Advertisement
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
State News

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কি কাল হল সত্যজিতের? প্রশ্ন উঠছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও

সেই সত্যজিতকে খুন হতে হল তাঁর নিজের পাড়াতেই, বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে!

শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

সিজার মন্ডল
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:১৪
Share: Save:

খুনের ঘটনার পরের দিন, রবিবার হাঁসখালি ঘুরে মনে হল নিজেকে অজাতশত্রু ভেবেই সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। সত্যজিতের পরিবার, প্রতিবেশী সকলেই বলেছেন, নিজেকে অজাতশত্রু ভাবতেন তৃণমূল বিধায়ক। বাইক নিয়ে একা একা গোটা এলাকা চষে বেড়াতেন। রাতবিরেতেও। তাই প্রশ্ন উঠছে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কি কাল হল সত্যজিতের?

সত্যজিতের ভাই সুমিতের কথায়, ‘‘এলাকার সবাইকে চিনতেন দাদা। সকলের সঙ্গেই পরিবারের লোকজনের মতো সম্পর্ক ছিল দাদার। একা একা বাইকে ঘুরে বেড়াতেন গোটা এলাকায়।’’

সেই সত্যজিতকে খুন হতে হল তাঁর নিজের পাড়াতেই, বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে!

আর এইখানেই প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। ফুলবাড়ির ফুটবল ময়দানে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছিল মজিদপুর আমরা সবাই ক্লাব। পাড়ার লোক বলে সত্যজিত তো আমন্ত্রিত ছিলেনই, তিনি বিধায়ক বলে ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মন্ত্রী রত্না কর ঘোষ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা, নেত্রী।

আরও পড়ুন: প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে অসঙ্গতি, বিধায়ক খুনে প্রশ্ন ধৃতদের নিয়েও

প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রশ্ন তুললেন, ‘‘শনিবার এলাকায় একটা বড় অনুষ্ঠান ছিল ওই সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে। মন্ত্রী এসেছিলেন। এসেছিলেন জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা, নেত্রীরা। তা হলে কেন তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ছিলেন না পুলিশ অফিসার তো দূরের কথা, কোনও পুলিশকর্মীও? এমনকি, ছিলেন না কোনও সিভিক ভল্যান্টিয়ারও।’’

বাড়িতে ছেলেকে কোলে নিয়ে সত্যজিতের স্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।

সত্যজিতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেল, ঘটনার দিন শনিবার ছুটি নিয়েছিলেন সত্যজিতের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী প্রভাস মন্ডল। এক আত্মীয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সব ক্ষেত্রে স্থানীয় থানাকে জানিয়ে ছুটিতে যেতে হয় ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের। যাতে নিরাপত্তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশকে না জানিয়ে কী ভাবে ছুটিতে গেলেন বিধায়কের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী?’’

জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেছেন, ‘‘বিধায়কের ভাইয়ের করা এফআইআরে যে ৪ জনের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম- সুজিত মন্ডল ও কার্তিক পাল। বাকি দু’জন এখনও ফে‌রার। আর কেউ এই ঘটনায় জড়িত কি না, সেই খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে। ধৃত দু’জনকে আদালতে তোলা হয়েছে। ধৃত দু’জনকে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’’

রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মঞ্চ থেকে ২০ মিটার দূরে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা রয়েছে খুনের জায়গা। ত্রিপলের গায়েও চাপ চাপ রক্তের দাগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, খুনের কয়েক মিনিট আগেই মন্ত্রী রত্না কর ঘোষকে তাঁর গাড়িতে তুলে দিয়ে এসে মঞ্চ থেকে সামান্য দূরে একটি চেয়ারে বসেন বিধায়ক। আশপাশে তাঁকে ঘিরে ছিলেন কয়েকশো মানুষ। আর তাঁদেরই মধ্যে মিশে ছিলেন আততায়ী। ওই ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়েই আততায়ী চলে আসেন বিধায়কের খুব কাছে। খুব কাছ থেকে গুলি করেন। আচমকা গুলির শব্দে মানুষ যখন বিহ্বল, দিশা হারিয়ে ফেলেছেন, তখন আগ্নেয়াস্ত্রটি ঘটনাস্থলেই ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান আততায়ী।

ব্যক্তিগত দেহরক্ষী যে হঠাৎ ছুটি নিয়েছেন, তা কি জানতেন? এই প্রশ্নে সত্যজিতের স্ত্রী রূপালি বিশ্বাস বললেন, ‘‘উনি (সত্যজিত) খুব একটা দেহরক্ষী সঙ্গে রাখতেন না। একাই ঘুরে বেড়াতেন সর্বত্র। সেই জন্যই দেহরক্ষীর ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাইনি।’’

ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে হাঁসখালি থানার ওসি অনিন্দ্য বসুকে। সাসপেন্ড হয়েছেন বিধায়কের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী প্রভাস মন্ডলও। কেন হঠাৎ ছুটিতে গেলেন প্রভাস, তার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করতে সিআইডি-র একটি দলও পৌঁছেছে। রবিবার ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন আইজি (সিআইডি) অজয় কুমার। গিয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল এবং ডগ স্কোয়াড। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সুজিত মন্ডলের বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার পর কৃষ্ণনগর থেকে বিধায়কের দেহ নিয়ে বেরিয়ে আসেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নদিয়া জেলা তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুব্রত মন্ডল-সহ নদিয়া জেলার একাধিক বিধায়ক ও জেলা তৃণমূল নেতারা। বিধায়কের দেহটি নিয়ে আসা হয় ফুলবাড়ির ফুটবল ময়দানে, গতকালের ঘটনাস্থলে। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ রাখা হয় সত্যজিতের দেহ। তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনেরল সঙ্গে দেখা করেন পার্থ, অনুব্রত। তাঁরা সেখান থেকেই সত্যজিতের স্ত্রীকে টেলিফোনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Satyajit Biswas Murder Krishnaganj Hanskhali PS Krishnaganj TMC MLA Murder TMC MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy