Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Wrestling

আনন্দবাজার অনলাইন পাশে ছিল, ‘দঙ্গল-কন্যা’ শ্বেতা বড় সাফল্য পেলেন সর্বভারতীয় পর্যায়ে

টানা রাজ্য সেরা হয়েছেন শ্বেতা দুবে। সেটা কুস্তির লড়াইয়ে। এখন আরও বড় সম্মান। জাতীয় স্তরের রেফারি হলেন। এই প্রথম জাতীয় স্তরের কুস্তিতে রেফারি হলেন বাংলার কোনও মেয়ে।

এক বছরে অন্য শ্বেতা।

এক বছরে অন্য শ্বেতা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:০০
Share: Save:

২০২১ সালের অগস্ট মাসে আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্বেতা দুবে বলেছিলেন, ‘‘কুস্তিতে বড্ড খিদে পায়।’’ জানিয়েছিলেন, একটা চাকরি তাঁর খুব দরকার। সেই খবর প্রকাশের পরে একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁকে এক বছরের জন্য বৃত্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। সেই বৃত্তি পাওয়ার সময়েও লড়াই ছাড়েননি শ্বেতা। তারই পুরস্কার জাতীয় স্তরের কুস্তির রেফারি হওয়া। বস্তুত, কুস্তিতে তিনিই বাংলার প্রথম মহিলা রেফারি।

বুধবার শ্বেতা বলছিলেন, ‘‘আনন্দবাজার অনলাইন প্রথম থেকেই আমার পাশে থেকেছে। মনে হচ্ছে এই সাফল্য পেয়ে আমি তার প্রতিদান দিতে পেরেছি। সেই উদ্যোগকে সম্মান জানাতে পেরেছি।’’

২০১৭ থেকে টানা রাজ্য চ্যাম্পিয়ন শ্বেতার মনে নতুন করে স্বপ্ন জেগে উঠেছিল টোকিয়ো অলিম্পিক্সে কুস্তিতে ভারতের পদকপ্রাপ্তির পরে। সেই সময়েই তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘কুস্তি লড়তে গেলে অনেক দুধ, ঘি, মাখন খেতে হয়। দিনে কমপক্ষে হাফ ডজন ডিম খাওয়া দরকার। আরও অনেক কিছুই খেতে হয়। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমি তবু খাবার পেয়েছি। কিন্তু এখন কুস্তি শিখতে আসে মূলত গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরা। তারা বেশিদিন চালাতে পারে না। সত্যি করেই বলছি, কুস্তিতে বড্ড খিদে পায়।’’

বিশাখাপত্তনমে রেফারি শ্বেতা।

বিশাখাপত্তনমে রেফারি শ্বেতা। —নিজস্ব চিত্র।

শ্বেতার ‘গুরুজি’ অসিত সাহা বাংলার কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘শ্বেতার মতো মেয়েরা বাংলার সম্পদ। এ বার যে সাফল্য ও পেয়েছে, তা আমাদের গর্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু রেফারি হওয়াই নয়, সেখানে গিয়ে বাকিদের মধ্যেও প্রথম হয়েছে। কুস্তিতে রেফারির দায়িত্ব পালন করা সহজ কথা নয়। কিন্তু কোনও ভয় না পেয়ে সেই কাজটা ও করেছে। ভাবতে ভাল লাগছে যে, বাংলার মেয়ে এ বার দেশের সর্বত্র খেলাতে যাবে। আমি চাইব এর পরে ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাক।’’ তবে পাশাপাশিই কিছুটা আক্ষেপও শোনা গেল অসিতের গলায়। তাঁর কথায়, ‘‘আরও ভাল কোচিং, আরও ভাল ম্যাট দরকার প্রশিক্ষণের জন্য। সুযোগ পেলে শুধু দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলার জন্য গর্ব ছিনিয়ে আনতে পারে যে সব মেয়েরা, তাদের অন্যতম শ্বেতা।’’

গত নভেম্বরে ভারতের কুস্তি ফেডারেশন ‘ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেফারি কোর্স’ করায়। তাতে অংশ নিয়েই সাফল্য পান শ্বেতা। এর পরে ছিল হাতেকলমে পরীক্ষা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হরিয়ানায় জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় রেফারি হিসাবে ডাক পান। কিন্তু সেই সময়ে বাংলার একটি প্রতিযোগিতায় রেফারি নির্বাচিত হওয়ায় যেতে পারেননি। এর পরে ডিসেম্বরের ২০ থেকে ২৩ তারিখ বিশাখাপত্তনমে হয় সিনিয়র জাতীয় কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই আসরেই রেফারি হিসাবে জাতীয় স্তরে হাতেখড়ি হয় শ্বেতার। সদ্য বাড়ি ফেরা শ্বেতা বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ভাবতেই পারছিলাম না। কিন্তু বাঁশিটা গলায় ঝুলিয়ে নেওয়ার পরে আর কিছু মনে আসেনি। সবাই প্রশংসাও করেছেন।’’ এর পর? বরাবারের জেদি শ্বেতা বলেন, ‘‘আমার খেলা আমি বন্ধ করব না। সঙ্গে কোচিং চলবে। আর আন্তর্জাতিক স্তরের রেফারি হওয়ার চেষ্টাও ছাড়ব না। একদিন হবেই।’’

শুধু নিজের জন্য নয়, বাংলার কুস্তি নিয়েও অনেক স্বপ্ন শ্বেতার। আদতে কলকাতার শ্যামবাজার এলাকার মেয়ে হলেও এখন হুগলির ডানকুনিতে থাকেন। কিন্তু ছেলেবেলার আখড়া ছাড়েননি। এখনও পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতিই তাঁর মন্দির। নিয়মিত অভ্যাসের পাশাপাশি ছোটদের শেখানও শ্বেতার নেশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wrestling Shweta Dubey referee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE