Advertisement
E-Paper

হিমঘরের ইলিশই জামাইয়ের পাতে দিতে হবে এ বার

প্রজননের মরশুম বলে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ দু’মাস সমূদ্রে জাল ফেলা নিষিদ্ধ।

সমর বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ২০:৩২
সমূ্দ্রে ধরা পড়ার পর ইলিশ বাজারে পাঠানোর প্রস্ততি।  —ফাইল চিত্র।

সমূ্দ্রে ধরা পড়ার পর ইলিশ বাজারে পাঠানোর প্রস্ততি। —ফাইল চিত্র।

ভাপা, পাতুরি, কিংবা নেহাত সাদামাটা ভাজা। যে ভাবেই হোক, ইলিশের স্বাদ আর গন্ধে ভোজন রসিক বাঙালি মাত্রই জিভে জল আসে। আর ইলিশের কোনও পদ না হলে তো জামাইষষ্ঠীই কার্যত অসম্পূর্ণ। কিন্তু এ বছর জামাইয়ের পাতে পড়বে না টাটকা ইলিশ।

পরিবর্তে স্টোরের পুরনো ইলিশ দিয়েই জামাইষষ্ঠীর পদ রাঁধতে হবে শাশুড়িদের। এ মরশুমে কার্যত ইলিশ ধরা শুরুই হয়নি। তার উপর প্রতিকূল আবহাওয়া। তাই বাজারে গিয়ে মাছ বিক্রেতা যতই নামখানা বা দিঘার টাটকা ইলিশ বলে থলেয় দিতে চান না কেন, জানবেন, ওটা নির্ঘাত আগের বছরের মজুত করে রাখা ইলিশ।

প্রজননের মরশুম বলে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ দু’মাস সমূদ্রে জাল ফেলা নিষিদ্ধ। সেই সময়সীমা পেরিয়ে এই শনিবার থেকেই গভীর সমূদ্রে রওনা দিয়েছে মাছ ধরার ট্রলারগুলি। কাকদ্বীপ, নামখানা, দিঘা, হলদিয়া, রায়দিঘি থেকে কয়েক হাজার ট্রলার সমূ্দ্রে মাছ ধরতে শুরু করছে। দু’-তিন দিনের আগে সব ট্রলার ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম। আবার এখনও বর্ষা পুরোদমে শুরু হয়নি। ইলিশের মরশুমও সে ভাবে শুরু হয়নি। মাঝে একদিন পর মঙ্গলবারই জামাইষষ্ঠী। ফলে ইচ্ছে থাকলেও এ বছরের টাটকা ইলিশ জামাইষষ্ঠীর মেনুতে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই জানাচ্ছেন মৎস্যজীবী এবং মাছ ব্যবসায়ীরা।

সমূদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে জাল পরীক্ষা করে নিচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। —নিজস্ব চিত্র

তবে উপকূল থেকে দেখা রাতের সমূদ্রে মাছের ট্রলারগুলির ক্ষীণ আলোর মতোই সামান্য আশার কথা শোনালেন দিঘা মৎস্যজীবী সমিতির সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস। তিনি জানালেন, ‘‘সোমবার কয়েকটি ট্রলার ফিরতে পারে। সমূদ্রে থাকা মৎস্যজীবীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, মাছ ধরার অনুকূল পরিবেশই নেই সমূদ্রে। বর্ষা শুরু না হওয়ায় এখনও বিশাল বিশাল ঢেউ। জাল ফেলতে এবং তুলতে সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১০-১৫ টনের বেশি ইলিশ উঠবে না। আর সেটা চাহিদার তুলনায় নগন্য বললেও কম বলা হবে। অন্য মাছের অবস্থাও একই রকম। জামাইষষ্ঠীর আগে পরিস্থিতি বদলের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’’

ডায়মন্ড হারবারের মাছের আড়তদার বিজয় সিং জানালেন, এ মরশুমে এখনও মাছ তোলা শুরুই হয়নি। সবে মৎস্যজীবীরা সমূদ্রে গিয়েছেন। কয়েকটি ট্রলার ফিরে এলেও মাছের পরিমাণ খুবই সামন্য। ইলিশ তো প্রায় হাতে গোনার মতো অবস্থা। আবহাওয়া একেবারেই ইলিশ ধরা পড়ার অনুকূল নয়।

আরও খবর: হাঁসফাঁস গরম থেকে মুক্তি মিলল, কিন্তু এ বৃষ্টি সাময়িক

তাহলে উপায়? বিকল্প হিসাবে ভরসা সেই স্টোরে মজুত করে রাখা গত বছরের ইলিশ। ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস জানালেন, ‘‘কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার পাঁচ-ছ’টি স্টোরে নামখানা, ডায়মন্ড হারবার, দিঘা তো বটেই রয়েছে মায়ানমারের ইলিশও। কিন্তু সেগুলি সবই গতবারের। এবারের ইলিশ এখনও প্রায় ধরাই শুরু হয়নি। ফলে জামাইষষ্ঠীতে বাজারে যে ইলিশ থাকবে, তার সিংহভাগই গতবারের ইলিশ।’’

ইলিশ সম্পর্কে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা জানেন, পূবালি বাতাস আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি (যার অন্য নাম ইলশেগুঁড়ি) হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে জালে পড়ে জলের রুপোলি শস্য। সাধারণত বর্ষার মরশুমে নিম্নচাপ তৈরি হলে এই রকম আবহাওয়া তৈরি হয়। এখনও সে পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আপাতত সেই আবহাওয়ার দিকেই তাকিয়ে মৎসজীবীরা। অপেক্ষায় ভোজনরসিক বাঙালিও।

আরও খবর: প্যাকেজ পৌঁছচ্ছে কি? যাচাইয়ে জঙ্গলমহলে জ্যোতি

ভোজনরসিক এবং ইলিশপ্রেমী হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে টলিউড অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর। তাঁর কাছে অবশ্য ইলিশ-ইলিশই। বললেন, ‘‘ইলিশ হচ্ছে দার্জিলিংয়ের মতো। যে মরশুমে, যেমন আবহাওয়াই হোক, দার্জিলিং যেমন সবসময়ই সুন্দর, ইলিশও সেরকম। ভাপা, পাতুরি কিংবা বেগুন দিয়ে পাতলা ঝোল, যেভাবেই রান্না হোক, গন্ধ পেলেই আমার জিভে জল এসে যায়। টাটকা নাকি স্টোরের, এসব না ভেবে ইলিশটাকে জাস্ট এনজয় করি।’’

Ilish Hilsa Bay of Bengal Jamai Shashthi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy