Advertisement
E-Paper

নতুন মোড়কে পুরনো লাইনেই বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি, উল্লেখ জ্যোতি বসুরও! আহ্বানে সাড়া দেবে সিপিএম-কংগ্রেস?

বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সভাপতি হিসেবে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষিত হওয়ার পরে প্রযে ভাষণ শমীক দিয়েছিলেন, সেখানেও তিনি বাম-কংগ্রেসকে নিজেদের পতাকা আপাতত ‘গুটিয়ে’ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ২২:০৪
রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।

রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। — ফাইল চিত্র।

রাজ্য বিজেপির নতুন শীর্ষনেতার ‘উদাত্ত আহ্বান’। সিপিএম-কংগ্রেসের কটাক্ষ সম্বলিত প্রত্যাখ্যান।

বঙ্গের ভোট-ভবিষ্যৎ ঘিরে বিরোধী শিবিরে বাগ্‌যুদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গকে ‘বাঁচাতে’ আপাতত নিজেদের পতাকা সরিয়ে রেখে সিপিএম-কংগ্রেস যেন বিজেপিকে সমর্থন করে, আবার সেই আহ্বান জানালেন শমীক ভট্টাচার্য। দেশভাগের সময়ে জ্যোতি বসুর ‘ভূমিকা’র কথাও মনে করালেন। জবাবে রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতির বিরুদ্ধে ‘ইতিহাস বিকৃতি’র অভিযোগ তুললেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বললেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরা বরং ঝান্ডা সরিয়ে রেখে কংগ্রেসে আসুন।’’

রবিবার সকাল থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে একের পর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিন শমীক। প্রতিটি ভাষণেই তিনি দেশভাগ, বঙ্গবিভাজন, পশ্চিমবঙ্গের জন্মের প্রসঙ্গ টানেন। তৎকালীন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা তথা বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য জ্যোতি বসুর ‘ভূমিকা’র কথাও মনে করান। শমীক বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, যদি জ্যোতি বসু আজ বেঁচে থাকতেন, তা হলে যে মৌলবাদ পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে, রাজনীতিতে যে শব্দচয়ন শুরু হয়েছে, তাতে তিনি এর বিরুদ্ধেই অবস্থান নিতে বলতেন।’’ শমীকের কথায়, ‘‘১৯৪৭ সালে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা দেখে, বাঙালি অস্মিতা রক্ষার স্বার্থে, মৌলবাদ মুক্ত একটা রাজ্য গঠনের স্বার্থে, প্রগতিশীলতার স্বার্থে জ্যোতি বসু নিজের মতাদর্শ দূরে সরিয়ে রেখে, নিজের দলের ঘোষিত অবস্থান দূরে সরিয়ে রেখে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।’’ রাজ্য বিজেপি সভাপতির আহ্বান, সিপিএম বা কংগ্রেসে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের এই মুহূর্তে রাজ্যের স্বার্থে নিজেদের পতাকা দূরে সরিয়ে রেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এক হওয়া উচিত। যদিও ‘এক’ হওয়া বলতে শমীক বিজেপির পাশে দাঁড়ানোর কথাই বলছেন।

রবিবারই প্রথম এই রকম কোনও আহ্বান শমীক জানালেন, এমন নয়। গত বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সভাপতি হিসেবে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষিত হওয়ার পরে প্রথম যে ভাষণ শমীক দিয়েছিলেন, সেখানেও বাম-কংগ্রেসকে তিনি আপাতত নিজেদের পতাকা ‘গুটিয়ে’ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরবর্তী দু’দিনেও সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার তাঁর মুখে ওই একই ধরনের কথাবার্তা শোনা যায়।

শমীকই প্রথম এই রকম আহ্বান জানালেন, তা অবশ্য নয়। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বার বার বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার বিরুদ্ধে আহ্বান জানাচ্ছিলেন গত কয়েক বছর ধরে। গত লোকসভা নির্বাচনে অন্তত ১২টি আসনে সিপিএম ভোট কেটে বিজেপির যাত্রাভঙ্গ করেছে এবং তৃণমূলের সুবিধা করে দিয়েছে বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেন শমীকের অভিষেক-মঞ্চেও। তৃণমূলকে যাঁরা চান না, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা কেউ নিজেদের ভোট ভাগ হতে দেবেন না বলে শুভেন্দুও আহ্বান জানিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতিও সেই ‘আহ্বান’কেই দলের ‘রাজনৈতিক লাইনে’ পরিণত করতে চাইছেন। কথাগুলো বলার সময়ে শুধু একটু অন্য রকম শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ, পুরনো আহ্বানই নতুন মোড়কে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘বিজেপির নতুন সভাপতি নতুন কৌশল ব্যবহার করতে চাইছেন। পুরনো কৌশলে খুব সুবিধা হয়নি। তাই ফুটবলে যেমন ডানদিক-বামদিক করে ডজ্ করতে করতে এগোনো হয়, বিজেপি এখানে সে রকম করতে চাইছে। শুভেন্দু চরম দক্ষিণপন্থী কথাবার্তা বলতে বলতে দৌড়চ্ছিলেন। তাতে সুবিধা হল না। এ বার শমীক অন্য রকম কথা বলে দৌড়তে চাইছেন। তাতেও সুবিধা হবে না।’’ সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘শমীক ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাচ্ছেন। ১৯৪৭ সালে আইনসভায় যে ভোটাভুটির মাধ্যমে বঙ্গ বিভাজনের সিদ্ধান্ত হয়, তার আগে জ্যোতি বসু কী ভাষণ দিয়েছিলেন, তা শমীক পড়েননি। তাঁর উচিত ওই ভাষণ পড়ে নিয়ে জ্যোতি বসুর ভূমিকা সম্পর্কে মন্তব্য করা।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ছেন শমীকের দিকে, ‘‘বিজেপির পতাকার তলায় অন্য সবাই যাবে কেন? বিজেপি কেন পতাকা গুটিয়ে রেখে কংগ্রেসের ছাতার তলায় আসছে না?’’ শুভঙ্করের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাতে যেমন তৃণমূলকে সরানো দরকার, ভারতকে বাঁচাতে তেমনই বিজেপিকে সরানো দরকার। সুতরাং বিজেপির রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সমবেত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমি বরং বলব, বাংলার মানুষের সামনে একমাত্র বিকল্প কংগ্রেসই।’’

রাজ্য বিজেপির সভাপতি রবিবার অবশ্য শুধু বাম-কংগ্রেসকে বার্তা দেননি। বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের একাংশকেও। রাজ্যের শাসক দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের নাম করে শমীক উল্লেখ করেছেন, দেশভাগপর্বে সুখেন্দুর বাবার ভূমিকার কথা। শমীক বলেন, ‘‘মালদহ জেলা সে সময়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সুখেন্দুশেখর রায়ের বাবা শিবেন্দুশেখর রায় মালদহের বিবদমান হিন্দু জমিদারদের একত্রিত করে কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে গিয়েছিলেন। কংগ্রেস কোনও সাহায্য করেনি। তখন তাঁরা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্য চান। তার ফলস্বরূপ মালদহ আজ পশ্চিমবঙ্গে।’’ শমীক কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘শিবেন্দুশেখরের নাম বাংলার ইতিহাসে, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাঁর ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার অন্য কেউ ভোগ করছেন।’’

শমীক কেন একাধিক ভাষণে তাঁর বাবার নাম টেনে আনছেন, তা তাঁর ‘বোধগম্য’ হচ্ছে না বলে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানাচ্ছেন। আনন্দবাজার ডট কমকে সুখেন্দু বলেন, ‘‘এ কথা ঠিক যে, মালদহ জেলাকে পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে রাখার যে আইনি লড়াই, তাতে আমার বাবার ভূমিকা ছিল। কিন্তু কোনও বড় বা মহৎ কাজ কেউ একা করেন না। অনেকের ভূমিকা তাতে থাকে। সবার নাম পাঠ্যপুস্তকে থাকে না।’’ তৃণমূল সাংসদের কথায়, ‘‘আমার বাবা যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রনেতা, তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সেখানকার উপাচার্য। সেই সুবাদেই বাবা শ্যামাপ্রসাদকে শ্রদ্ধা করতেন, তাঁর সঙ্গে বাবার পরিচিতিও ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার মুহূর্তে মালদহ কোন দিকে যাবে, তা যখন অনিশ্চিত, তখন বাবা আরও অনেককে নিয়ে শ্যামাপ্রসাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ঘটনার কথা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শমীক কেন বার বার টেনে আনছেন, আমি জানি না।’’

Shamik Bhattacharya BJP Bengal AITC CPIM INC West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy