মহরমের সন্ধ্যায় ফিলিপস মোড় আটকে গাড়ির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এক মুঠো জনতা। উড়ছে মুঠো মুঠো আবির। এক ঘণ্টার নোটিসে তৈরি করা কাট-আউট নিয়ে ডুগি-তাসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গলা তুলে স্বাগত জানাচ্ছে আর এক ঝাঁক যুবক।
গাড়ির দরজা খুলে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি আর সাদা চটি বেরোতেই ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে ফুল। হাঁটাচলার গতি একটু শ্লথ। ঠিক যেন ‘সন্ন্যাসী রাজা’র পুনরাভিনয়! ভাওয়াল সন্ন্যাসীর বেশে রাজা সূর্যকিশোর ফিরে এসেছেন শুনে ভিড় করেছে তাঁর গুণমুগ্ধের দল।
কুড়ি বছর পরে ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে এ ভাবেই বিধান ভবনে শুক্রবার সন্ধ্যায় পা রাখলেন সোমেন মিত্র। রাজা সূর্যকিশোরের মতোই এ বাড়িও ‘ছোড়দা’র বলেই জানে সকলে। বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান তিনিই। এত দিন বাড়ির উপর তলায় ট্রাস্টের ঘরটাতে আসতেন। এ বার ফিরে পেলেন প্রদেশ সভাপতির ঘর। ফিরে এল কংগ্রেস-সুলভ বিশৃঙ্খলাও!
‘সন্ন্যাসী রাজা’র সেই উত্তম কুমারের মতোই প্রত্যাবর্তন পরবর্তী সোমেনবাবু দু’হাত জোড় করে বলছেন, ‘‘কুড়ি বছর আগে পদত্যাগ করে চলে গিয়েছিলাম। রাহুল গাঁধী এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব আমার প্রতি আবার আস্থা দেখিয়েছেন। ওঁদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে হবে।’’ ইতিহাস বলছে, সরিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী, ফিরিয়ে আনলেন রাহুল। আর সোমেনবাবু বলছেন, ‘‘এর মধ্যে অনেকে চলে গিয়েছেন। এখন তৃণমূলে আছেন, এমন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে। একা কিছু করা যাবে না। অনেক মতপার্থক্য, ভুল বোঝাবুঝি সরিয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস পরিবারের জন্য কাজ করতে হবে।’’ হর্ষধ্বনি উঠল ভিড় থেকে।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস মুর্শিদাবাদে ফের ফিরবে: অধীর
দীর্ঘ দিনের সঙ্গী বাদল ভট্টাচার্য বিকেল থেকে বিধান ভবনের লনে বসেছিলেন চেয়ার পেতে। সেই পুরনো স্লোগান ‘সোনার বাংলার সোনার ছেলে সোমেন মিত্র জিন্দাবাদ’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস ভরিয়ে দেদার হুল্লোড়ের মধ্যে নতুন সভাপতির পা-ই গেল ছ়ড়ে! সংবাদমাধ্যমের বাইট-আবদার মেটাতে মেটাতে সোমেনবাবু পায়ের জ্বালার কথা জানালেন বাদলবাবুকে। বন্ধুর জন্য দ্রুত ডেটল আর তুলো আনানোর ব্যবস্থা করলেন বাদলবাবুই।
তাঁর আশু পরিকল্পনা কী? বিধান ভবনে একটু থিতু হতে হতে সোমেনবাবু বললেন, ‘‘তিন ঘণ্টাও তো হয়নি এখনও। গৌরব (এআইসিসি-র তরফে বাংলার ভারপ্রাপ্ত নেতা গৌরব গগৈ) ফোন করে খবর দিল। কর্মীরাই কংগ্রেসের সব। সকলকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেসকে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করানোই প্রধান কাজ।’’ প্রসঙ্গত, রাহুলের দূত গৌরবও ইদানীং এই কথাটাই বলেন।
অল্প দিন হল দিল্লির এইম্স থেকে ফিরেছেন কঠিন শারীরিক সমস্যার সঙ্গে যুদ্ধ করে। বিধান ভবনের লিফ্ট বন্ধ থাকায় উপরে উঠতেও পারেননি প্রথম দিন। কংগ্রেসে অধীর চৌধুরীর উত্থান এক কালে সোমেনবাবুর হাত ধরেই। শিষ্যকে সরিয়ে গুরু ফের সভাপতি হওয়ার পরে দু’জনে কথা হল? সোমেনবাবু হাসলেন, ‘‘আরে, আমার মোবাইলটাই তো আমার কাছে নেই! কথা হয়নি এখনও।’’ বহরমপুর থেকে সদ্যপ্রাক্তনেরও জবাব আসছে, ‘‘নাহ্! কথা হয়নি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy