Advertisement
E-Paper

ছোট পদক্ষেপ রুখতে পারে উষ্ণায়ন-বিপদ

রোজ বাড়ি থেকে দমদম মেট্রো স্টেশনে যাতায়াতের জন্য স্কুটার বা অটোয় চাপেন না তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক পুনর্বসু চৌধুরী সাইকেল চালিয়েই এই পথে আসা যাওয়া করেন।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৮

রোজ বাড়ি থেকে দমদম মেট্রো স্টেশনে যাতায়াতের জন্য স্কুটার বা অটোয় চাপেন না তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক পুনর্বসু চৌধুরী সাইকেল চালিয়েই এই পথে আসা যাওয়া করেন। নিজের দফতরের সব বাতি এলইডি করে দিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। শুধু তাই নয়, এখনও সময় পেলেই নিজের এলাকায় গাছ লাগান তিনি।

মনে হতেই পারে, এগুলো লোক দেখানো চেষ্টা মাত্র। কিন্তু পরিবেশবিদেরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নকে রুখতে বড় ব়ড় পরিকল্পনার পাশাপাশি জীবনচর্যায় এমন ছোট ছোট চেষ্টাও জরুরি। ‘ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে। এই হারে তাপমাত্রা বা়ড়তে থাকলে আগামী ১২ বছরের মধ্যে বড় দুর্যোগ ঘনিয়ে আসতে পারে দুনিয়াজুড়ে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য সব থেকে বড় কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন। যার পিছনে দায়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জীবাশ্ম জ্বালানির ধোঁয়া। ক্রমাগত কমতে থাকা গাছের সংখ্যাও এই বিপদ বাড়াচ্ছে।

এ সব মাথায় রেখেই আমেরিকার এক পরিবেশ বিজ্ঞানী যেমন কোথাও সেমিনার বা বক্তৃতা দিতে গেলে এক সঙ্গে অনেক কাজ নিয়ে যান। তার যুক্তি, এক বার প্লেনে চাপলে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড বেরোয়। তাই এক বারে অনেক কাজ সেরে নেওয়ার চেষ্টা করি।

গণ পরিবহণের ব্যবহার বা়ড়লে মাথাপিছু কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমে। এ যুক্তিতেই পরিবেশবিজ্ঞানী পুনর্বসু নিজের গাড়ির বদলে রোজ মেট্রো এবং বাসে চেপে বাড়ি থেকে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে যাতায়াত করেন। শুধু তাই নয়, জল, বিদ্যুৎ, কাগজের অপচয় রোখার উপরেও জোর দিচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘‘এ সব কিছুর জন্যই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কার্বন নির্গমন হয়।’’

দূষণের দাওয়াই

• এলইডি বাতি ব্যবহার করতে হবে।

• অযথা বিদ্যুৎ অপচয় করা যাবে না।

• গণ পরিবহণ ব্যবহার করুন।

• জল বাঁচান।

• সৌরশক্তি ব্যবহার করুন।

রোজকার অফিসে গাড়ি চেপে গেলেও ছুটির দিনে কোথাও যাতায়াত করতে বাস-ট্রেন ব্যবহার করেন কল্যাণবাবু। জোর দেন গাছ লাগানোর উপরে। কয়েক বছর আগে বাড়ির সামনে একটা বট গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। সেই গাছ আজ মহীরূহ হয়েছে। প্রবীণ পরিবেশবিদ বলছেন, ‘‘৫ জনের পরিবারের সারা বছরের অক্সিজেন দেয় ওই গাছ।’’ বলছেন, ‘‘প্রত্যেকে যদি পা়ড়ায় একটি করে গাছও লাগায় সেটাও অনেক
উপকার করবে।’’

শক্তির অপচয় রুখতে চেয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত যেমন আবার বাড়িতে সারাক্ষণ এসি ব্যবহারের ঘোর বিরোধী। তিনি নিজেও ওই যন্ত্র পারতপক্ষে ব্যবহার করেন না। বিদ্যুতের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একটু ‘কৃপণ’ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। হাতে সময় থাকলে দিল্লি, মুম্বই যাতায়াতের জন্য ট্রেনই তাঁর প্রথম পছন্দ।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, ফাঁকা ঘরে আলো, পাখা না চালানোও যে পরিবেশ বাঁচায় সেটা অনেকেই তলিয়ে ভাবেন না। অথচ এক ঘণ্টা আলো জ্বললে বা পাখা ঘুরলে কতটা কয়লা পোড়ে বা কতটা কার্বন বাতাসে মেশে সেটা ভাবলেই তো গায়ে কাঁটা দেয়। পুনর্বসুর মতে, বাড়িতে ছোট খাটো কাজে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেতেই পারে। তাতেও পক্ষান্তরে তাপবিদ্যুৎ কম তৈরি হয়। এই লক্ষ্য নিয়েই প্রতি বছর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রাজ্যে স্কুল, কলেজ, সরকারি দফতরে সৌর শক্তির প্যানেল বসাচ্ছে।

Steps Global Warming IPCC Tree Plantation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy