E-Paper

‘সাহেব’ নিয়ে ত্রস্ত কাকু, দাবি সাক্ষীর

ওই সাক্ষীর লিখিত বয়ানে প্রকাশ, অফিসের ‘রিসেপশনিস্ট’ মারফত সুজয়কৃষ্ণকে খবর দেওয়া হয়। এর পরেই অফিসের চার দিকে এবং ভিতরের সমস্ত সিসি ক‍্যামেরার ‘সুইচড অফ’ হয়ে যায় বলে দাবি উঠে এসেছে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ০৮:২৫
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু, সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় এবং অরুণ হাজরা নামে এক মিডলম‍্যানের বিরুদ্ধে প্রাথমিকের মামলায় তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। ওই চার্জশিটের সঙ্গে বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ানও আদালতে জমা দেয় সিবিআই। সেখানেই প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষের আত্মীয় তথা আপ্ত সহায়কের লিখিত বয়ানে উঠে এসেছে ২০১৭ সালের একটি সন্ধ্যার ঘটনা। বয়ানে দাবি, যার ঘটনাস্থল নিউ আলিপুরের ‘লিপস অ‍্যান্ড বাউন্ডসের’ অফিস।

ওই বয়ানের ভিত্তিতে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সে-দিন কোনও এক ‘সাহেব’ অফিসে আসছেন বলে কুন্তল, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ‍্যায় ঘনিষ্ঠ সন্তু গঙ্গোপাধ‍্যায় এবং ওই আপ্ত-সহায়ককেও কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। কুন্তলের আত্মীয় তথা আপ্ত-সহায়কের সাক্ষ‍্যের বয়ানে প্রকাশ, সুজয়কৃষ্ণ ওই সময়ে ১৫-২০ বার ফোন করে কুন্তলকে পাঁচ কোটি টাকা জোগাড় করে অফিসে নিয়ে আসার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু কুন্তল ওই টাকা জোগাড় করতে পারেননি। সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো জোগাড় হয়েছিল বলেই দাবি তদন্তকারীদের। আরও দাবি, এর পরে বাকি টাকা জোগাড় করতে সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোন করতে থাকেন কুন্তল। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সন্তু মাত্র ২২ লক্ষ টাকা জোগাড় করে কুন্তলের নিউ টাউনের 'উজ্জ্বলা' আবাসনের ফ্ল্যাটে আসেন। সন্ধ্যার পরে কুন্তল, সন্তু এবং ওই সাক্ষী সেখান থেকে নিউ আলিপুরের ‘লিপস অ‍্যান্ড বাউন্ডসে’র অফিসে গিয়ে পৌঁছন বলেও দাবি।

ওই সাক্ষীর লিখিত বয়ানে প্রকাশ, অফিসের ‘রিসেপশনিস্ট’ মারফত সুজয়কৃষ্ণকে খবর দেওয়া হয়। এর পরেই অফিসের চার দিকে এবং ভিতরের সমস্ত সিসি ক‍্যামেরার ‘সুইচড অফ’ হয়ে যায় বলে দাবি উঠে এসেছে। পাঁচ কোটি টাকা জোগাড় করতে পারা যায়নি শুনে নিজের ঘরে বসে সুজয়কৃষ্ণ অত‍্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েন বলেও তদন্তকারীদের সূত্রটি জানাচ্ছেন। তাঁর দাবি, সাক্ষী লিখিত ভাবে জানান, উত্তেজিত হয়ে সুজয়কৃষ্ণ চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘সাহেব পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছেন। আজ যে ভাবে হোক, টাকাটা সাহেবের হাতে তুলে দেওয়া চাই! নইলে ঝামেলা হবে!’’

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সাক্ষী লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, কুন্তল ও সুজয়কৃষ্ণের এই কথোপকথনের মাঝেই একজন এসে বলেন, ‘সাহেব আসছেন!’ তাতে সুজয়কৃষ্ণ অস্থির হয়ে ওঠেন এবং সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়েই ওই তিন জনকে কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন ওই সাক্ষী।

ওই সাক্ষীর বয়ানে দাবি, ‘লিপস অ‍্যান্ড বাউন্ডসে’র অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে, কয়েকটি কালো গাড়ি অফিসের দরজায় থামতে দেখেছিলেন তাঁরা। পর পর কয়েক জন ভিতরে ঢুকছিলেন বলেও দাবি। তদন্তকারীদের সূত্রটি জানাচ্ছেন, ওই সময়ও সিসি ক‍্যামেরার সুইচ বন্ধ ছিল বলেই সাক্ষীর লিখিত বয়ানে দাবি করা হয়েছে। ওই সাক্ষীর বয়ানে জনৈক ‘সাহেবের’ কথা বার বার এসেছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে প্রকাশ। সাহেবের নাম করে সুজয়কৃষ্ণ টাকা দিতে হবে বলে চাপ দিতেন বলেও সূত্রটির দাবি। সাক্ষীর লিখিত বয়ানে আরও প্রকাশ, সুজয়কৃষ্ণ বৈঠকে পরের দিকে জনৈক ‘অভিষেক’ বা ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়’কে টাকা দিতে হবে বলেও কুন্তল, শান্তনু, সন্তুদের চাপ দিতেন। ওই বৈঠকের সব কথার রেকর্ডিং তাঁর কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেছেন ওই সাক্ষী।

এই বিষয়টি নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, শুধু অভিষেক নামটা না বলে পুরো পরিচয় কেন দিতে পারল না সিবিআই? তারা কি ভয় পাচ্ছে? তাঁর আইনজীবী সঞ্জয় বসু লিখিত বিবৃতিতে দাবি করেন, “সিবিআই কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। শুধুমাত্র সাংসদ অভিষেককে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হয়েছে। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির ইডি ও সিবিআইয়ের মামলায় অভিষেককে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ উঠে আসেনি।”

সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী সোমনাথ সান্যাল বলেন, “আদালতে নানা নথি জমা হয়েছে। তা বিচার প্রক্রিয়ার অংশ। ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। সুজয়কৃষ্ণ শর্তাধীন জামিনে রয়েছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sujay Krishna Bhadra Kalighater Kaku

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy