ছবি: সংগৃহীত।
রোজ যেমন ঢোকেন, শুক্রবারেও ঢুকেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু চত্বরে ঢুকেই থমকে যান সেখানকার এক কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’নম্বর গেট থেকে অরবিন্দ ভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে অপরিচিত যুবক-যুবতীর ভিড়। যাঁদের দেখে মোটেই ছাত্রছাত্রী বলে মনে হয়নি তাঁর। চিন্তিত মুখে তড়িঘড়ি নিজের অফিসে ঢুকে পড়েন ওই কর্মী।
শুধু ওই কর্মী নন। শুক্রবার যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বা তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেছেন, তাঁদের সকলেই এই ছবি দেখতে পেয়েছেন। পুলিশি সূত্রের খবর, ওই যুবক-যুবতীরা আসলে সাদা পোশাকের পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে যোগ দিতে আসা আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল তাঁদের। সঙ্গে ছিলেন পুলিশের অনেক বড় কর্তাও।
ঠিক এক মাস আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে আটকে রেখে তাঁকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তাঁকে উদ্ধার করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান রাজ্যপাল। তাঁর গাড়িও আটকে দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তার জেরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল প্রশাসনকে। সে-দিনের ধুন্ধুমার কাণ্ডের এক মাসের মধ্যে এ দিন ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন আচার্য-রাজ্যপাল ধনখড়।
এ দিন সকাল ১০টার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের আশপাশের দখল নেয় সাদা পোশাকের পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে ঢুকে দেখা যায়, সাদা পোশাকের বহু মহিলা পুলিশকর্মীও হাজির। প্রথম দিকে অরবিন্দ ভবনের সামনে পড়ুয়ার সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই পুলিশি প্রহরায় ১১টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ রাজ্যপালের। সংবাদমাধ্যম ছাড়া অরবিন্দ ভবনের মূল গেটের কাছে কাউকে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না পুলিশ। সংবাদমাধ্যমকে আটকানোর জন্য এক সময় দড়ি হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন পুলিশকর্মীরা।
এর মধ্যেই দেখা যায়, এক দল ছাত্রছাত্রী অরবিন্দ ভবনের সামনে বসে গান শুরু করেছেন। তটস্থ হয়ে ওঠেন পুলিশকর্মীরা। শুরু হয়ে যায় খোঁজখবর। জানা যায়, ছাত্রছাত্রীরা কোনও রকম বিক্ষোভ দেখাবেন না আচার্যকে। কিছুটা আশঙ্কামুক্ত হন পুলিশ অফিসারেরা। কিন্তু না-আঁচালে বিশ্বাস নেই। কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন এলাকার ডেপুটি কমিশনার সুদীপ সরকার-সহ পুলিশকর্তারা। এর মধ্যেই খবর আসে,
সংবাদমাধ্যমকে ডেকেছেন রাজ্যপাল। সংবাদমাধ্যম মূল ভবনের বাইরে আসতেই তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। সাংবাদিক বৈঠক শেষ করে উপাচার্যের ঘরে মধাহ্নভোজ সারেন আচার্য। এর মধ্যেই ওয়াকিটকিতে বার্তা আসে, রাজ্যপাল বেরিয়ে যাচ্ছেন। ৩টের কিছু আগেই রাজ্যপাল মূল ভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন। পুলিশি ঘেরাটোপে তাঁকে গাড়িতে তুলে দেন আধিকারিকেরা। আচার্যের গাড়ি যাদবপুর ছাড়তেই যেন হাঁপ ছাড়ল পুলিশ! এক পুলিশকর্মী বলেই ফেললেন, ‘‘যাক, এ বার অন্তত শান্তিতে সব মিটেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy