Advertisement
E-Paper

আয় বেঁধে বেঁধে থাকি, এক ঠাঁই ছায়া-রহিলার

দুই বাড়ির দূরত্ব কত হবে? ছেলেবেলায় তিন লাফে এ দরজা থেকে ও দরজায় পৌঁছে যেত ওঁদের সন্তানেরা।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৬:৩২
বিকাশের দোচালায় আশ্রয় সৌরভ শেখের পরিবারের।

বিকাশের দোচালায় আশ্রয় সৌরভ শেখের পরিবারের। নিজস্ব চিত্র।

রহিলা বিবি হাসছিলেন। ঘোমটা টেনে দাঁতে চেপে পাশে বসা ছায়ারানির দিকে তাকালেন। ওঁদের দেখলে কে বলবে, ‘নদীর পাড়ে বাস, দুঃখ বারো মাস!’ নদীর পাড়ে দুঃখ তো আছেই। বছর বছর বানভাসি হওয়ার যন্ত্রণা। কিন্তু তার পরেও নিজেদের বন্ধুত্বের কথা তুলতে এমন হাসি তো ওঁদের মুখেই ভাসে। ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দা দুই নারী। জোয়ারি নদীর পাড়ে বসে দিনান্তের আলোয় মনে হয় কত জন্মের আত্মীয়তা!

এ বারের ঘূর্ণিঝড়ের দিন জল উঠেছিল মাথা সমান। তাতে রহিলাদের টালি ছাওয়া ঘর একেবারে ছত্রখান হয়ে গিয়েছে। সিমেন্টের গুটিকতক সরু পিলার শুধু দাঁড়িয়ে। এক রাতের জন্যও ছাদহীন থাকতে হয়নি দুই মেয়ের মা রহিলাকে। ছায়ারানির বাড়ি চলে গিয়েছিলেন সোজা।

দুই বাড়ির দূরত্ব কত হবে? ছেলেবেলায় তিন লাফে এ দরজা থেকে ও দরজায় পৌঁছে যেত ওঁদের সন্তানেরা। হাঁক পাড়লে একজন দরজায় মুখ বাড়িয়ে শুনে নিয়েছেন আরেক জনের আশ- আহ্লাদ। ওঁরা তো শুধু প্রতিবেশীই নন। রহিলার স্বামী সৌরভ শেখ আর ছায়ার স্বামী বিকাশ পাত্রের দিনরাত কাটে সুন্দরবনের এই দ্বীপ ঘিরে রাখা হুগলি নদীর জলে। যাত্রী পারাপারের যে ট্রলার সৌরভ চালান, তাতে তাঁর সহযোগীর কাজ করছেন বিকাশ। মাঝে কাজ ছেড়ে দিলেও এখন আবার এক ছইয়ের জীবন তাঁদের।

এই দুর্যোগে মাথার ছাদ আর সম্বল প্রায় সবই গেছে সৌরভদের। বিকাশের ঘরের গাঁথনি পাকা, তবে সেখানেও বুক সমান জলে ক্ষতি হয়েছে অনেক। পিছনের দেওয়াল ভেঙে পড়ে যাওয়ায় সেখানে ত্রিপল দিয়ে রেখেছেন ছায়া। নিজেদের ছাদেই রহিলাদের ঠাঁই দিয়েছেন। প্রশস্ত নদীর দিকে তারই মতো দৃষ্টি ছড়িয়ে গ্রাম্য বধূ বলেন, ‘‘ঠাঁই কে কাকে দেয়? আজ ওরা এসেছে, কাল তো আমাদের যেতে হতে পারে।’’

বিকাশ-ছায়ার স্নেহ-চ্ছায়ায় আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার অনুভূতি নেই সৌরভ-রহিলার দুই মেয়েরও। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বড় মেয়ে সোনালি আর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শারুন। ছায়ার আঁচল জড়িয়ে তাঁরা এ বাড়িরই মেয়ে। আর তাঁদের দুই ছেলে ওদের দুই বোনের ভাই। এ সম্পর্ক অবশ্য নতুন নয়। পুজোআচ্চার পরে ছায়া প্রসাদ পাঠান রহিলাদের ঘরে। ইদের দিনও একই ভাবে খাবার আসে রহিলার কাছ থেকে। ছায়া বলেন, ‘‘ওদের ধর্ম ওদের, আমাদেরটা আমাদের। তা নিয়ে কখনও কিছু ভাবিইনি।’’

দ্বীপ-জীবনে এ ভাবেই প্রীতির সম্পর্ক লালন করে আসছেন এখানকার মানুষ। তাই তো জলে ধুয়ে যাওয়া নিজের আর ভাই শেখ সামসুদ্দিনের মাটির বাড়ি ঘুরিয়ে দেখানোর পর সামনের তুলসীতলার দিকে দেখান শেখ এরশাদ। বলেন, ‘‘এটা অরবিন্দ গিরির বাড়ি। জলে মাটিতে মিশে গিয়েছে।’’ বড় হওয়ার দিনগুলির কথা স্মরণ করে প্রণবেশ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘এখানে গ্রামগুলো একটা পরিবারের মতো।’’ এই বাঁধনেই যদি ঘোড়ামারার বাঁধ বাঁধা যেত!

friendship Sunderbans Cyclone Yaas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy