গণস্বাক্ষর করে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনলেন বিধাননগর পুরসভার কয়েক জন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী। ওই চিকিৎসক পুরসভার শহরকেন্দ্রিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে (ইউপিএইচসি) কর্মরত। অভিযোগপত্রটি বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী-সহ একাধিক পুরকর্তা, পুর স্বাস্থ্য আধিকারিক ও একাধিক পুরপ্রতিনিধির কাছে পৌঁছেছে। যদিও ওই চিকিৎসকের দাবি, তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অভিযোগের পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
বয়সে প্রবীণ ওই চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার। তাঁর বিরুদ্ধে সেখানকারই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। কুরুচিকর মন্তব্য, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষার ব্যবহার, এমনকি, এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুসুমকুমার অধিকারী ওই চিকিৎসকের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছেন বলে খবর।
ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ১৫, ১৬, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পরিষেবা দেওয়া হয়। তাই স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই চারটি ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধিদেরও অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন। অভিযোগকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা এখনও পুলিশে অভিযোগ দায়ের না করলেও ঘটনাটি খতিয়ে দেখে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার জন্য বিধাননগরের নগরপালকে চিঠি লিখেছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি প্রসেনজিৎ নাগ। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে চিঠি লিখে জানিয়েছি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বিশাখা গাইডলাইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করা হোক।’’
অভিযোগকারী এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর দাবি, ‘‘উনি মহিলাদের সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন। খুব দুর্ব্যবহার করেন। এক বার আমাকে নির্দেশ দেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা বহিরাগত কয়েক জনকে কলকাতা ঘুরিয়ে দেখাতে। সেটা আমার কাজ নয়। ওঁরা আমাকে নৈশভোজে নিউ টাউনে নিয়ে যেতে চান। আমি সেই প্রস্তাবে সাড়া দিইনি। তখন ডাক্তারবাবুও আমাকে নৈশভোজে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন।’’
ওই চিকিৎসকের অবশ্য পাল্টা দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে আশাকর্মীদের সংগঠনের এক নেতা মিটিং করতেন। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ায় তিনিই এখন ষড়যন্ত্র করছেন বলে ওই চিকিৎসকের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আমি কাউকে নৈশভোজে যেতে বলিনি। এখানে বাইরে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নিতে আসেন অনেকে। ছ’মাস আগে কয়েক জন এসেছিলেন। আমি স্বাস্থ্যকর্মীদের বলেছিলাম হাসপাতাল ঘুরিয়ে দেখাতে। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের অভিযোগের কথা আমাকে জানাননি। এটা ষড়যন্ত্র।’’
ওই চিকিৎসক অবসরের পরে এক্সটেনশনে আছেন। বিধাননগর পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আগেও এই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। ওঁকে জেলা স্বাস্থ্য দফতর নিয়োগ করেছে। ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তারাই নিতে পারে। আমরা আগেও জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। এ বারও জানাব।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)