বাংলাদেশি সন্দেহে হরিয়ানা ও ওড়িশায় ফের আটক করা হল নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিককে। স্থানীয় সূত্রের খবর, নদিয়ার চাপড়া, নাকাশিপাড়া, তেহট্ট ও কৃষ্ণগঞ্জের ৩০ জনকে দিন চারেক আগে হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে আটক করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থেকে ওড়িশার ঝাড়সুগুদায় যাওয়া ১২ জনকেও আটক করা হয়েছিল। শনিবার রাতের মধ্যে এঁদের বেশির ভাগই অবশ্য ছাড়া পেয়েছেন।
এ দিনই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম এক্স-হ্যান্ডলে নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে লেখেন, “আপনি বাংলায় এসে অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেক কথা বললেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বীরভূমের স্থায়ী বাসিন্দা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন, সুইটি বিবিদের কথা বললেন না। শুধু বাংলা বলার অপরাধে তাঁদের মতো ছ’জনকে বিজেপি-শাসিত দিল্লি থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।” বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকারের পাল্টা দাবি, “এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হাজার-হাজার বাংলাদেশিকে ঢুকতে দিয়েছেন বলেই আজ সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।”
হেনস্থা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বাংলার এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। চাপড়ার বাঙ্গালঝি এলাকার একই পরিবারের চার জনকে আটক করেছিল হরিয়ানা পুলিশ। তাঁদের এক জন, আনাজ শেখের স্ত্রী আসন্নপ্রসবা। আজ, রবিবার তাঁর প্রসব হওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির বদলে শনিবার দিনভর তিনি থানার সামনে কাটিয়েছেন। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, “আমার শারীরিক অবস্থার কথা বার বার জানিয়েও লাভ হয়নি। কেউ আমার কথাকানে তোলেনি।”
এঁদের পরিবারের বেশির ভাগই পুরনো কাগজ-ভাঙা লোহালক্কড় সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া কেউ নিরাপত্তারক্ষী, কেউ বা পরিচারিকা। ফরিদাবাদে আটক শুকুর আলি শেখের ছেলে ইমরান শেখের অভিযোগ, “বাবা-কাকারা যাতে নিজেদের বাংলাদেশি বলে স্বীকারোক্তি দেন, তার জন্য পুলিশ খুব মেরেছে। অথচ আমাদের জন্ম তো এই দেশেই!” এ দিন ছাড়া পাওয়ার পরে আনাজ শেখ দাবি করেন, “পুলিশ যাদের আটক করেছিল, তাদের মধ্যে তিন জন হিন্দু, তাদের সে দিনই ছেড়ে দেওয়া হয়। জানি না, আমরা কীঅপরাধ করলাম!”
রায়দিঘির নগেন্দ্রপুর ও নন্দকুমার পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ওড়িশার ঝাড়সুগুদায় অগ্নি নির্বাপক সংস্থার কাজে যাওয়া ১২ জনকে আটক করা হয়েছিল, তাঁরা সকলেই অবশ্য হিন্দু। কয়েক দিন আগে পুলিশ তাঁদের থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে জানতে চায় তাঁরা বাংলাদেশি কিনা। তাঁরা আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড দেখালেও, জন্মের শংসাপত্র দেখতে চাওয়া হয়। ছাড়া পেয়ে মলয় হালদার, কার্তিক ঘোষেরা বলেন, “শুধু বাংলায় কথা বলছিলাম বলেই পুলিশ আমাদের আটকে রেখেছিল।” সপ্তাহখানেক আগে এই ঝাড়সুগুদাতেই নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানের বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিককে আটকে রাখা হয়েছিল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)