বায়ুদূষণের মাত্রা যে বেশি, তা এত দিন বিভিন্ন সূত্র থেকে আঁচ করা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কলকাতাতেও বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ভাসমান কণার পরিমাণ (পিএম ২.৫) সহনশীল মাত্রার থেকে অনেকটাই বেশি। ফলে ফুসফুসের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ (সিওপিডি)-এর প্রথম পর্যায় হল শ্বাসকষ্ট ও শুকনো কাশি। এ কাশি ওষুধেও সারবে না চট করে। এমন লক্ষণ প্রায় অনেকেরই দেখা যাচ্ছে। অনেক শিশুরও শ্বাসের সমস্যা ও নাগাড়ে কাশি শুরু হয়েছে। এই সব লক্ষণই এক সময়ে বাড়তে বাড়তে সিওপিডি নামক ভয়ানক ফুসফুসের রোগের জন্ম দেবে।
সিওপিডি রোগ চেনার উপায় কী?
এই অসুখে ফুসফুসে বিশুদ্ধ বাতাস তথা অক্সিজেন প্রবেশের পথে প্রবল বাধার সৃষ্টি হয়। শরীরে জমতে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইড। ফলে, আক্রান্তেরা শ্বাসকষ্টে ভোগেন। শীতে সেই শ্বাসকষ্ট বাড়ে। ঠান্ডা, রাস্তাঘাটের ধুলো, কলকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া, বাতাসে ভাসমান দূষণবাহী কণা এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী। ধূমপানের অভ্যেস থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ে।
এই বিষয়ে চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, ধুলো-ধোঁয়ার মধ্যে সিওপিডি রোগীরা টানা থাকলে তাঁদের কষ্ট বাড়ে। বুকে চাপ সৃষ্টি হয়, ফুসফুসে প্রদাহ হয়। সুতরাং সিওপিডি থাকলে মাস্ক পরা ভীষণ জরুরি। এ ছাড়া ইনহেলার সঙ্গে রাখতে হবে। পাশাপাশি, ঠান্ডা জল না খাওয়া, এই মরসুমে অনুষ্ঠান বাড়িতে আইসক্রিম এড়িয়ে চলা, বেশি রাতে বা ভোরে না বেরোনো মেনে চলা উচিত সকলের। ”
আরও পড়ুন:
সিওপিডি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ওই রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে এই রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি ১০ লক্ষ। ২০২৩ সালের হিসেবে বিশ্ব জুড়ে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ। যে হারে দূষণ বাড়ছে, তাতে কেবল প্রবীণ বা মধ্যবয়স্কদের নয়, সিওপিডি এখন থাবা বসাচ্ছে কমবয়সিদের শরীরেও। প্রতি ১০ সেকেন্ডে সিওপিডি-তে আক্রান্ত হয়ে এক জন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু মুশকিল হল, এই শ্বাসকষ্টকে বেশির ভাগ মানুষই প্রথমে উপেক্ষা করেন। সাধারণ সর্দি-কাশি বা ধূমপানের কারণে এই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে তাঁরা প্রথমেই ধরে নেন। ফলে বিপদ বাড়তে থাকে। কিছু দিনের মধ্যে তা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগের আকার নেয়।
সুস্থ থাকার উপায় কী?
ধোঁয়া-ধুলোর ক্ষেত্রে এন৯৯ মাস্ক সাধারণ মাস্কের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি উপকারী। কারণ, ওই ধরনের মাস্ক ভাসমান ধূলিকণাকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়। রাস্তায় বেরোলে এমন মাস্ক পরা উচিত।
ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা প্রাণায়াম বেশ উপকারী। সুখাসনে বসে নাক দিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস টেনে ১০ সেকেন্ড মতো ধরে রাখার চেষ্টা করুন। তার পর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাসকষ্ট আচমকা শুরু হলে, এই ভাবে শ্বাসের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তাতে কষ্ট কম হবে।
সিওপিডি থাকলে প্রয়োজনীয় ইনহেলার হাতের কাছেই রাখতে হবে। দরকারে তা যেন দ্রুত ব্যবহার করতে পারেন। ওষুধপত্রও ঘরে মজুত করে রাখতে হবে।
বিড়ি–সিগারেট থেকে দূরে থাকুন। প্যাসিভ স্মোকিংও চলবে না, আশপাশে কেউ ধূমপান করলে সেই স্থান থেকে সরে আসুন, নয়তো নাকে চাপা দিন।
সম্ভব হলে হেপা ফিল্টারযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ার ঘরে রাখতে পারেন, এতে ঘরের বাতাস অনেকটাই পরিশোধিত হবে।
নজর দিতে হবে খাওয়াদাওয়াতেও। কার্বোহাইড্রেটও খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অনেকেই কার্বোহাইড্রেট বাদ দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভাত, রুটি, আলু, বিনস খেতে হবে। দানাশস্যও রাখুন রোজের পাতে। প্রাতরাশে ওট্স বা ডালিয়া খেতে পারেন।
ইনহেলার বা নেবুলাইজ়ার ব্যবহারের পরেও শ্বাসকষ্ট না কমলে, বুক ধড়ফড় করলে বা ঠোঁট নীল হতে শুরু করলে, দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ার টিকা এই সময়ে নিয়ে রাখা ভাল। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দুই থেকে তিন দিন নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা, জ্বর ভাব থাকতে পারে নানা কারণে। তার বেশি হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কফ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স রে করাতে হতে পারে।