দুর্যোগের ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে দার্জিলিং। সোমবার সকাল থেকে পাহাড়ে আর নতুন করে বৃষ্টি হয়নি। কোথায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব কষা শুরু হয়েছে। শনিবার রাতের বৃষ্টিতে আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরিক। এ ছাড়া দুধিয়া, মানেভঞ্জন, সুখিয়াপোখরির মতো ছোট জনপদগুলিতে। নতুন করে প্রতিকূল আবহাওয়া তৈরি না-হওয়ায় পর্যটকেরাও পাহাড় থেকে নামতে শুরু করেছেন।
দার্জিলিঙে প্রায় সারাবছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। পুজোর মরসুমে লম্বা ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় নাগাড়ে বৃষ্টিতে পাহাড়ের জায়গায় জায়গায় ধস নামায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পর্যটকেরা। বৃষ্টি থামতেই তাই যত দ্রুত সম্ভব শিলিগুড়িতে ফেরার চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ধসবিধ্বস্ত পাহাড়ে সব রাস্তা এখনও চালু করা যায়নি। ঘুরপথে পর্যটকদের নামতে হচ্ছে পাহাড় থেকে।
দার্জিলিং থেকে সমতলে নামার জন্য আপাতত দু’টি রাস্তা খোলা রয়েছে। হিল কার্ট রোড খোলা রয়েছে যা তিনধারিয়া হয়ে নেমে যাচ্ছে সুকনার দিকে। তার পরে সেখান থেকে রাস্তা চলে যাচ্ছে শিলিগুড়িতে। এ ছাড়া পাঙ্খাবাড়ি রোডও খোলা রয়েছে। তবে এই রাস্তাটি বেশ দুর্গম। কার্শিয়াং শহরের কিছুটা আগে থেকে রাস্তাটি নেমে যায় নীচের দিকে। তার পরে দুধিয়ার কিছু দূরে গাড়িধুরায় গিয়ে মেশে রাস্তাটি। সেখান থেকে চলে যায় শিলিগুড়িতে। দার্জিলিঙের বিজনবাড়িতে যে পর্যটকেরা আটকে ছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই পাঙ্খাবাড়ি এবং তিনধারিয়া হয়ে সমতলে নামিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে।
রবিবার রোহিণী রোড সাময়িক ভাবে খোলা ছিল। তবে সোমবার সকাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। দুধিয়ায় সেতু ভেঙে যাওয়ায় মিরিকের রাস্তাও আপাতত আংশিক বন্ধ রয়েছে। রাস্তার উপর যে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সোমবার সকালেও সেখানে পৌঁছে যান সেনা জওয়ানেরা। সেখানে সেনার তরফে প্রয়োজনে একটি বেলি ব্রিজ তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে বলে সূত্রের খবর। সিকিমের সঙ্গে সমতলের সংযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ নেই। পরিস্থিতি অনুসারে সেখান দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে সিকিম থেকে কালিম্পং-লাভা-লোলেগাঁও হয়ে শিলিগুড়ি নামার রাস্তা খোলা আছে।
আরও পড়ুন:
সোমবার সকালে দুধিয়ার কাছে ভেঙে পড়া সেতু পরিদর্শনে যান দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ। তিনি জানান, দুধিয়ার ভাঙা সেতুর এক প্রান্ত থেকে শিলিগুড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তায় কোনও সমস্যা নেই। তবে ব্রিজ ভেঙে পড়ার কারণে মিরিকের দিকে যাওয়া যাচ্ছে না। মিরিক থেকে ঘুম হয়ে যাতায়াতের রাস্তা খোলা রয়েছে। রোহিণী পয়েন্টে যেখানে ধস নেমেছে, সেখানেও রাস্তাটি বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই বলে জানান তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, “তবে এর জন্য যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে না। আমরা কার্শিয়াং থেকে পাঙ্খাবাড়ি রোড এবং হিলকার্ট রোড ব্যবহার করে লোকেদের পাঠাচ্ছি।”
ধসে বিধ্বস্ত দার্জিলিঙে আটকে থাকা মানুষদের জন্য পুলিশের তরফে একটি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “আমাদের কাছে ফোন আসছে। প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং গাইডেন্স দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা গাড়ি পাচ্ছেন না, তাঁদেরও প্রয়োজনীয় সাহায্যের চেষ্টা হচ্ছে। আটকে পড়া পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনে খাবারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যে সব এলাকাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে কিছু কমিউনিটি কিচেনও চালু করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটক সকলের জন্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কী ভাবে, কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে, কোন রাস্তা খোলা আছে, তা আমাদের সমাজমাধ্যম পাতায় জানানো হচ্ছে।”