আলতাফ হোসেন শেখ (প্রহৃত ব্যবসায়ী)
তোলা না দেওয়ায় এক হোটেল ব্যবসায়ীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল সরিষায়। চোখে গুরুতর আঘাত নিয়ে আলতাফ হোসেন শেখ নামে ওই ব্যবসায়ী ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি। ইট-বালির সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে থানায়। যদিও অভিযুক্তদের দাবি, নানা রকম অবৈধ ব্যবসা চলে ওই হোটেলে। তার প্রতিবাদ করতে গিয়েই ঝামেলা বাধে। ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডায়মন্ড হারবার ২ নম্বর ব্লকের সরিষায় মেরিন কলেজের পাশে ওই হোটেল। সোমবার ডায়মন্ড হারবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই গেস্ট হাউজের অন্য অংশীদার তথা সরিষার নারায়ণতলার বাসিন্দা রাহিদ আহমেদ দপ্তরি। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় চেওড়া গ্রামের ছয় সিন্ডিকেট সদস্য দীর্ঘদিন থেকে হোটেল মালিকদের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে আসছিল। তা না দেওয়ায় বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ফোন আসে। হাসপাতালে শয্যাশায়ী আলতাফ বলেন, ‘‘রবিবারও এ রকম ফোন আসে আমার মোবাইলে। টাকা দিতে অস্বীকার করেছিলাম। তারপর প্রায় ১০-১২ জনের একটি দুষ্কৃতী দল হোটেলে এসে মারধর করে আমাকে। কয়েক হাজার টাকা, ঘড়ি নিয়ে চলে যায়।’’ ভাঙচুর চালানো হয় হোটেলের লবিতেও।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় চেওড়া গ্রামের কুতুবউদ্দিন মোল্লা, এনামূল মোল্লা, ভোলা মোল্লা, সাইদুল মোল্লা, জুলো মোল্লা এবং ইয়াসিন মোল্লার বিরুদ্ধে অভিয়োগ দায়ের হয়েছে থানায়। জানা গিয়েছে, স্থানীয় ইট বালির একটি সিন্ডিকেট রয়েছে মেরিন কলেজের কাছে। কুতুবউদ্দিন মোল্লা ওই সিন্ডিকেটের সদস্য।
কুতুবউদ্দিন এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ওরা বেআইনি ব্যবসা করছে। মদ বিক্রি করা হয় ওই হোটেল থেকে। হোটেলে দেহ ব্যবসাও হয়। আমরা বলেছিলাম, এলাকায় খারাপ প্রভাব পড়বে। এ সবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঝামেলা-মারপিট হয়। তবে আমরা তোলা আদায় করতে যাইনি।’’
স্থানীয় ইয়ং ফাইটার্স ক্লাবের সম্পাদক বাবুয়া মোল্লা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের এক জন আমাদের ক্লাবের সদস্য। ওই হোটেলে নিয়মিত অপরিচিত ছেলেমেয়েরা আসে। পাশেই কারমেল স্কুল, মেরিন কলেজ রয়েছে। আমরাও এর আগে প্রতিবাদ করেছিলাম।’’ যদিও আলতাফ হোসেন এবং রাহিদ আহমেদরা হোটেল থেকে মদ বিক্রি বা দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ডায়মন্ড হারবার, রায়চক, সরিষা, ফলতা-সহ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক হোটেল তৈরি হচ্ছে। হোটেলগুলিকে ঘিরে নানা রকম অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ মাঝে মধ্যেই ওঠে। তবে ডায়মন্ড হারবার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুখেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হোটেল মালিকেরা কোনও অবৈধ ব্যবসা করেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের এ ভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পুলিশ এবং দুষ্কৃতীদের টাকা দিতে হয়। যাঁরা প্রতিবাদ করেন, তাঁদের সঙ্গেই ঝামেলা বাধে।’’
ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরুময় গায়েন ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘হোটেল ব্যবসায়ীর উপরে আক্রমণ মানে হোটেল ব্যবসার উপরে আঘাত। ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ঘটনার নিন্দা করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’ কিন্তু হোটেল মালিকদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন পুলিশ কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy