
শনিবার আদালত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করেছি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর-কাণ্ডে রায় শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি দোষীর ফাঁসি চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ফাঁসির দাবি করেছিলাম। কী করে জানি না... আমাদের হাতে কেসটা থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির অর্ডার করে নিতাম।’’
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩ (১)— এই তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। সিবিআই মৃত্যুদণ্ডের জন্য সওয়াল করলেও শেষমেশ আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক অনির্বাণ দাস। সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। জরিমানার অর্থ দিতে না পারলে আরও পাঁচ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় শিয়ালদহ আদালত। এ ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণের জন্য ৭ লক্ষ এবং হত্যার জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিচারক বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।’’
আদালতের নির্দেশ শুনে কাঁদো কাঁদো দেখা গেল দোষী সঞ্জয় রায়কে। বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকেন তিনি। সঞ্জয়ের আইনজীবী তাঁকে বলেন, ‘‘আপনার মৃত্যুদণ্ড নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হল।’’ তার প্রেক্ষিতে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমার তো বদনাম হয়ে গেল।’’
দোষীর যাবজ্জীবন (আমৃত্যু) কারাদণ্ড ছাড়াও তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। জরিমানার ৫০ হাজার টাকা না দিলে পাঁচ মাস অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ সিভিককে। নির্যাতিতার বাবা অবশ্য জানান, ক্ষতিপূরণ চান না। তাঁর উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে এমন বলা হলে আমিও তাই করতাম।’’
বিচারক দাস বলেন, ‘‘আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।’’
এজলাসে হাজির করানো হল সঞ্জয়কে।
সিবিআইয়ের আইনজীবী: এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। নির্যাতিতা চিকিৎসক ‘ডিউটি’তে ছিলেন । তিনি শুধু রোজগার করতে যাননি, মানুষকে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। এমবিবিএস পাশ করেছেন। এই ঘটনায় (ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডে) সবাই বিস্মিত। শুধু নির্যাতিতার পরিবার এক সদস্যকে হারায়নি, এক চিকিৎসককে হারিয়েছে সমাজ।সমগ্র সমাজ এই ঘটনায় নড়ে গিয়েছে। যাঁদের মেয়ে বাইরে কাজে যাচ্ছেন বা অন্য কোনও কারণে বাইরে যাচ্ছেন, এই ঘটনা সেই সমস্ত কন্যাসন্তানের মা-বাবাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনটির মধ্যে দু’টি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। কঠিন শাস্তির প্রার্থনা করছি আমরা। সমাজে বার্তা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।
সঞ্জয়ের আইনজীবী: বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ বলা হচ্ছে,তা হয়তো হতে পারে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে (সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি মামলার কথা উল্লেখ করে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ সম্পর্কে বলেন ওই আইনজীবী)। প্রমাণ সংক্রান্ত আবেদন আগেও আপনার কাছে জানিয়েছি। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আইনে। প্রথমেই মৃত্যুদণ্ড নয়, সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। যেখানে সংশোধনের সুযোগ নেই সে ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
বিচারক: মৃত্যুদণ্ড কেন নয়, সেটাই আপনি বলছেন?
সঞ্জয়ের আইনজীবী: ওঁকে বাঁচানোর এটা শেষ সুযোগ আমাদের (মৃত্যদণ্ড ছাড়া বিকল্প শাস্তির আবেদন জানানো হয়)।
নির্যাতিতার আইনজীবী: এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার, হাসপাতালে যাঁকে বিশ্বাস করে প্রবেশ (হাসপাতালের মধ্যে) করতে দিয়েছিল, সেখানে তিনি এই কাজ করেছে। পুরো বিষয়টি তিনি জানতেন। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করছি।
বিচারক: বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট কোনও কোনও ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যদণ্ড বহাল রেখেছে, আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে খারিজ করেছে।
বিচারক: আগের দিনই বলেছিলাম, ধর্ষণের জন্য আপনার (সঞ্জয়) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। ধর্ষণের সময় আঘাতে মৃত্যু হলে যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। খুনের দায়ে আপনার শাস্তি হতে পারে। এগুলো সব আপনাকে জানানো হয়েছে। আপনার বক্তব্য থাকলে বলুন।
সঞ্জয়: আমি খুন বা অন্য কাজ কিছুই করিনি। আমি কোনওটাই করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি আগের দিনও বলেছি। যেটা আমি শুনেছি, এত (প্রমাণ) কিছু নষ্ট হয়েছে। আমি জানতাম না। আগের দিনই বলেছিলাম, আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিল। সেটা নষ্ট হয়নি। আমি নির্দোষ। আপনাকে আগেও বলেছি যে কী ভাবে আমাকে মারধর করা হয়েছে, যার যা ইচ্ছে করেছে। অত্যাচার করা হয়েছে, সাইন (সই) করানো হয়েছে। যেখানে বলেছে সাইন (সই) করেছি। সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার পর আমাকে মেডিক্যালের জন্য নিয়ে যায়। প্রথমে জোকার নিয়ে যাবে বলে কমান্ডের দিকে নিয়ে চলে যায়। তার পর এখানে, বিআর সিং (হাসপাতাল) নিয়ে চলে এল।
বিচারক: আগেও আপনাকে বলার জন্য ৩ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। আপনার উকিলবাবু আপনাকে জেরা করেছে। কী হয়েছে, সেটা আপনার থেকে ভাল কেউ জানেন না। আপনার বিরুদ্ধে যা তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষীর উপর বিশ্বাস করে আমি বিচার করতে বসেছি। তিন ঘণ্টা জেরার পর যা সাক্ষ্য মিলেছে তা আপনার বিরুদ্ধে চার্জের জন্য যথোপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। তাই আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আপনি নির্দোষ আগেও বলেছেন। আপনার কথা আগেও বলেছেন। আপনার শাস্তির বিষয়ে কিছু বলার থাকলে বলুন। আর আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?
সঞ্জয়: মা আছেন।
বিচারক: বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে? বাড়ির কেউ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?
সঞ্জয়: না করেনি। কেউ যায়নি। আমি আগে পুলিশ ব্যারাকে থাকতাম। পরে তো পুলিশ হেফাজত হয়ে গেল।
বিচারক: আপনি নির্দোষ ছাড়া কিছু বলতে চান?
সঞ্জয়: যে কাজটা করিনি তাতে দোষী বলা হচ্ছে।
কী শাস্তি হবে সিভিক ভলান্টিয়ারের? দুপুর পৌনে তিনটেয় জানাবে শিয়ালদহ আদালত। রায় লিপিবদ্ধ করছেন বিচারক দাস।
সঞ্জয়ের এক আইনজীবী: এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। বিচারক: সবাইকে বলব এজলাস ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য। ২টো ৪৫ মিনিটে আবার কোর্ট বসবে।
সঞ্জয়ের আইনজীবীরা সওয়াল করছেন মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে। সঞ্জয় নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে কাঠগড়ায়।
সঞ্জয়ের বক্তব্য শুনেছে আদালত। সিবিআই তাদের সওয়াল করেছে। সঞ্জয়ের আইনজীবীরা দাবি করেন, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়। মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে সওয়াল করেন তাঁরা।
সিবিআই জানিয়েছে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ এটি। চিকিৎসক ডিউটিতে ছিলেন। শুধু পরিবার এক জন সদস্যকে নয়, এক জন চিকিৎসককে সমাজ হারিয়েছে। কঠিন শাস্তির পক্ষে সওয়াল করা হয়।
বিচারক: আপনি আপনার কথা আগেও বলেছেন। যা হয়েছে, আপনার থেকে ভাল আর কেউ জানেন না। আপনার বাড়িতে কে আছেন?
সঞ্জয়: মা।
বিচারক: বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই?
সঞ্জয়: আমি ব্যারাকে থাকতাম। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না।
বিচারক: আপনি নির্দোষ ছাড়া কিছু বলতে চান?
সঞ্জয়: যে কাজটা করিনি তাতে দোষী বলা হচ্ছে।
এই মামলার দোষী সাব্যস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘ধর্ষণকালীন আঘাতে মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার।’’
আসামিকে আনা হয় এজলাসে। বিচারক জানতে চাইলেন নির্যাতিতার বাবা-মা এসেছেন কি না।
১২টা ৩৬ মিনিটে কোর্টরুমে ঢুকলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। শুরু হবে শাস্তি ঘোষণার প্রক্রিয়া।
শিয়ালদহ আদালতের ২১০ নম্বর কোর্টরুমে দোষীর শাস্তি শোনাবে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। তার আগে নিরাপত্তার কড়াকড়ি দেখা গেল। কোর্টরুমের বাইরে পুরুষ এবং মহিলা পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে।
আর কিছু ক্ষণ পর শুরু হবে এজলাস। কোর্টরুমে পৌঁছে গিয়েছেন দোষী সঞ্জয় রায়ের আইনজীবীরা। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা আগেই চলে গিয়েছেন এজলাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy