মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারীকে সরিয়ে তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি করা হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে নতুন সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ ১৮ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রামের সভা সফল করা। সেই সভা সফল করতে সদ্য পদচ্যুত সভাপতি শিশির অধিকারীর ‘সহযোগিতা’রও প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন সৌমেন। নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় কি শিশিরকে ডাকা হবে? উত্তরে আনন্দবাজার ডিজিটালকে সৌমেন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমার শিশিরবাবুকে ডাকার প্রশ্ন নেই। তিনিই আমাকে ডাকবেন। শিশিরবাবু তো আমাদের চেয়ারম্যান। তাঁর অধীনস্থ সভাপতি আমি।’’ সৌমেন আরও বলছেন, ‘‘এতদিন তো তাঁর নেতৃত্বেই দল চলেছে। শিশিরবাবু এখন আমাদের চেয়ারম্যান। তাই তাঁর নির্দেশেই আমরা সব করব।’’ উল্লেখ্য, পুত্র শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের আগে থেকেই দলীয় কর্মসূচি থেকে কার্যত ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল শিশিরকে। ‘নাম কা ওয়াস্তে’ কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাতে ‘আন্তরিকতা’র ঘাটতি ছিল বলে মনে করেছেন কাঁথির শান্তিকুঞ্জের বাড়ির অধিপতি।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নতুন কোর কমিটি ঘোষণা করে যে শিশিরের ডানা ছাঁটা হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সৌমেন মুখে শিশিরের অধীনে চলার কথা বললেও সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে তাঁকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হবে না, তা সম্যক বুঝতে পারছেন অধিকারীরা। কারণ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে সৌমেন অধিকারী পরিবারের বিরোধী বলেই পরিচিত। গত ১৯ ডিসেম্বর শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরদিনই তৃণমূল ভবনে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তাঁর আসন বদল নিয়ে নাম না করে শুভেন্দুকে দায়ী করেছিলেন সৌমেন। বলেছিলেন, ‘‘কারও কারও আপত্তিতেই আমাকে তমলুক থেকে পিংলা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
শুভেন্দু দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার সময় থেকেই তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশে কাঁথির সাংসদকে বাদ দিয়েই সাংগঠনিক কাজকর্ম করছিলেন অখিল গিরি, জ্যোতির্ময় করেরা। শেষপর্যন্ত গত মঙ্গলবার দীঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে শিশিরকে সরানো হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তাঁর জায়গায় আনা হয় অখিলকে। তার পরে শিশিরকে সভাপতি পদ থেকে সরানো ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। শিশিরবাবুর পাশাপাশি তাঁর সাংসদ পুত্র দিব্যেন্দুকেও উপেক্ষার পথে হেঁটেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের নেতারা।