Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বারবার কি আর ভুল হয়, প্রশ্ন সোমনাথদের

CPM's decisionবর্ষীয়ান নেতা সোমনাথবাবু যেমন সিপিএমের এই সিদ্ধান্তে ‘ব্যথিত’। হতাশ কণ্ঠে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বারবার করলে তাকে কি আর ভুল বলে? এটা তো মনে হচ্ছে সচেতন ভাবে করা হচ্ছে। এই ভাবে চললে দলটার অস্তিত্ব থাকবে?’’

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩২
Share: Save:

দশকের পরে দশক পেরোয়। বদলায় না কিছু! এই পথেই সিপিএম এখন ভুলের পাহাড়ে চড়ে বসেছে বলেই মনে করছেন দলের প্রাক্তন নেতারা!

নয়ের দশকে জ্যোতি বসুকে যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আপত্তিতে। তার পরে ২০০৮ সালে পরমাণু চুক্তির মতো আম জনতার কাছে দুর্বোধ্য বিষয়কে হাতিয়ার করে মনমোহন সিংহের সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিলেন প্রকাশ কারাটেরা। লোকসভার স্পিকার পদ না ছাড়ায় পত্রপাঠ বহিষ্কার করা হয়েছিল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। এ বার কংগ্রেসের সমর্থন নিতে আপত্তি দেখিয়ে রাজ্যসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে ফের প্রার্থী করতে অস্বীকার করেছেন কারাটেরা। যার জেরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে দলের ভিতরে ও বাম মহলে।

বর্ষীয়ান নেতা সোমনাথবাবু যেমন সিপিএমের এই সিদ্ধান্তে ‘ব্যথিত’। হতাশ কণ্ঠে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বারবার করলে তাকে কি আর ভুল বলে? এটা তো মনে হচ্ছে সচেতন ভাবে করা হচ্ছে। এই ভাবে চললে দলটার অস্তিত্ব থাকবে?’’ প্রাক্তন স্পিকারের আরও আক্ষেপ, ‘‘এই দলটা করেছি ৪০ বছর। এ সব দেখতে কষ্ট হয়!’’ তাঁর বিস্ময়, সংসদীয় গণতন্ত্রে আছে, দেশের রাজনীতির কী অবস্থা, সবই সিপিএমের জানা। তবু তারা সীতারামকে সংসদে পাঠাবে না?

তাঁকে কী ভাবে এই দল থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল, সেই কাহিনি আজও ভোলেননি সোমনাথবাবু। তাঁর কথায় বুধবারও বেরিয়ে এসেছে সেই যন্ত্রণা। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলে সিপিএমের বহু কর্মী-সমর্থকও সোমনাথবাবুর প্রসঙ্গ টেনে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বাস্তববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর কথা। কারাটেরা ইউপিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরে কংগ্রেসের হাত ধরে
২০০৯-এর লোকসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ১ থেকে ১৯ আসনে পৌঁছেছিল। সুভাষবাবু তখন বলেছিলেন, কারাটের মতো তাত্ত্বিক নেতাদের উচিত ভোটে লড়ে আসা। জনতা ও মাটি থেকে দূরে থাকা নেতাদের হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ থাকলে পরিণতি দুঃখজনক হতে বাধ্য।

আর এক প্রাক্তন নেতা সমীর পূততুণ্ডের মত, বার বার ভুল করেও রাজনৈতিক অবস্থানে মৌলিক কোনও পরিবর্তন আনতে পারেনি সিপিএম। ভুলের পাহাড়ে তারা চ়ড়ে বসায় দলের
মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, বাম আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমীরবাবুর এখনকার দল পিডিএস সিপিএমের সঙ্গেই আন্দোলনের মঞ্চে আছে। বৃহত্তম বামপন্থী দল হিসাবে সিপিএম ভুল করলে বাম আন্দোলন ধাক্কা খায় বলেই
তিনি প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করছেন, যুক্তি সমীরবাবুর। সোশ্যাল মিডিয়ার নানা স্তরেও বাম সমর্থকেরা উগরে দিচ্ছেন ক্ষোভ। লেনিনকে উদ্ধৃত করে কেউ মনে করাচ্ছেন, ‘তুমি যদি প্রয়োজনে লাইন পরিবর্তন করতে প্রস্তুত না থাকো, শত্রুকে তোমার দিকে টানতে তার সঙ্গে সমঝোতা করতে
না পারো, তা হলে তুমি কোনও বিপ্লবী পার্টির নেতা হওয়ার যোগ্য নও’!

আর স্বয়ং ইয়েচুরি? দলের সাধারণ
সম্পাদকের চেয়ারে বসে তাঁকে বলতে হচ্ছে, ‘‘সাংসদ হওয়া বা পাটিগণিতের চেয়েও দলটায় এখনও রাজনৈতিক আদর্শ, নৈতিকতাই গুরুত্বপূর্ণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE