দুর্গাপুরের সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর শিশুকন্যার তদন্তের জাল ক্রমশ গুটিয়ে আনছে পুলিশ। এ দিন জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, ‘‘মা-মেয়েকে খুন করা থেকে দেহ লোপাট করার চেষ্টা— গোটা ঘটনায় এখন কোনও ‘মিসিং লিঙ্ক’ নেই। দ্বিতীয় গাড়ি এবং চালকের হদিশ মেলায় পুরো ঘটনাই সাজানো যাচ্ছে।’’ ওই গাড়ির চালক নুর হাসান আলি শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন। পুলিশও কথা বলে তাঁর সঙ্গে।
এ দিন অভিযুক্ত সমরেশ সরকারকে জেরা করে শ্রীরামপুর থানা থেকে বেরনোর সময়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) জয়িতা বসু জানান, সুচেতা এবং তাঁর মেয়ে দীপাঞ্জনাকে খুনের পরিকল্পনা সমরেশেরই। তিনি বলেন, ‘‘দু’জনের মধ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সুচেতা বিয়ের জন্য সমরেশকে চাপ দিচ্ছিলেন। সেই কারণেই সমরেশ ওই ঘটনা ঘটান।’’ তবে সুচেতার টাকার জন্য সমরেশ খুন করেছেন কিনা, সেই সম্ভাবনা নিয়েও তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
বর্ধমান থেকে ব্যারাকপুর যে গাড়িতে আসেন সমরেশ, তার চালক নুর হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ওনার (সমরেশের) সঙ্গে সুগন্ধীর বোতল ছিল। তিনি গাড়িতে উঠে ভাল করে নিজের গায়ে সুগন্ধী ছড়িয়ে নেন।’’ রাস্তায় বিশেষ কথা বলেননি তাঁর সঙ্গে। তবে বর্ধমানের জৌগ্রামে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তিনি জলের বোতল কেনেন।
তদন্তকারীদের দাবি, আগাগোড়াই সমরেশের দাবি, মা-মেয়েকে টুকরো করে ব্যাগে পোরার কাজ তিনি একা করেছিলেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশও মনে করছে, প্রত্যক্ষদর্শী যাতে না থাকে, তাই একা দেহ লোপাট করতে চেয়েছিলেন সমরেশ।’’ কিন্তু সকলের চোখের সামনে শেওড়াফুলির তিন পয়সা ঘাটের কাছে ভুটভুটি থেকে মাঝগঙ্গায় ব্যাগ ফেলে দেওয়াটাই ভুল হল তাঁর।
এক নাগাড়ে সাত দিন সমরেশকে জেরার পর পুলিশের ধারণা, প্রথমে সুচেতাকে জলে ডুবিয়ে মেরে ফেলেন সমরেশ। ঘুমের ওষুধ খেয়ে আচ্ছন্ন থাকার জন্য সুচেতা বিশেষ বাধা দিতে পারেননি। সুচেতার চার বছরের মেয়ে দীপাঞ্জনাকে প্রাথমিক ভাবে মারার পরিকল্পনা না থাকলেও সমরেশ ভেবেছিলেন, দীপাঞ্জনা তাঁর কথা বলে দিতে পারেন। প্রমাণ লোপাটের জন্য তাকেও জলে ডুবিয়ে মারে সমরেশ। পরে ধীরেসুস্থে সুচেতার দেহ খণ্ড করে তিনটি ব্যাগে ভরেন। দীপাঞ্জনার দেহ আর একটি ব্যাগে ভরা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy