সুচ-কাণ্ডে ধৃত সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বড় পুত্রবধূ রিঙ্কি ঠাকুর গোপন জবানবন্দি দিলেন পুরুলিয়া আদালতে। শুক্রবার সকালে পুলিশের সঙ্গে তিনি পুরুলিয়ায় আসেন। পরে বিশেষ আদালতের অনুমতিক্রমে বিচারক এ ভার্মার কাছে রিঙ্কিদেবী গোপন জবানবন্দি দেন। কয়েকদিন আগেই সনাতনের ছোটপুত্রবধূ রীনা ঠাকুর এবং সনাতনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা পাগল রায়ও আদালতে এসে গোপন জবানবন্দি দিয়ে যান।
আদালত থেকে গ্রামে ফিরে বিকেলে রিঙ্কিদেবী বলেন, ‘‘স্বামীদের কর্মসূত্রে আমি ও ছোট জা বাইরে থাকি। সম্প্রতি গ্রামে ফিরে সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুকন্যাটিকে নেতিয়ে পড়তে দেখে জোর করেই গাড়ি ভাড়া করে শ্বশুরকে দিয়ে ওকে হাসপাতালে পাঠাই। শিশুটির শরীরে সুচ বিঁধে শ্বশুর তাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে পরে জানতে পেরে, অবাক হয়ে গিয়েছি।’’
নদিয়াড়া গ্রামের বছর বাষট্টির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড সনাতন স্বামী বিচ্ছিন্না এক তরুণীকে বিয়ে করেন গত দোলের সময়। পরে সেই তরুণীর সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে সনাতনের কাছে দিয়ে যান তার দিদিমা। জ্বর-সর্দির উপসর্গ নিয়ে মেয়েটিকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পরে জানা যায়, তার উপরে যৌন নির্যাতন হয়েছে। সনাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর থেকেই সে বেপাত্তা হয়ে যায়। পরে মেয়েটি কলকাতার এসএসকেএমে মারা যায়। নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে তার মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শনিবার উত্তরপ্রদেশ থেকে সনাতনকে ধরে পুরুলিয়ার পুলিশ। এখন সে পুলিশ হেফাজতে।
রিঙ্কিদেবীর স্বামী জিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর গুজরাটের ভাবনগরে একটি কারখানায় কাজ করেন। বৃহস্পতিবার তিনি গ্রামে ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানে এতদিন কী ঘটছিল, দূর থেকে ঠিক বুঝতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু গ্রামে ফিরে সব শুনে খব খারাপ লাগছে। বাবার পাশে আমরা নেই। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
ইতিমধ্যে শিশু সুরক্ষা কমিশনের কথায় ওই গ্রামে গিয়ে সামাজিক-তদন্ত করে এবং মৃত শিশুর মায়ের সঙ্গে জেলে কথা বলে রিপোর্ট পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। ওই তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তরমকুমার অধিকারী বলেন, ‘‘কমিশন জানালে আমরা সনাতনের সঙ্গেও কথা বলব। প্রয়োজনে সনাতন ও তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মৃত শিশুর মাকে মুখোমুখি বসিয়েও তদন্ত করব।’’
এ দিকে সনাতনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ তিন দিন ধরে জেরা করলেও সে শিশুটিকে সুচ বেঁধানোর কথা এখনও কবুল করেনি বলে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সনাতন সুচ ফোঁটানোর কথা জানায়নি। তবে আমরা তদন্তে উল্লেখযোগ্য কিছু সূত্র পেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy