রাজ্যের সরকারি, বেসরকারি-সহ সমস্ত রকমের স্কুলে নিরাপত্তা আটোসাঁটো করতে গত অক্টোবরেই ১৮ দফা নির্দেশ দিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। সেগুলি ঠিক করে আদৌ মানা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তৎপর হয়েছেন দফতরের কর্তারা। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডায় স্কুলে ঢুকে অতর্কিতে হামলায় ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আরও নড়েচড়ে বসেছেন দফতরের কর্তারা। তাই শুক্রবার থেকেই শহরের প্রতিটি স্কুলের প্রধানদের কাছে রিপোর্ট তলব করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সমস্ত স্কুলকে ‘সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। স্কুলের প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক ছাড়াও ওই কমিটিতে পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর অথবা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রতিনিধিদের রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি সিসিটিভি বসানো এবং নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধির উপরেও জোর দিয়েছিল দফতর। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নির্দেশ মতো কাজ হয়েছে কি না সেটা জানতেই শুক্রবার সমস্ত স্কুলের কাছে রিপোর্ট তলব করা হচ্ছে। সেই রিপোর্ট পেয়ে ব্যবস্থা নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা।’’
এ দিন বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে অবশ্য দেখা গেল বেশ কিছু স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস-এ পরিচয় পত্র ছাড়া ঢুকতেই দিচ্ছেন না নিরাপত্তারক্ষীরা। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ফ্লোরিডার ঘটনার জন্য নয়, এমনিতেই স্কুলে নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া হয়।’’ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের রামমোহন মিশন অবশ্য বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্কুল পড়ুয়া এবং বাইরের সকলকেই পরিচয়পত্র দেখে তবেই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু ফ্লোরিডার ওই মর্মান্তিক ঘটনার পরে নজরদারি আরও মজবুত করা হয়েছে।’’ যাদবপুর থানাকে দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানান অন্য এক কর্তা।
সিবিএসই-র অভিনব ভারতী স্কুলের অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্ত এ দিন জানান, তাঁরা এমনিতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সিসিটিভির সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বহু স্কুলেই ‘‘সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং কমিটি’ গঠন করা হয়নি।
অন্য দিকে বাংলা মাধ্যমের সরকারি হিন্দু স্কুলে বহু দিন আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার কাজ শুরু হলেও নজরদারিতে খামতি রয়েই গিয়েছে। এ দিন গিয়ে দেখা গেল স্কুলের প্রধান ফটকে নিরাপত্তারক্ষীর চেয়ার ফাঁকা। অর্থাৎ যে কেউ স্কুলের ভিতরে ঢুকে যেতে পারেন। একই ভাবে হেয়ার স্কুলে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও সকলেরই যেন অবাধ প্রবেশ। তবে সরকারি পোষিত স্কুলের মধ্যে যাদবপুর বিদ্যাপীঠে নিরাপত্তা অটুট রাখা হচ্ছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য। হি ন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে সব সময়ই নিরাপত্তারক্ষী থাকে। কিছু সময়ের জন্য হয়ত অন্য কোথাও গিয়েছিলেন। তবে প্রধান গেট একেবারে খালি রেখে যাওয়া উচিত হয়নি। আমি দেখে নিচ্ছি।’’