Advertisement
E-Paper

আইনি জটে ফের বন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি

চলতি মাসেই উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু চূড়ান্ত বিধি তো দূরের কথা, খসড়া বিধি সংশোধন করতে গিয়েই কার্যত দিশা হারালেন বিধি কমিটির সদস্যেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০

চলতি মাসেই উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু চূড়ান্ত বিধি তো দূরের কথা, খসড়া বিধি সংশোধন করতে গিয়েই কার্যত দিশা হারালেন বিধি কমিটির সদস্যেরা। বুধবার কমিটির প্রথম বৈঠকে নতুন বিধি তৈরির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তেই পৌঁছতে পারলেন না বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।

সেই অপারগতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিধি কমিটির প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেনও। এ দিন বৈঠকের পরে তিনি জানান, সেই অর্থে সংশোধিত ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারেননি তাঁরা। ‘‘এ দিন তো সবে প্রথম বৈঠক হল। অনেক কিছুই পরিমার্জন করতে হবে। বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত,’’ বলছেন কমিটি-প্রধান স্বাগতবাবু।

আটকাচ্ছে ঠিক কোথায়?

বিধি কমিটির এক সদস্য জানান, জট আছে নানা বিষয়ে। তবে মূল জটিলতাটা আইনগত। খসড়া বিধির মধ্যে এমন সব আইনি জট রয়েছে, যা কাটাতে হলে বিষয়টি উচ্চশিক্ষা দফতরের আইন বিভাগের কাছে পাঠাতে হবে। এ দিনের বৈঠকে সেই আইনি পরামর্শ নেওয়ারই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু আইনি জটিলতাই নয়। বিধিতে বেশ কিছু নতুন সংযোজনও প্রয়োজন বলে বিধি কমিটি সূত্রের খবর। আইনি জট ছাড়িয়ে সেই সব সংযোজন এবং পরিমার্জন সম্পূর্ণ হলে তবেই নয়া খসড়া বিধি পাঠানো হবে উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিবের (যিনি পদাধিকার বলে আচার্যেরও সচিব) কাছে। তার পরেই চূড়ান্ত বিধি চালু হাতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী উপাচার্য নেই দীর্ঘদিন। কোনও বিধিও নেই সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। ফলে কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, বিধি না-থাকায় অসুবিধা হচ্ছে মূলত তিন দিক থেকে। l পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না। l ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার মানোন্নয়ন। l সর্বোপরি পদে পদে ঘা খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্র। পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি-সহ পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের অভিমুখ ঠিক করার জন্য প্রয়োজন ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের। প্রায় সব বিভাগেরই শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞেরা ওই কাউন্সিলে থাকেন। তাঁদের নেওয়া সিদ্ধান্ত তাঁরাই সিন্ডিকেটে পেশ করেন। কারণ, নির্বাচনে জিতে ওই কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশকে আসতে হয় সিন্ডিকেটে। ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল, বোর্ড অব স্টাডিজ থেকে সিন্ডিকেট পর্যন্ত সব কিছুর ক্ষেত্রেই কার্যত সংবিধানের কাজ করে স্ট্যাটিউট বা বিধি। সেই বিধির অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষেত্রেই অন্ধকার।

আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বছরখানেক আগে তখনকার অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিতকে দ্রুত বিধি চূড়ান্ত করার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। কিন্তু টালবাহানা শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্ট সব প্রশ্নের মীমাংসা করে নতুন বিধি তৈরি হতে কত সময় লাগতে পারে? বিধি কমিটি সূত্রের খবর, নয়া বিধি চূড়ান্ত হতে বছরখানেক সময় তো লাগবেই।

সুগতবাবুর পরে অস্থায়ী উপাচার্যের পদে এসেছেন আশুতোষ ঘোষ। গত ১২ অগস্ট আশুতোষবাবু আশ্বাস দেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তাঁরা আচার্যের কাছে বিধির খসড়া পাঠাতে পারবেন। সেই জন্য তড়িঘড়ি পুরনো বিধি কমিটি ভেঙে নতুন কমিটিও গড়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, চলতি মাসের মাঝামাঝি বিধি পাঠানো দূর অস্ত্‌, বৈঠকই ডাকতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। সেপ্টেম্বরের ২১তম দিনে যদি বা সেই বৈঠক ডাকা হল, তাতে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারলেন না সদস্যেরা। কেন?

বিধি কমিটির এক সদস্য জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে এমন একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা পরিমার্জন করতে গিয়ে কমিটিই পথ হাতড়ে বেড়াচ্ছে। কয়েক বছর আগে পুরনো বিধি কমিটি একটি খসড়া বিধি পাঠালেও বিভিন্ন কারণে সেটি গৃহীত হয়নি। সেই খসড়ায় সংযোজন-বিয়োজন-পরিমার্জনের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিধি তৈরি করার কথা। কিন্তু জট যে খসড়াতেই!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy