বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার বেশি খরচ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে আমজনতা যখন সরব, তখনই স্বল্প মূল্যে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসরে নামল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। এখন মহারাষ্ট্রে সমবায় পদ্ধতিতে চারটি হাসপাতাল চালায় তারা। সেগুলিতে অল্প খরচে আধুনিক মানের চিকিৎসা পান রোগীরা। এ বার মহারাষ্ট্র মডেলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের অন্য রাজ্যেও হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তার জন্য আরএসএস সফল এবং সমাজদরদী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকও শুরু করেছে। বাংলাতেও সেই প্রক্রিয়া চলছে। প্রসঙ্গত, রবিবার থেকে টানা দু’দিন কলকাতায় ছিলেন আরএসএসের সর্বভারতীয় নেতা মনমোহন বৈদ্য।
মাত্রাতিরিক্ত খরচ, লাভ বাড়ানোর জন্য রোগীদের অপ্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা ও অপারেশন করানো এবং চিকিৎসায় গাফিলতি—বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে এই ত্রিফলা অভিযোগে রাজ্য এখন সরগরম। আরএসএসের প্রস্তাব, সমবায় হাসপাতাল গড়ে গরিব মানুষকে তারা এক প্রকার বিনা মূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবে। তা ছাড়া, অধুনা কর্পোরেট হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য মধ্যবিত্তদের যে পরিমাণ খরচ হয়, তার তুলনায় অন্তত চল্লিশ শতাংশ কম মূল্যে তাদের সমবায় হাসপাতালে পরিষেবা পাবে মধ্যবিত্তরা। তবে অনেকের মতে, বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে এই অসন্তোষের সুযোগ নিয়েই আরও বেশি সংখ্যক মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে নামতে চাইছে আরএসএস। গোটা প্রয়াসের নেপথ্যে সঙ্ঘ পরিবারের বৃহৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটাও তাৎপর্যপূর্ণ।
আরএসএসের অবশ্য বক্তব্য, উন্নত মানের চিকিৎসা দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য। তার জন্য দেশে সব ধরনের চিকিৎসা পরিষেবাই বাড়ানো উচিত। চিকিৎসায় ধারাবাহিকতা এবং বিশেষ়জ্ঞের পরামর্শের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগানো জরুরি। যে সব সামাজিক, ধর্মীয় এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে স্বল্প খরচে চিকিৎসা পরিষেবা দেয়, তাদের সমর্থন জানিয়ে শিল্পপতি গোষ্ঠীকেও আহ্বান জানাচ্ছে সঙ্ঘ। পাবলিক-কমিউনিটি পার্টনারশিপে এবং সমবায় ভিত্তিতে বহু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য।
পাশাপাশি, নিখরচায় বা স্বল্প মূল্যে সব শিশুকে আধুনিক এবং মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গে স্কুলও গড়তে চায় আরএসএস। এই লক্ষ্যে অন্যান্য রাজ্যে তাদের বহু স্কুল চলছে। তার মধ্যে বেশ কিছু স্কুল উৎকর্ষের দিক থেকে প্রথম সারিতে পৌঁছেছে। অসমের বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম ১০০ জনের বেশির ভাগই আরএসএস পরিচালিত স্কুলের পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী এক মুসলিম ছাত্র। আরএসএসের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের স্কুল গড়তে পারলে গরিব পড়ুয়ারা উপকৃত হবে। গরিব মুসলিম অভিভাবকরাও তাঁদের শিশুদের খারিজি মাদ্রাসায় পাঠাতে বাধ্য হবেন না। তবে সব শিশুকে আধুনিক শিক্ষাদান, বেসরকারি স্কুলের পরিকাঠামো এবং ফি নিয়ন্ত্রণ প্রাথমিক ভাবে সরকারেরই কর্তব্য বলে মনে করে সঙ্ঘ পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy