E-Paper

উন্নয়ন পর্ষদে বেহাল কর্মীরাই

তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে একাধিক উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হয়েছে। সেই পর্ষদের স্থায়ী কর্মীরা ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা পাশ করে নিযুক্ত হয়েছেন। অথচ সুযোগসুবিধা অস্থায়ী কর্মীর মতো বলে আক্ষেপ কর্মীদের।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৩

—প্রতীকী চিত্র।

সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অবসরকালীন সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত রাজ্যের ১৯টি উন্নয়ন পর্ষদের প্রায় তিনশো স্থায়ী কর্মী। এঁরা প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি,লিভ এনক্যাশমেন্ট (অবসরকালীন ছুটি বিক্রির টাকা)–র সুবিধাপাচ্ছেন না। প্রশাসনের খবর, প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) চালু করতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজ্যের তদানীন্তন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব সমস্ত উন্নয়নপর্ষদের সচিবদের লিখিত নির্দেশ দিয়েছিলেন। চার বছর পার হওয়া সত্ত্বেও সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না খোদ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, “বিষয়টিজানি না। এ বিষয়ে অর্থ দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”

তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে একাধিক উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হয়েছে। সেই পর্ষদের স্থায়ী কর্মীরা ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা পাশ করে নিযুক্ত হয়েছেন। অথচ সুযোগসুবিধা অস্থায়ী কর্মীর মতো বলে আক্ষেপ কর্মীদের। বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের এক কর্মীর অভিযোগ, “আমাদের এখানে কুড়ি জন স্থায়ী কর্মী ছিলেন। অবসরকালীন সুযোগসুবিধা নেই বলে দশ জন ছেড়ে দিয়েছেন। কর্মীর অভাবে পর্ষদ ধুঁকছে।” বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের এক কর্মী গত বছর মারা যান। অভিযোগ, তাঁর পরিবার অবসরকালীন সুবিধা পাননি।

রাজ্যের উন্নয়ন পর্ষদগুলির মধ্যে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল-দুর্গাপুর, পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমানউন্নয়ন পর্ষদ, জলপাইগুড়ির গজলডোবা, কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, বীরভূমের তারাপীঠ-রামপুরহাট, পাথরচাপরি, শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন এবং বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ, বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, হুগলির ফুরফুরা শরিফ ও তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার গঙ্গাসাগর-বকখালি, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ, পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর-খড়গপুর উন্নয়ন পর্ষদ, কেশপুর লাগোয়া মোহবনি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্যদ এবং নিউটাউন-কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ আছে।

অভিযোগ, সরকারি কর্মীদের মতো গ্র্যাচুইটি, অবসরকালীন ছুটি বিক্রির টাকা, ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিম থেকেও কর্মীরা বঞ্চিত। পেনশন বিধিও চালু হয়নি। এ নিয়ে সিএজি অডিটের সময়েএকাধিকবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও টাকা না থাকার অজুহাতে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির বিষয়ে পর্ষদগুলির কর্তৃপক্ষ নির্বিকার বলেও কর্মীদের অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহবনি উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনিবাহী আধিকারিক মধুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি ২০২৩ সালে যোগ দিয়েছি। ২০২১ সালের নির্দেশিকা জানা নেই।” চ্যাংড়াবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুস্মিতা সুব্বা বলেন, “আমি সবে যোগ দিয়েছি। খোঁজ নিতে হবে।” জলপাইগুড়ির গজলডোবা উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক উৎকর্ষ খান্ডাল বলেন, “২০২১ সালের নির্দেশিকাদেখতে হবে।”

পর্ষদ কর্মীদের এই বেহাল দশা নিয়ে বিজেপির বিধানসভার দলীয় সচেতক শঙ্কর ঘোষের কটাক্ষ, “বিষয়টি রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার মতো। ডাক্তার নেই, অথচ ঝাঁ চকচকে ভবন। একই ভাবে জেলার উন্নয়নের নামে পর্ষদ গঠিত হলেও স্থায়ী কর্মীরাই সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

retirement benefits West Bengal government Employees

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy