মাস ছয়েক আগে রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে গিয়েছিলেন সিবিআই অফিসারেরা। সেখানে জেরার মুখে আগল খুলে দেন এই লগ্নি কর্তা। কোন প্রভাবশালী কবে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, কত নিয়েছেন, অন্যান্য কী কী সুবিধা নিয়েছেন— তার বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দেন তদন্তকারীদের। কলকাতায় ফিরে ঘনিষ্ঠ মহলেও সে সব জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরিণতি যে এমন চেহারায় হাজির হবে, সম্ভবত তা বুঝে উঠতে পারেননি। তাই শাসক দলের দুই সাংসদ গ্রেফতার হতেই প্রতিহিংসাজনিত হামলার আশঙ্কায় জেলের মধ্যেও সিঁটিয়ে রয়েছেন রোজ ভ্যালি কর্তা।
গত শুক্রবার ‘বন্ধু’ সাংসদ তাপস পালের গ্রেফতারের খবর পেয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার তাঁর মূল ‘পরামর্শদাতা’, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পর টিভির পর্দায় শহরের গোলমালের ছবি দেখে কার্যত ভেঙে পড়েন গৌতম। জেল সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালের দোতলায় ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রোজ ভ্যালি কর্তা মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কার্যত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
এমনিতেই কথা কম বলেন। শুক্রবার থেকে কারও সঙ্গে পারতপক্ষে কথা বলছেন না রোজ ভ্যালি কর্তা। নিরামিষাশি গৌতম জেলের খাবার একেবারেই খান না। বন্দিরা জেলের ভিতরে যে ক্যান্টিন চালান, সেখান থেকে খাবার কিনে খান। মঙ্গলবার দুপুর থেকে গৌতম সেই খাওয়াও বন্ধ করে দেওয়ায় চিন্তায় পড়ে যান জেল কর্তৃপক্ষ। কারণ অসুস্থ অবস্থায় খাওয়া বন্ধ করে দিলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে। এক জেলকর্তা জানান, এর পরে অনেক বুঝিয়ে বুধবার দুপুরে তাঁকে খাওয়ানো গিয়েছে।
কেন এত বিমর্ষ রোজ ভ্যালি কর্তা?
তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, গৌতম মুখ খোলার পরেই গ্রেফতার হয়েছেন দুই সাংসদ। তাঁর দেওয়া নথিপত্রের ভিত্তিতে আগামী দিনে আরও বেশ কিছু রাঘব-বোয়াল সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হতে পারেন। এই কারণে জেলের ভিতরেই তাঁর ওপর হামলার আশঙ্কা করছেন গৌতম। তাঁর ঘনিষ্টদের বক্তব্য— প্রেসিডেন্সি জেলে এমন কিছু বন্দি রয়েছেন, যাঁরা কট্টর তৃণমূল সমর্থক। শাসক দলের কয়েক জন নেতার অনুগামীও। জেলকর্মীদের একাংশও তৃণমূল প্রভাবিত ইউনিয়নের সদস্য। রোজ ভ্যালি কর্তার আশঙ্কা, ক্ষোভের বশে তারা তাঁকে আক্রমণ করে বসতে পারে। মঙ্গল ও বুধবার দু’জন আইনজীবীর সঙ্গে এ নিয়ে পরামর্শও করেছেন গৌতম।
তা হলে সিবিআই তাঁকে ভুবনেশ্বরে সরিয়ে নিয়ে গেলে কি সেই আশঙ্কা দূর হবে? সূত্রের খবর, জেলের ভিতরে তাঁকে এক জন এমন প্রস্তাব দিলে গৌতমই তাতে আপত্তি তোলেন। তাঁর যুক্তি— ভুবনেশ্বরে গেলে তাপস-সুদীপের মুখোমুখি হতে হবে, যা তিনি একেবারেই চাইছেন না।
জেল সূত্রের খবর, গৌতমকে আশ্বস্ত করতে মঙ্গলবার থেকে এক জন পাহারাদার দেওয়া হয়েছে। তাঁর গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে হাসপাতাল থেকে নেমে তিনি জেলের ভিতরে ঘোরাফেরা করতেন। সেটাও এখন বারণ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy