ওঝা হাসপাতালে এসে বলছেন, ঝাড়ফুঁকে নয়। চিকিৎসাতেই রোগ সারবে। এমনটাই হল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি থাকা এক তরুণী ও তাঁর পরিবারকে বলরামপুরের এক ওঝা এ ভাবেই আশ্বস্ত করেন। ভরসা দেন।
নেপথ্যে অন্য কাহিনি। পরিবারের দাবি, পুরুলিয়ার বোরো থানার কুলটাঁড় গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী আচমকা কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দেন। ছেড়ে দেন খাওয়াদাওয়া। ছাত্রীটিকে বলরামপুরের ওঝা মেহেতাব আনসারি কাছে নিয়ে যান আত্মীয়-পরিজনেরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সব শুনে ওঝা কুলটাঁড়ের বিধবা এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে ডাইনি বলে অপবাদ দেন। ‘ডাইনির কোপেই’ মেয়েটি অসুস্থ হয়েছে বলে ঝাড়ফুঁক করেন। তার ভিত্তিতে গ্রাম ষোলোআনা কমিটি বিধবাকে মেয়েটির চিকিৎসার খরচ দিতে বলে। তা না দেওয়ায় ২৪ অগস্ট রাতে মহিলার বাড়িতে হামলা চালায় কিছু লোক। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বাড়ি ছেড়ে পালানোয়, তাঁর বৃদ্ধা মা ও দুই দাদাকে মারধর করে সারারাত বেঁধে রাখার অভিযোগ ওঠে। পরদিন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের নেতারা বোঝানোর পরে তাঁরা মুক্তি পান।
প্রশাসন ওই তরুণীকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। ওখানে চিকিৎসক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় জানান, ছাত্রীটি মানসিক অবসাদে ভুগছেন। স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। কিন্তু পরিজনেরা তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। নয়নবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটিকে ফের ওঝার কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসা হবে না। তাই বৃহস্পতিবার ওঝাকে আনা হয়।’’ সেই ওঝা শুক্রবার বলেন, ‘‘গ্রামে ঝাড়ফুঁক করলেও মেয়েটিকে ডাক্তারের কাছেই নিয়ে যেতে বলেছিলাম। হাসপাতালেও ওঁদের বলে এসেছি, ঝাড়ফুঁকে হবে না। চিকিৎসাতেই রোগ সারে।’’ তা হলে ডাইনি অপবাদ দিলেন কেন? ওঝার দাবি, ‘‘আমি কাউকে ডাইনি বলিনি।’’ যদিও সেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এখনও গ্রামছাড়া বলে জানিয়েছেন আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর জেলা আহ্বায়ক রতনলাল হাঁসদা। তাঁর আশা, ‘‘চিকিৎসা করিয়ে ওই তরুণী সুস্থ হয়ে ফিরলে গ্রামের ভুল ধারণা ভেঙে যাবে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীও আর সমস্যায় পড়বেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy