১৫ দিনের মধ্যে খড়্গপুরের ডিআরএম অফিস থেকে এক জন ফোন করে জানান, তাঁদের একটি টিম ওই রাস্তা দেখতে যাচ্ছে। আমার কাছ থেকে রাস্তায় অবস্থান জেনে নেন ওঁরা। কিন্তু তার পরে সব চুপচাপ!’’

সরকারি কাজে দীর্ঘসূত্রতার ধারা সহ্য করে অধিকার আদায়ের জন্য ধাক্কা দিয়ে যাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। কিন্তু সুমিতবাবু পেরেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক মাস, দেড় মাস অন্তর টুইট করে যেতাম। মাঝেমধ্যে খড়্গপুরের ডিআরএম টুইট করে জানাতেন, সংশ্লিষ্ট জায়গায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ ভাবেই দু’বছর কেটেছে।’’ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চিঠি পান সুমিতবাবু। তাতে খড়্গপুর ডিভিশনের সিনিয়ার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার তাঁকে জানান, রাধামোহনপুর স্টেশন সংলগ্ন রিংরোড মেরামতির প্রস্তাব দেওয়া হয়। রেলওয়ে বোর্ড সেটি অনুমোদন করেনি। বিষয়টির গুরুত্ব বিচার করে রেভিনিউ ফান্ড বা রাজস্ব তহবিলের টাকায় রাস্তা সারাইয়ের একটি প্রস্তাব আবার দেওয়া হয়েছে। ফের সব চুপচাপ! তবে সুমিতবাবুর টুইট চলতে থাকে। ৩ মে তিনি টুইট করার কিছু দিনের মধ্যেই রেল তাঁকে টুইটে জানায়, ৭ মে ওই রাস্তা সারাই শুরু হয়েছে। মানুষের অসুবিধা নিয়ে সরব হওয়া এবং রেলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ডিআরএম অফিস থেকে ফোনে তাঁকে ধন্যবাদও জানানো হয়। রেলের খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরীর কথায়, ‘‘অভিযোগ পেয়ে রাধামোহনপুর স্টেশন সংলগ্ন রিংরোড সারাইয়ের কাজ শুরু করতে কিছু দেরি হয়েছে। রেলওয়ে বোর্ড অনুমতি না-দিলে বিষয়ের গুরুত্ব বিচার করে ডিভিশন নিজে রেভিনিউ ফান্ড ব্যবহার করে ওই কাজ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।’’ রাস্তা সারাই শেষ। দুরন্ত দাস, দেবপ্রতিম মাল, অলকেশ দত্তের মতো অনেক স্থানীয় বাসিন্দাই উচ্ছ্বসিত হয়ে জানিয়েছেন, এত দিনে দুর্ভোগ কমল। আর ডাক্তারবাবু বলছেন, ‘‘সবুরে মেওয়া ফলে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tweet Debra Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE