ভূস্বর্গে ফিরেছে সন্ত্রাস। তার রেশ পড়তে শুরু করেছে পর্যটন শিল্পে।
নব্বইয়ের দশকের অশান্ত কাশ্মীরের ভয়ের পরিবেশকে দূরে সরিয়ে গত কয়েক বছরে যে ভাবে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল, মঙ্গলবারের জঙ্গি হানার ঘটনার পরে সেখানে বড় বদল আসতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছে ভ্রমণ সংস্থাগুলি। কলকাতার একটি প্রথম সারির ভ্রমণ সংস্থার কর্তা সৌমিত্র কুণ্ডু বলছেন, ‘‘২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরে, কোভিডের সময়টুকু বাদ দিলে যে ভাবে কাশ্মীরে পর্যটনের জোয়ার এসেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল যে, আশির দশকের সুদিন ফিরে আসছে। কিন্তু এ বার যে আতঙ্কের পরিবেশের সৃষ্টি হল! আগামী কালই আমাদের একটি দলের কাশ্মীর যাওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল হয়েছে। আগামী মাসেও তিনটি দলের যাওয়ার কথা, সেগুলি পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অগস্ট-সেপ্টেম্বরের দলগুলিকে নিয়ে এখন ভাবতে হবে।’’ তবে এই পরিস্থিতিতে তুলনায় ছোট ভ্রমণ সংস্থাগুলি বড় আতান্তরে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সৌমিত্রের ব্যাখ্যা, কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতা সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ায় অনেক ছোট ভ্রমণ সংস্থার ব্যবসার অধিকাংশই কাশ্মীরের উপরে নির্ভরশীল। তাঁর কথায়, ‘‘কাশ্মীরের বিকল্প কিছু তো নেই। তাই অন্য কোনও জায়গাকে তুলে ধরতে অনেকেরই সময় লাগবে।’’
‘অ্যাসোসিয়েশন অব টুরিজ়ম সার্ভিস প্রোভাইডার অব বেঙ্গল’–এর সেক্রেটারি তথা শহরের হোটেল ব্যবসায়ী সমীর ঘোষ তাকিয়ে জুলাইয়ে অমরনাথ যাত্রার দিকে। ওই যাত্রার জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছিল। ফলে সরকার এ নিয়ে কী নির্দেশিকা দেয়, তা দেখে নিতে চাইছেন তিনি। বলছেন, ‘‘অনেক সংস্থা জানিয়েছে, কাশ্মীর ভ্রমণ বাতিল করতে হচ্ছে। অনেক পর্যটক আবার ওদের মারফৎ হোটেলে টাকা দিয়ে বসে আছেন। তাঁরা সেই সব টাকা ফেরৎ পাবেন কি না, জানা নেই। না পেলে আগামী দিনে অনেকে কোর্টকাছারিও করতে পারেন।’’
তবে কাশ্মীরে পর্বতারোহণ বা ট্রেকিংয়ে যাওয়ার প্রবণতা হঠাৎ কমে যাবে বলে মনে করছেন না পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার। বছর দুয়েক আগে কাশ্মীরেরই ব্রহ্মা শৃঙ্গে সফল আরোহণ করে হইচই ফেলেছিল তাঁর দল। এ দিন রুদ্র বলেন, ‘‘অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষেরা এত সহজে পিছিয়ে আসবেন না। দু’-তিন মাস পরে কাশ্মীর থেকেই আমাদের পরবর্তী শৃঙ্গাভিযান শুরুর কথা। এখনও পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বদলানোর কথা ভাবিনি। কোনও জঙ্গি-হানা কাশ্মীরের পাহাড়ের টানকে ম্রিয়মাণ করতে পারবে না। আর সাহসী লোকেরা যেতে শুরু করলে হয়তো তাঁদের দেখাদেখি পর্যটকেরাও ভূস্বর্গে ফিরতে ভরসা পাবেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)