গত সপ্তাহেই ফলাও করে প্রাথমিক স্তরে পরীক্ষা পদ্ধতি বদলের ঘোষণা করেছিল পর্ষদ। বছরের শুরুতে পর্ষদের সেই ঘোষণাকে বাতিল করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের শীর্ষ স্তরে আলোচনা না করে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার কারণে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে প্রকাশ্যে ধমকও শুনতে হল মুখ্যমন্ত্রীর।
নবান্ন সভাঘরে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এক এক করে বিভিন্ন দফতর ধরে কাজের হিসাব নিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষা দফতরের পালা আসতেই প্রাথমিকে পরীক্ষা ব্যবস্থা বদলের ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রাথমিকে কোনও সিমেস্টার হবে না! কী ভাবে ওই ঘোষণা হল, কেন মুখ্যমন্ত্রীকে বা মুখ্যসচিবকে বিষয়টি জানায়নি শিক্ষা দফতর, তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে সর্বসমক্ষেই ভর্ৎসনা করেন মমতা। শিক্ষামন্ত্রী প্রথমে জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘মুখ্যসচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আপনি অনুমোদন না দিলে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে না।’’ সেই জবাব শুনে আরও ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘অনুমোদন হয়নি তো কাগজে বেরোল কী করে? যা মেসেজ (বার্তা) যাওয়ার তো চলে গেল!’’ প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক শোনার পরে ব্রাত্যকে দৃশ্যতই বিড়ম্বিত দেখিয়েছে। তবে কোনও বাক্যব্যয় না করে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, প্রাথমিকে সিমেস্টার পদ্ধতি চালু হবে না।
কেন তিনি সিমেস্টার পদ্ধতি চান না, তারও বিশদে ব্যাখ্যা দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি চাই ছাত্রছাত্রীদের ভার কমাতে। আর সেখানে কিনা সিমেস্টার? ওইটুকু ছেলেমেয়েরা টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার শিখছে। আর তাদের বলা হচ্ছে সিমেস্টার করতে! কোনও সিমেস্টার হবে না।’’ পাশাপাশিই, মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, কোনও নীতিগত প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিলে তাতে আগে তাঁর অনুমোদন নিতে হবে। আগে জানাতে হবে। নবান্নের আমলাদের একাংশের বক্তব্য, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দিষ্ট ভাবে শিক্ষা দফতরের উদ্দেশে এ কথা বললেও আসলে সব দফতরের ক্ষেত্রেই বিষয়টি প্রযোজ্য। অর্থাৎ, কোনও দফতরই নীতিগত প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরকে এড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, প্রাথমিকে সিমেস্টার পদ্ধতি চালু হলে ‘হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডে’ আর্থিক ক্ষতি হত বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই ‘হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’ চালুর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সিমেস্টার আছে, ঠিক আছে। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা অভ্যস্ত। তাই বলে প্রাথমিক স্কুলে?’’
গত শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে নতুন পদ্ধতির কথা ঘোষণা করেছিলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। নতুন পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ক্রেডিট বেসড সিমেস্টার সিস্টেম’। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের মূল্যায়ন হবে বলে জানানো হয়েছিল। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে এই পদ্ধতি চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন গৌতম। পর্ষদের তরফে এ-ও জানানো হয়েছিল যে, ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষে পুরনো পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের পাঠ্যক্রমে বদল আসবে। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের অনুমতি মিলেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার পরে সেই পর্ষদ সভাপতিই সুর বদলে ফেলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। এমনকি, নোটিফিকেশনও (সরকারি বিজ্ঞপ্তি) করিনি। সেই পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন। ৮ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত স্টুডেন্ট উইক চলছে। তার মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।’’