সোনাগাছি-সহ কলকাতার বিভিন্ন এলাকার যৌনকর্মীদের জন্য মঙ্গলবার বিশেষ শিবির করবে নির্বাচন কমিশন। তার আগে সোমবার এসআইআরের ফর্ম পূরণের মহড়া হয়ে গেল সুতানুটিতে। আর সেখানেই দাবি করা হল, এসআইআর আবহে নানা ধরনের প্রচার যৌনকর্মীদের আতঙ্কিত করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে অভিনেতা-পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্যের গানের দল ‘হুলিগানিজ়ম’-এর গানও।
সরাসরি অনির্বাণ বা তাঁর গানের দলের নাম করা হয়নি। তবে যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘আমরা পদাতিক’-এর সম্পাদক রতন দলুই বলেন, ‘‘এখন সকলের হাতে হাতে ফোন। অনেক প্রচার যৌনকর্মী দিদিদের আতঙ্কিত করছে। এসআইআর নিয়ে তো গানও বেরিয়ে গিয়েছে। কী যেন...‘এসআইআর কী বলছে? ঝাড়াই-বাছাই চলছে’।’’ কয়েক মাস আগে অনির্বাণদের এই গানের বিভিন্ন অংশ (ক্লিপ) সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। ফলে নাম না-করলেও ইঙ্গিত যে সে দিকেই, তা স্পষ্ট।
যৌনকর্মীদের নথিসংক্রান্ত বাস্তব সমস্যার কথা জানিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালকে চিঠি লিখেছিল ‘আমরা পদাতিক’-সহ তিনটি সংগঠন। তার পরেই উদ্যোগী হয়েছিল কমিশন। সূত্রের খবর, কমিশনের আধিকারিকেরা সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলিকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন, বিহারেও যৌনপল্লি রয়েছে। কিন্তু সেখানে এই ধরনের উদ্যোগ কোনও সংগঠনকেই নিতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন:
সোমবার সকাল থেকেই সৌনাগাছির বিভিন্ন বাড়িতে যৌনকর্মীদের কাছে গিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রচার সারছে সংগঠনগুলি। অনেকেই এমন আছেন, যাঁরা আসল পরিচয় গোপন করে এই পেশায় রয়েছেন। তাঁরাও যাতে নির্ভয়ে মঙ্গলবারের বিশেষ শিবিরে অংশ নেন, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে সংগঠনগুলি। তার জন্য পরিকাঠামোও রাখা হচ্ছে। পর্দা ঘেরা জায়গায় যাতে কমিশন নিয়োজিত আধিকারিকদের সঙ্গে নির্ভয়ে যৌনকর্মীরা কথা বলতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন ‘আমরা পদাতিক’-এর মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার খানিক ক্ষণের জন্য সিইও মনোজও সোনাগাছির শিবিরে থাকতে পারেন বলে তাঁরা মনে করছেন।
সোনাগাছিতে এখন যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তাঁদের মধ্যে হাজারতিনেক যৌনকর্মী প্রত্যহ পেশার জন্য সেখানে আসেন। কাজের শেষে আবার বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এমন হাজারসাতেক যৌনকর্মী আছেন, যাঁরা সোনাগাছিতেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন বছরের পর বছর ধরে। অধিকাংশেরই ভোটার পরিচয়পত্র কার্ড রয়েছে। তাঁরা ভোটও দেন। কিন্তু ২০০২ সালের নথি জোগাড় করতে তাঁরা অপারগ। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলির বক্তব্য, এই মহল্লায় অন্তত ১,৪০০ যৌনকর্মী রয়েছেন, যাঁদের নথি সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। কালীঘাট এবং খিদিরপুরের যৌনপল্লিতে সেই সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি তাদের। সোনাগাছির যৌনকর্মীদের এসআইআর-আতঙ্কের কি অবসান হবে? তার অনেকটাই নির্ভর করছে মঙ্গলবার বিশেষ শিবিরের উপর।