শরীর কঙ্কালসার। সারদা কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন কোনও জটিল মারণ রোগে ভুগছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আদালতে তাঁর আইনজীবী মারফত জানানো হয়েছে। সুচিকিৎসার আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে আবেদন করেছেন সুদীপ্ত।
বুধবার ওই আবেদনের শুনানি হয়। জেল হেফাজতে থাকা সারদা বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা সুদীপ্তের আর্জি, এসএসকেএম হাসপাতাল বা কোনও বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করা হোক। সংক্রমণজনিত কোনও অসুখে রক্তক্ষরণ হওয়ার কথাও জানান তিনি। বিচারক সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি যাচাই করে এসএসকেএম হাসপাতালে অভিযুক্তের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইডির আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, “বিচারক সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ইডির তরফেও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুদীপ্তের সাম্প্রতিক মেডিক্যাল রিপোর্ট তলব করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।” ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে কাশ্মীর থেকে পলাতক সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন এবং অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেন বিধাননগর কমিশনারেটের তদন্তকারী অফিসারেরা। এর পরে সুদীপ্ত ও দেবযানীর বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে ১৫০টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য পুলিশ। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার নেয় সিবিআই। সিবিআইয়ের তরফে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। এর পরে ওই মামলায় একে একে প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র, প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার-সহ প্রভাবশালীদের গ্রেফতার করা হয়। সুদীপ্ত ও দেবযানী ছাড়া সিবিআই ও ইডির মামলায় সব অভিযুক্তই এখন জামিনে মুক্ত। ভুবনেশ্বর আদালতে সিবিআইয়ের একটি মামলায় সুদীপ্ত ও দেবযানীর জামিন মঞ্জুর হয়নি।দেবযানী এখন দমদম মহিলা সংশোধনাগারে রয়েছেন। রাজ্য পুলিশ, সিবিআই ও ইডির বেশির ভাগ মামলায় সুদীপ্ত ও দেবযানীর জামিন হয়েছে। আইনজীবীদের কথায়, জামিন হয়ে যাওয়ার পরেও আর্থিক সমস্যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বন্ডের টাকা দিতে পারেননি সুদীপ্ত। সেই জন্যই জামিন পেতে আইনি জটিলতা থেকে গিয়েছে।
ইডির আইনজীবী অভিজিতের ব্যাখ্যা, “ইডির মামলায় সুদীপ্ত ও দেবযানী, দু’জনেরই জামিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুদীপ্ত জামিনের শর্ত মানতে না পারায় জামিন স্থগিত রয়েছে।” সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে সুদীপ্তের বিরুদ্ধে আরও দু’টি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার জামিনের আবেদনের শুনানি এখনও শুরু হয়নি।
সুদীপ্তের এক পুরনো আইনজীবীর সূত্রে জানা যাচ্ছে, একদা সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার সাম্রাজ্যে ছড়ি ঘোরালেও তিনি এখন চরম আর্থিক সঙ্কটে। পরিচিত কিছু আইনজীবী নিখরচায় মামলায় সাহায্য করছেন। কিন্তু হৃদ্যন্ত্র, কিডনি ও স্নায়ুর জটিল রোগে আক্রান্ত সুদীপ্ত। সূত্রটির মতে, অবিলম্বে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। ১২ বছর জেল হেফাজতে রয়েছেন। শারীরিক ও মানসিক ভাবে গুরুতর অসুস্থ হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার সূত্রে খবর, সুদীপ্তের কোনও শারীরিক সমস্যায় জেল হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
আইনজীবীদের একাংশের কথায়, রাজ্য পুলিশ, সিবিআই ও ইডির মামলায় এখনও চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে বিচার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও মামলা দীর্ঘায়িত হবে। সব ক’টি মামলায় ১৪ হাজারের কাছাকাছি সাক্ষী রয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ মেটাতেই ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগবে। তার পরে শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)