Advertisement
০৮ মে ২০২৪

পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দিলেও ‘কাল আসছি’ বলে যাদবপুর ছাড়লেন রাজ্যপাল

মঙ্গলবার ফের যাদবপুরে আসার কথা বললেন রাজ্যপাল।

পড়ুয়াদের প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র।

পড়ুয়াদের প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:৪৪
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবল বিক্ষোভ-প্রতিরোধের মধ্যে পড়লেও মঙ্গলবার ফের সেখানে যাবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার ঘণ্টাখানেক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে আটকে থাকার পর পড়ুয়াদের দাবি মতো তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পড়ুয়াদের একাংশের ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের মধ্যেই সর্বসমক্ষে ওই প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এনআরসি এবং সিএএ ভারতের সংবিধানের মূল তত্ত্বকে লঙ্ঘন করছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু কথা না শুনলে আলোচনা হবে না। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে।’’

প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীনই একাধিক বার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্লোগান শোনা যায়। তবে তা উপেক্ষা করেই পড়ুয়াদের প্রশ্নের জবাব দিতে থাকেন রাজ্যপাল। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে আসার পর থেকে বার বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয়েছে ধনখড়ের। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার অভিযোগ উঠেছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। এ দিন প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন যেন সেই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও সরকারের মুখপাত্র নই। আমি সংবিধানের মুখপাত্র।’’ পাশাপাশি, এক পড়ুয়ার উত্তরে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কোনও পরিস্থিতিতেই হিংসা সমর্থন করেন না।

সোমবার দুপুরে যাদবপুরের কোর্ট বৈঠকে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান রাজ্যপাল। তবে প্রাথমিক ভাবে পড়ুয়াদের বাধার মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের সাহায্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে প্রবেশ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পড়ুয়ারাই মানববন্ধন করে তাঁকে যাদবপুরের ভিতরে নিয়ে যান। পড়ুয়াদের দাবি, কোর্ট বৈঠকে রাজ্যপালকে যোগ দিতে দেওয়া হবে, তবে তার আগে তাঁদের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। পড়ুয়াদের কথা শুনে গাড়ির মধ্যে থেকে রাজ্যপাল জানান, তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে সে সময় তৃণমূলের শিক্ষক ও অশিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা দাবি করতে থাকেন, কোনও ভাবেই রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে প্রবেশ করতে দেবেন না। তাঁর গাড়ি ঘিরেই ফের বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। এর পরই মানববন্ধন করে রাজ্যপালকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করে পড়ুয়ারা এবং তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ রুমে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং সহ-উপাচার্য প্রদীপকান্তি ঘোষ।

আরও পড়ুন: লাইভ: নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অপপ্রচার করছে তৃণমূল, বললেন নড্ডা

যাদবপুরের অন্দরে প্রবেশ করলে তাঁর কাছে খানিকটা সময় চেয়ে নেন পড়ুয়ারা। নিজেদের মধ্যে একটি সাধারণ সভা ডেকে রাজ্যপালের উদ্দেশে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে থাকেন পড়ুয়ারা। এক ছাত্রের কথায়, ‘‘এনসিএ এবং সিএএ নিয়ে এ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন রয়েছে। তা তৈরি করার জন্য তাঁর কাছ থেকে মিনিট দশেক সময় চেয়ে নিয়েছি আমরা। রাজ্যপালের জবাবে আমরা সন্তুষ্ট হলেই ভবিষ্যতে তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে মেনে নেব।’’

অবশেষে নিজের গাড়ি থেকে নামতে পারলেন রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনসিআর)-এর বিরুদ্ধে এ দিন দুপুরে পড়ুয়াদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে আটকে পড়েন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলেও প্রথম দিকে কোর্ট বৈঠকের জন্য অরবিন্দ ভবন পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেননি রাজ্যপাল। মূলত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশের পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি তাঁদের একাংশের আরও অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার ভঙ্গ করেছেন রাজ্যপাল। ফলে কোনও ভাবেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকের জন্য অরবিন্দ ভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে ওই পড়ুয়াদের সাহায্যেই শেষমেশ নিজের গাড়ি থেকে নামতে পারেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

এই বিক্ষোভে সামিল তৃণমূলের শিক্ষক ও অশিক্ষক সমিতির সংগঠনও। তাদের দাবি, কোনও ভাবেই রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অন্য দিকে, পড়ুয়ারা দাবি করেন, রাজ্যপাল তাঁর গাড়ি থেকে নেমে এসে তাঁদের প্রশ্নের জবাব দিন। ফলে এই বিক্ষোভের আবহেও নতুন এক দ্বন্দ্ব শুরু হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পরই প্রবল বিক্ষোভের মুখে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অববিন্দ ভবনে ঢোকার মুখেই তাঁকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান এবং কালো পতাকা দেখিয়ে প্রতিবাদ জানান পড়ুয়ারা। এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী ব্য়ানার নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। প্রতিবাদীদের বিক্ষোভের জেরে রাজ্যপালের কনভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢুকলেও তা অরবিন্দ ভবনের আগেই আটকে পড়ে। সে সময় তাঁর গাড়ির উপরেই পোস্টার দিতে শুরু করেন পড়ুয়ারা।

কোর্ট বৈঠককে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল এবং পড়ুয়াদের মধ্যে আগেই সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোর্ট বৈঠকে যোগ দিতে রাজ্যপাল এলে, তাঁকে বাধা দেওয়া এবং তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর সমস্ত রকম প্রস্তুতিই আগে থেকে নিয়েছেন পড়ুয়ারা।

বিক্ষোভের মুখে রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র।

কোর্ট বৈঠক শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই রাজ্যপাল বিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হন পড়ুয়ারা। তাঁদের স্পষ্ট ঘোষণা, রাজ্যপালকে কোনও ভাবেই কোর্ট বৈঠকে অংশ নিতে দেবেন না তাঁরা। প্রয়োজনে রাজ্যপালকে ঘিরে বিক্ষোভও দেখানো হবে। যাদবপুরের অশিক্ষত কর্মী এবং শিক্ষকদের একাংশও কোর্ট বৈঠকে তাঁর যোগদানের বিরোধিতা করবেন বলে জানা গিয়েছে।

রাজ্যপাল এলে পড়ুয়ারা যে বিক্ষোভ দেখাবেন, আগে থেকেই সে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাঁরা। তার প্রেক্ষিতে যাদবপুরের সমাবর্তন ছাঁটকাট করে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও আজ, সোমবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে যাবেন বলে জানিয়েছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল। তিনি যে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে যাবেন, এখনও পর্যন্ত রাজভবন সূত্রেও তা জানা যাচ্ছে। রাজ্যপালকে ঘিরে বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, এই আশঙ্কায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর পুলিশের নজরও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ইতনি ডরি কিঁউ হো রে! ঘুরেফিরে মোদীর নিশানায় মমতাই

সমাবর্তনের বিশেষ বিশেষ অংশ স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত শনিবার কর্মসিমিতির বৈঠকে নেওয়া হয়েছে, তাকেও ‘বেআইনি ও অবৈধ’ বলে আগেই জানিয়েছেন রাজ্যপাল। এই ‘অবৈধ’ সমাবর্তনে যাঁরা ডিগ্রি নেবেন, তাঁরা ভবিষ্যতে সঙ্কটে পড়তে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল।

আরও পড়ুন: এনআরসি: কে সত্যি মোদী না অমিত? ধন্দ ছড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

যাদবপুরের রাজ্যপালের উপস্থিতির আগে থেকেই শুরু প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট আইনের উপরে যে বিধি জারি করেছে, সেই অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাবর্তন বা কোনও বৈঠকে আচার্যকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বক্তব্য জানাবে শিক্ষা দফতরকে। কিন্তু আমন্ত্রণ ছাড়া আচার্য যদি বৈঠকে উপস্থিত হন, তা হলে কী করণীয়— এমন ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির কথা সেই বিধিতে বলা নেই।

যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, রাজ্যপালের কোর্টের বৈঠকে আসার বিষয়ে লিখিত ভাবে তাঁদের রাজভবন থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে উপাচার্য বলেন, ‘‘উনি কোর্টের চেয়ারম্যান। আসতেই পারেন এবং কোটের বৈঠকে পৌরোহিত্য করতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jagdeep Dhankhar Jadavpur University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE