Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফের রক্ত ঝরল ভাঙড়ে, গুলিতে মৃত্যু তৃণমূল নেতার

পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সাব-স্টেশন তৈরির প্রতিবাদে ‘জমি-জীবিকা-বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’ গড়ে গত জানুয়ারিতে ভাঙড়ের মাছিভাঙা, নতুনহাট, বকডোবা-সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ আন্দোলনে নামে। আক্রান্ত হয় পুলিশ। গুলিতে মৃত্যু হয় দু’জনের।

মৃত: আসিকুর রহমান। ছবি: সামসুল হুদা।

মৃত: আসিকুর রহমান। ছবি: সামসুল হুদা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের ছ’মাস পরে ফের রক্ত ঝরল ভাঙড়ে। রবিবার সকালে পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন নতুনহাট বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন আরাবুল ইসলাম ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা আসিকুর রহমান ওরফে বাবুসোনা (৪০)। আন্দোলনকারীরা তাঁকে খুন করে বলে অভিযোগ তুলেছে শাসক দল। প্রতিবাদে পথ অবরোধও করে তারা। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ মানেনি। তাঁদের দাবি, নিজেদের আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই কোনও ভাবে গুলি ছিটকে লেগে মৃত্যু হয় ওই তৃণমূল নেতার। একই দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদেরও।

কাশীপুরের শানপুকুর এলাকার বাসিন্দা, আসিকুর ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। ভাঙড় কলেজে শিক্ষিকা নিগ্রহ, বামনঘাটায় তৎকালীন সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লার উপরে হামলা-সহ কিছু ঘটনায় আরাবুলের সঙ্গে আসিকুরের নামও জড়িয়েছিল। ঠিক কী ভাবে তিনি মারা গেলেন, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। মুখ খোলেনি পরিবারও। রাতে নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের ভাই মাহফুজুর রহমান।

আরও পড়ুন: পথ রুখে প্রতিবাদ সমতলে

পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সাব-স্টেশন তৈরির প্রতিবাদে ‘জমি-জীবিকা-বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’ গড়ে গত জানুয়ারিতে ভাঙড়ের মাছিভাঙা, নতুনহাট, বকডোবা-সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ আন্দোলনে নামে। আক্রান্ত হয় পুলিশ। গুলিতে মৃত্যু হয় দু’জনের।

এ দিন বিকেলে বকডোবা থেকে পাওয়ার গ্রিড এলাকা পর্যন্ত মিছিল হয়। ওই মিছিল যাতে না হয়, সে জন্য কয়েক দিন ধরেই আরাবুল বাহিনী ওই এলাকায় বোমাবাজি করছিল বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে নতুনহাট বাজারের কাছেও বোমাবাজি হয়। এর কিছু পরেই রাস্তার মধ্যে আসিকুরের মাথায় একটি গুলি এসে লাগে। জিরেনগাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর পরেই ঘণ্টাদুয়েক নতুনহাটে লাউহাটি-হাড়োয়া রোড অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। আরাবুলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর ছেলে, পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান হাকিমুল ইসলামের দাবি, ‘‘আসিকুর বাবার সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন এক আন্দোলনকারী তাঁকে গুলি করে।’’

আন্দোলনকারীদের কমিটির মুখপাত্র মির্জা হাসান খুনের অভিযোগ মানেননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আরাবুল বাহিনীর দাপটে আমরা কেউ নতুনহাটে যেতেই পারি না। এ দিন মিছিল ভেস্তে দেওয়ার জন্য ওরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নতুনহাটে জড়ো হয়েছিল। সেই সময়ে কোনও ভাবে ওদের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ওদের নেতা মারা যান।’’ একই দাবি বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও। এ দিন ওই মিছিলে সুজনবাবু ছাড়াও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ি, প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য ছিলেন। সুজনবাবুও বলেন, ‘‘মিছিল ভেস্তে দিতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা নতুনহাটে জড়ো হয়। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE