Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Shilbhadra Dutta

শীলভদ্রের মন্তব্য নিয়ে জল্পনা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের তৃণমূলে

সম্প্রতি নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠানে শীলভদ্র বলেছেন, ‘‘২০২১-এ ব্যারাকপুরে নতুন প্রার্থী আসবে। কাজ করবে। দশ বছর আমি আপনাদের সঙ্গে থেকেছি। যেটুকু করতে পারিনি, তা আমার অপদার্থতা।’’

শীলভদ্র দত্ত। ফাইল চিত্র।

শীলভদ্র দত্ত। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৫৪
Share: Save:

অর্জুন সিংহ দল ছেড়ে বিজেপি-তে চলে যাওয়ায় গত লোকসভা ভোটের আগে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। এ বার সেই এলাকাতেই তৃণমূলের আদিযুগের কর্মী তথা ব্যারাকপুরের দু’বারের বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের এক সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে দলের অন্দরে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের আরেক স্তম্ভ তথা নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক জল্পনা নস্যাৎ করে বলেছেন, ‘‘শীলদার একটা মন্তব্যকে ঘুরিয়ে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’’

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকেই শীলভদ্র, পার্থরা উত্তর ২৪ পরগনায় দলের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। দু’জনেই তৃণমূলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফলে মুকুল দল ছাড়ার সময় শীলভদ্র-পার্থদের নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তৃণমূলেই থেকে যান। গত কয়েক বছরে পার্থ ক্রমশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। কিন্তু শীলভদ্রের তেমন কোনও পরিচিতি তৈরি হয়নি। গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাঝে বেশ কিছু দিন তিনি দলের কাজে সক্রিয় ভাবে থাকতে পারছিলেন না। পরে অসুস্থতা কাটিয়ে ফিরেছেন। কিন্তু দলে এবং নিজের এলাকায় খানিকটা কোণঠাসা হচ্ছিলেন। এ হেন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শীলভদ্র বলে বসেছেন, পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুরে নতুন কেউ প্রার্থী হবেন।

সম্প্রতি নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠানে শীলভদ্র বলেছেন, ‘‘২০২১-এ ব্যারাকপুরে নতুন প্রার্থী আসবে। কাজ করবে। দশ বছর আমি আপনাদের সঙ্গে থেকেছি। যেটুকু করতে পারিনি, তা আমার অপদার্থতা।’’ ব্যারাকপুরের বিধায়ক হিসেবে এটাই তাঁর শেষ দুর্গাপুজো, এমন মন্তব্যও সে দিন শোনা গিয়েছে শীলভদ্রের মুখে। তৃণমূলের একাংশের দাবি, দলের স্থানীয় নেতৃত্বের গতিপ্রকৃতি নিয়ে শীলভদ্র অসন্তুষ্ট। সাংগঠনিক বিষয়ে এখন তাঁকে প্রায় কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয় না। তিনি বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা প্রায় কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আর তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন না। এলাকায় প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) টিমের কার্যকলাপও বা সাংগঠনিক বিষয়ে তাদের ‘হস্তক্ষেপ’ করার চেষ্টাও শীলভদ্রের না-পসন্দ বলেই খবর। ব্যারাকপুরের বিধায়কের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত এক স্থানীয় তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘শীলদা এখন বীতশ্রদ্ধ।’’

আরও পড়ুন: হাথরস কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে মমতা, নিশানা বিজেপিকে

এ হেন ‘বীতশ্রদ্ধ’ শীলভদ্র ২০২১-এর নির্বাচনে আর লড়তে চান না। নেতৃত্বের একাংশকে তিনি সম্প্রতি সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন বলেও তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছিল। তার মাঝেই প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেও শীলভদ্র ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন। বিধায়ক হিসেবে এটাই তাঁর শেষ পুজো— এই মন্তব্যে অনেক কথাই স্পষ্ট। শীলভদ্রের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সতীর্থ পার্থ অবশ্য এসব জল্পনা উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘শীলদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক। তিনি নিজে বার বার প্রত্যেককে বলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই তিনি বেঁচে আছেন। সেই শীলদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনও দল করবেন! এটা অসম্ভব এবং অবাস্তব কথা।’’ ২০২১-এর ভোটে লড়তে চান না বলে শীলভদ্র নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন কি? সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না পার্থ। শুধু বলছেন, ‘‘বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠানে শীলদা এমন কিছুই বলেননি, যাকে কেন্দ্র করে দল ছাড়ার জল্পনা তৈরি হতে পারে। তাঁর মন্তব্যকে ঘুরিয়ে তুলে ধরে একটা অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’’

দল শেষ পর্যন্ত ছাড়লে শীলভদ্র বিজেপি-তে যাবেন কি না, প্রত্যাশিত ভাবে সে জল্পনাও তৈরি হয়েছে। শীলভদ্রের পূর্বতন ‘রাজনৈতিক গুরু’ মুকুল সদ্য বিজেপি-তে বড়সড় পদ পাওয়ায় সে চর্চা আরও অক্সিজেন পেয়েছে। তবে শীলভদ্র বিজেপি-তে যাচ্ছেন, এমন কথা জোর দিয়ে গেরুয়া শিবিরও বলছে না। তবে শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, দলবদল করুন বা না করুন, শীলভদ্র তৃণমূল থেকেও ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে যেতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shilbhadra Dutta TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE