E-Paper

‘বন্ধুকে এভারেস্টের পথেই রেখে এসেছি’

বুধবার সন্ধ্যায় এভারেস্টের ক্যাম্প ৪ থেকে প্রায় এক সঙ্গে যাত্রা শুরু করেছিলেন রুম্পা ও রানাঘাটের স্কুলশিক্ষক সুব্রত ঘোষ। তবে শুরুতেই হয় বিপত্তি।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৫ ০৯:৩০
রুম্পা দাস।

রুম্পা দাস। —ফাইল চিত্র।

‘‘এক বন্ধুকে এভারেস্টের পথেই রেখে এসেছি। আর কোনও কথা মাথায় আসছে না।’’ —এভারেস্টের শিখর ছুঁয়ে শনিবার দুপুরে বেসক্যাম্পে নেমে বললেন রানাঘাটের স্কুলশিক্ষিকা রুম্পা দাস। খানিক উদ্‌ভ্রান্ত শোনায় তাঁর গলা।

বুধবার সন্ধ্যায় এভারেস্টের ক্যাম্প ৪ থেকে প্রায় এক সঙ্গে যাত্রা শুরু করেছিলেন রুম্পা ও রানাঘাটের স্কুলশিক্ষক সুব্রত ঘোষ। তবে শুরুতেই হয় বিপত্তি। কৃষ্ণনগর পর্বতারোহণ ক্লাবের সদস্য রুম্পা বলছেন, ‘‘৬টা নাগাদ বেরোব বলেও দলের ফিলিপিন্সের সদস্য সানতিয়েগোর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কারণ, উনি তখনও এসে পৌঁছননি। হঠাৎ শুনি, উনি মারা গিয়েছেন। দলেরই এক জনের মৃত্যু শুনে বুকটা কেঁপে উঠেছিল। সঙ্গী বীরে তামাং শেরপাকে বার বার শুধিয়েছিলাম, পারব তো? ও সাহস জোগায়।’’

প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বাদে, রাত ৮টা নাগাদ প্রবল হাওয়ার (গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার) মধ্যেই ‘সামিট পুশ’ শুরু করে রুম্পা-সুব্রতদের দল। তবে কখন যে পিছিয়ে পড়েছিলেন সুব্রত, জানেন না রুম্পা। তাঁর কথায়, ‘‘বীরে কোথাও দাঁড়িয়ে, ছবি তুলে সময় নষ্ট করতে দেয়নি। প্রবল হাওয়ার মধ্যেই সবাই যেন দৌড়চ্ছি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিট নাগাদ আমি শীর্ষে পৌঁছই।’’

ফেরার সময়ে হিলারি স্টেপের কাছাকাছি জায়গায় সুব্রতের সঙ্গে শেষ দেখা হয় রুম্পার। সুব্রত তখনও সামিটের দিকে যাচ্ছেন। রুম্পা বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বশ্বাসে নামছি। তাই তেমন কথা হয়নি। ওই জায়গাটা থেকে সামিট দেখা যায়, তবে পথ অনেকটাই বাকি। কিন্তু তখন কি ওঁকে আমি বলতাম যে, আর সামিটে যেতে হবে না? ওঁর কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, সেটাও দেখে কিছু বুঝিনি।’’ পরে সারা সন্ধ্যা সুব্রতদের সঙ্গে ওয়াকিটকিতে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু যোগাযোগ হয়নি।

পরদিন, শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ সুব্রতের শেরপাকে একা নেমে আসতে দেখে রুম্পা বুঝে যান, সব আশা শেষ। জানা যায়, হিলারি স্টেপ পেরিয়ে আর এগোতে পারেননি সুব্রত। চেষ্টা করেও তাঁকে নামাতে পারেননি সঙ্গী শেরপা। তাঁর পাঁচ আঙুলে ফ্রস্টবাইট হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সুব্রতের দেহ উদ্ধারের দায়িত্ব এখন ‘সেভেন সামিট ট্রেকস’ সংস্থার। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেহ নামানোর কাজ শুরু করা হতে পারে।

ওই দলের আর এক সদস্য, কৃষ্ণনগরের অসীমকুমার মণ্ডল অবশ্য ক্যাম্প ৪ থেকেই নেমে এসেছিলেন। এ দিন তিনি বললেন, ‘‘আমার শেরপা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বুঝেছিলাম, তরুণ অনভিজ্ঞ শেরপা তেমন সাহায্য করতে পারবে না। আবেগ সরিয়ে রেখে সুস্থ ভাবে ফিরে আসতে হবে, এটাই মাথায় ছিল। ডেথ জ়োনে এভারেস্টের ক্যাম্প ৪-এ রাত কাটিয়েছি, এটাই অনেক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Climber Death Mountaineers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy