E-Paper

পড়ে থাকে উদ্বাস্তু এক পিলার

সাতক্ষীরার ভোমরা থেকে দশ কিলোমিটার দূরে হারদ্দহা। গ্রামের কাছেই ইছামতী নদী। তার গায়েই প্রায় ১৮ বিঘা জমির উপরে দুই গ্রাম। সীমান্তের পিলার বসেছে দু-গ্রামের মাঝ বরাবর।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৬
Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

র‌্যাডক্লিফ সাহেবের খামখেয়ালিপনার ক্ষত নিয়ে দিন গুজরানে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনারই আরও এক গ্রাম পানিতর।

ঠিকানা তার, বসিরহাট মহকুমার ইছামতীর নদীর কোল ঘেঁষা এক জনপদ। দু’দেশের অদৃশ্য মানচিত্র সেখানে পানিতরকে ছিন্ন করেছে তার একদা পাড়া হারদ্দহা থেকে। বাংলাদেশের মানচিত্রে তার সাবেক নাম হড়দহ, জিলা সাতক্ষীরা। তবে তা নেহাতই খাতায় কলমে। এ গ্রামের গাভীর পাল চড়তে যায় ও গ্রামে, হারদ্দহার মানুষ নির্দ্ধিদায় ওষুধ কিনতে আসে পানিতর গ্রামে। আলপথ, পুকুরপাড়া আর আবাদি জমির কোল খুঁজে সীমানার পিলার সেখানে নিছকই এলেবেলে। হারদ্দহার দাউদ আলির গোয়াল পড়েছে ভারতীয় ভূখন্ডে। বলছেন, ‘‘মাঝে মাঝে আপনাগো বিএএসএফ আইস্যা বড় বিরক্ত করে, ‘এত গুলান গরু কোন থিয়া আইল’, প্রশ্ন করে।’’ তবে, সীমানারক্ষাকারীদের বিশেষ আমল দেন না তাঁরা। বরং মৃদু তিরস্কার করে জানিয়ে দেন, ‘‘দু’গাঁয়ের ৪০ ঘর মাইনস্যে দিব্যি বেঁধে বেঁধে আছি, এত হিসেবে কাম কী! ’’ পানিতরের সুহাগ মণ্ডল বলছেন, ‘‘যত ঝকমারি ওই উর্দিধারীদের। আমাদের তো দিব্যি মিলমিশের সংসার! ভারতের সিংহ মার্কা টিন দিয়ে ওরা চালা দেয়, আমরা বুলবনের দুকান থেকে চাল আটা কিনে আনি।’’ দু’দেশের টাকা সমান সমাদৃত সে জনপদে। গত পক্ষকাল ধরে বাংলাদেশের আনাচ কানাচে রক্তস্রোত বইলেও তার ছায়া পড়েনি এই দুই গ্রামে। বরং পানিতরের আব্দুলের বাড়িতে হারদ্দহার মানুষজন এসে টিভিতে সম্প্রচারিত খবর দেখে গিয়েছেন রাত জেগে। সরকার পড়ে যাওয়ার রাতে বিজিবি’র দেখা না মিললেও বিএসএফ রাতভর প্রহরায় ছিল দুই গ্রামে। এমনই দাবি আব্দুলের। তিনি বলছেন, ‘‘গ্রামের একমাত্র মসজিদ হারদ্দহায়। আমরা সেখানেই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসার দোয়া করেছি এক সঙ্গে।’’

সাতক্ষীরার ভোমরা থেকে দশ কিলোমিটার দূরে হারদ্দহা। গ্রামের কাছেই ইছামতী নদী। তার গায়েই প্রায় ১৮ বিঘা জমির উপরে দুই গ্রাম। সীমান্তের পিলার বসেছে দু-গ্রামের মাঝ বরাবর। দেশ ভাগের পরে সাকুল্যে ১৫টি পরিবার নিয়ে এ জনপদের সূচনা। এখন তা ৪০টি। বিবাহ বা অন্যান্য আচারও মিলেমিশেই চলে সম্বৎসর। বিকেল গড়িয়ে গেলেও গ্রামের মাঠে দুই দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলে ছেলেপুলেরা। হারদ্দহার নাকিবের বাড়ানো পাশ থেকেই বাঁকানো শটে গোল করে পানিতরের মুজিব! পুকুরে ‘গোসল করেন এক সাথে। আর সাঁঝে, স্থানীয় চায়ের আড্ডায় হাসিনা কিংবা মমতা নিয়ে আলাপ আলোচনায় করেন দুই পড়শি গ্রামের মানুষজন।

যার মাঝখানে দু’দেশের সীমারেখার আভাস দিয়ে পড়ে থাকে ‘উদ্ধাস্তু’ এক পিলার, যার এক দিকে বাংলা হরফে লেখা ‘বাং’ অন্য দিকে ইংরাজিতে ‘ইন্ডি’।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ichamati River India Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy