Advertisement
০২ মে ২০২৪

জপমালা ছেড়ে অফিসবাবু সেজেও পাকড়াও শঙ্কু

পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মাথা মুড়িয়ে ফেলেছিল চেলা। কিন্তু রক্ষা পায়নি। চুল ছেঁটে, আপাদমস্তক সাজ বদলে রেহাই পেল না গুরুও। পুলিশের হাত গলে পালানোর সময় তার পরনে ছিল গেরুয়া বসন। হাতে ছিল জপমালা। সেই জপমালার ঝোলায় যে ছুপা-রুস্তম রিভলভারও ছিল, জানত মাত্র কয়েক জন। লম্বা চুল, কপালে তিলকধারী আর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরা সেই শঙ্কু পুরুতকে সোমবার বিকেলে ভিড়ে ঠাসা শিয়ালদহ স্টেশনে যখন গ্রেফতার করা হল, তখন সে শার্ট-প্যান্ট পরা দিব্যি এক অফিসবাবু!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৮
Share: Save:

পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মাথা মুড়িয়ে ফেলেছিল চেলা। কিন্তু রক্ষা পায়নি।

চুল ছেঁটে, আপাদমস্তক সাজ বদলে রেহাই পেল না গুরুও।

পুলিশের হাত গলে পালানোর সময় তার পরনে ছিল গেরুয়া বসন। হাতে ছিল জপমালা। সেই জপমালার ঝোলায় যে ছুপা-রুস্তম রিভলভারও ছিল, জানত মাত্র কয়েক জন। লম্বা চুল, কপালে তিলকধারী আর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরা সেই শঙ্কু পুরুতকে সোমবার বিকেলে ভিড়ে ঠাসা শিয়ালদহ স্টেশনে যখন গ্রেফতার করা হল, তখন সে শার্ট-প্যান্ট পরা দিব্যি এক অফিসবাবু!

পুলিশ যাতে চিনতে না-পারে, সেই জন্য চেলা শ্যামল কর্মকারকে তারাপীঠে নিয়ে গিয়ে চুল-দাড়ি কামিয়ে ভোল পাল্টে দিয়েছিল তার গুরু শঙ্কু পুরুতই। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বামনগাছির কলেজছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শ্যামলকে রামপুরহাট স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু শ্যামলের আশ্রয়দাতা শঙ্কু পুরুত ওরফে শিশির মুখোপাধ্যায় সে-যাত্রা পুলিশের জাল কেটে উধাও হয়ে গিয়েছিল।

এত দিন কোথায় ছিল শঙ্কু?

পুলিশ জানায়, শঙ্কু এত দিন উত্তরবঙ্গে গা-ঢাকা দিয়ে ছিল। কয়েক দিন আগে তা জানতে পেরে উত্তরবঙ্গের সেই বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। জেরায় শঙ্কু পুলিশকে জানিয়েছে, এ ভাবে ঘুরতে ঘুরতে তার হাতের টাকা ফুরিয়ে যায়। মূলত টাকার জন্যই সে ফিরে আসে কলকাতায়। গা-ঢাকা দিয়ে থাকার সময়েই নিজের ভোল পাল্টে ফেলে সে। ঘাড় ছাপানো চুল আর মুখ-ভর্তি দাড়ি কেটে, ফোঁটা-তিলক মুছে, গেরুয়া পোশাক পাল্টে পরে নেয় সদ্য কেনা সাদার উপরে হাল্কা সবুজ চেকের হাফহাতা জামা আর কালো ফুলপ্যান্ট।

শঙ্কু শিয়ালদহে ঢুকেছে জানার পরে তাকে ধরার জন্য পুলিশের একটি দল ওত পেতে ছিল প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু সে পুরুতের ভোল পাল্টে অফিসবাবু সেজে ভিড়ে মিশে থাকায় তদন্তকারীরা প্রথমে কিছুটা ধন্দে পড়ে যান। পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই পুলিশের সামনে থেকে কুয়াশার পর্দা সরে যায়। হাতকড়া পরানো হয় বহুরূপী শঙ্কুকে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “সৌরভকে খুনের ঘটনায় সরাসরি না-থাকলেও খুনিদের পালানোর কাজে সাহায্য করায় শঙ্কুর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

সৌরভের হত্যাকাণ্ডে শঙ্কুকে নিয়ে এ-পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হল বলে তদন্তকারীরা জানান। তবে বামনগাছিতে সৌরভের এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শ্যামল-শঙ্কুদের মদতদাতাদের এখনও পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদও করেননি তদন্তকারীরা। পুলিশের একাংশ বলছে, বেলেঘাটা ও বামনগাছি এলাকার কয়েক জন তৃণমূল নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে শঙ্কুর। শ্যামলের মতো বেশ কিছু দুষ্কৃতীর সঙ্গেও তার নিত্য ওঠাবসা। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, নেতা ও দুষ্কৃতীদের মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করে শঙ্কু। এবং সেই সূত্র ধরেই সে এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ, বামনগাছি-দত্তপুকুর এলাকার চোলাই-সাট্টা-গাঁজার ঠেক থেকেও ‘হপ্তা’ পায় শঙ্কু। এই টাকার একটি অংশ সে দিত তাদের মদতদাতাদেরও। দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে এ দিন বারাসতে মিছিল করে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে কংগ্রেস।

যারা দুষ্কৃতীদের মদত দেয়, পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেন?

জেলার পুলিশকর্তারা জানান, ধৃত দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে মদতদাতাদের সবিস্তার তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। জেরা করা হচ্ছে শঙ্কুকেও। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কোনও নেতার যোগাযোগের প্রমাণ মিললে তাঁকেও ধরা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE